top of page

শাপলা - চিংড়ি


সকালের চা তৈরি করে সবাইকে দিয়ে থুয়ে , নিজের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এসে দাঁড়ালাম ,বাড়ির ছোট্ট ব্যালকনি টাতে। মাঝে মাঝে সকালে সুযোগ পেলেই ,এখানে একটু দাঁড়াই। আমার খু ...উব ভালো লাগে। বাড়ির সামনে দিয়েই চলে গেছে এক রাস্তা। সকাল হতে না হতেই বড়োই ব্যস্ত।

রাস্তার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, আর একটি কর্মব্যস্ত দিনের শুরু। যেখানে সবাই ব্যস্ত ,সবারই চিন্তা নিজেদের কাজগুলোকে কিভাবে গুছিয়ে সুন্দর ভাবে করে নেওয়া যায়। রাস্তায় ভীষণ ভিড়। অটো ,রিক্সা ,দু - চাকা ,চার - চাকায় ভরে গেছে। তারপর মানুষের ঢল চলেছে তো চলেছেই .....চলেছেই ...।সারা পৃথিবীর মানুষজন দিনের শুরুতে কত কত ব্যস্ত ,তার একটু আভাস বোধহয় এই রাস্তা টা দেখলেই পাওয়া যাবে ।


হঠাৎ খেয়াল করলাম সামনের রাস্তা দিয়ে সবুজ সবজি ভরা এক ভ্যান রিকশা চলে যাচ্ছে। আর আমার দৃষ্টি পড়েছে ভ্যান রিক্সায় রাখা শাপলা ফুলগুলোর দিকে। ভেবেই

ফেললাম ,আজ যদি দুপুরে শাপলা ফুলের কোনো মেনু রাঁধি ,তবে কেমন হবে ? অনেকদিন বাদেই শাপলা রাঁধবো। একটু নতুন মেনু ......সবার মনে হয় ভালোই লাগবে। শাপলা এক জলজ সবজি। গ্রামে গঞ্জে পুকুরে পুকুরে শাপলা ফুল যখন ফুটে থাকে ,দেখতে অপূর্ব লাগে। চোখ জুড়িয়ে যায়। এই শাপলা ফুলের জলভরা নরম ডাঁটিই আজ আমার রান্নার উপকরণ।


গরমে তো দারুন সবজি। ঠান্ডা সবজি। শরীর ও ঠান্ডা রাখে ,পেট ও ঠান্ডা রাখে। আর শাপলার ঝাল তো জিভের স্বাদ বেশ বাড়িয়েই দেয়। ভাবতে ভাবতে কিছুটা শাপলা কিনেই

ফেললাম। ঠিক করলাম ,আজকের মেনু হবে শাপলা - চিংড়ি । খেতে অসাধারণ লাগে। গরম ভাতে তো খুব টেস্টি টেস্টি।


বাজার থেকে কিছুটা চিংড়ি মাছ আনিয়ে নিতে হবে। ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম , সকালের জলখাবার তৈরি করতে। এক সময় বাজার থেকে এসে গেলো ,শাপলা - চিঙির রান্নার আর এক উপকরণ ....চিংড়িমাছ। ভাবলাম ,জলখাবারের পাট শেষ হলেই ,শাপলা - চিংড়ি রান্নায় মন দেব। শাপলা আর চিংড়ি ....দুটোই ছাড়িয়ে , পরিষ্কার করতে একটু সময় তো লাগবেই ..................... । ভাবতে ভাবতে শাপলা - চিংড়ি রান্নার জন্য ২-৩ চামচ গোটা সর্ষে জলে ভিজিয়ে দিলাম।


উপকরণ :-


  • শাপলা ডাঁটি - ২ আঁটি

  • চিংড়ি - ৩০০ গ্রাম

  • গোটা সর্ষে - ২-৩ চামচ

  • পেঁয়াজ - ২টি ( মাঝারি সাইজের ,কুচানো )

  • কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টি ( লম্বালম্বি অর্ধেক করে চেরা )

  • পাঁচফোড়ন - ১/২ - ১ চামচ

  • হলুদ - ২-৩ চামচ

  • লাল লঙ্কা গুঁড়ো - ১/২ - ১ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - কয়েকদানা ,রং আর স্বাদের জন্য

  • অবশ্যই সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো


পদ্ধতি :-


চিংড়ি মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম। শাপলা ডাঁটাও ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রেখেছি। ভেজা সর্ষে জল ঝরিয়ে মিক্সিতে নিয়ে ,মিহি করে বেটে নিলাম।

গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম পাঁচফোড়ন , ২-৩টা চেরা কাঁচালঙ্কা আর পেঁয়াজকুচি। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালোকরে পেঁয়াজ ভাজতে লাগলাম।


পেঁয়াজ ভাজা ভাজা লালচে হয়ে এলেই আঁচ কমিয়ে দিলাম চিংড়ি মাছগুলো ,নুন ,কয়েকদানা চিনি আর হলুদগুঁড়ো । আঁচ বাড়িয়ে একটু নাড়াচাড়া করে দিলাম সর্ষে বাটা। সমস্ত মিশ্রণ আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করে দিলাম শাপলা ডাঁটার কাটা টুকরো গুলো। বেশি আঁচে কয়েকবার কষে নিয়ে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম। শাপলা থেকে বেরোনো জল থেকেই রান্না মজতে লাগলো।



আহা - হা - হা ! রান্নার সুন্দর গন্ধে চারিদিক ভরে গেছে। ঢাকা খুলে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। আঁচ বাড়িয়ে রান্না মাখো মাখো করে নিলাম। খুব সুন্দর ,খুবই সুন্দর হয়েছে রান্নার স্বাদ। মন আনন্দে ভরে গেলো। গ্যাস বন্ধ করে রান্না ঢাকা দিয়ে রাখলাম।


দুপুরের খাওয়া শুরু হলো গরম ভাত আর শাপলা - চিংড়ি দিয়ে। সবার চোখে এক খুশির চমক। একজন বলেই ফেললো আজকের শাপলা - চিংড়ি মেনু বড়োই অপূর্ব রেঁধে ফেলছো। কি সুন্দর স্বাদ ! জিভ স্বাদে ভরে যাচ্ছে। আর একটু দাও তো। ভীষণ ভালো ! ভীষণ ভালো ! খেয়ে মনে ও তৃপ্তি স্বাদেও তৃপ্তি। বাঃ ! শাপলা - চিংড়ি সবার এতো ভাল লেগেছে ? সবার ভালো লাগাতে আমার ও যে ভীষণ ভালো লাগছে ..........


ভালো থাকুন। ভালো থাকুন। সব্বাই খুব ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। আনন্দে থাকুন।

14 views0 comments

Comments


bottom of page