top of page

লাউ - চিংড়ির - ডালনা


সেই ছোট্ট বেলা থেকে বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্তেই একজন দক্ষ শিল্পীকে সবসময়েই চোখের সামনে দেখতে পেতাম। অবাক হয়ে দেখতাম। আর সেই দক্ষ শিল্পীটি হলেন ...''আমার মা''। প্রত্যেক কাজেই নিঁখুত হাতের ছোঁয়া। মায়ের সমস্ত প্রিয় কাজের মধ্যে ,সবচাইতে প্রিয় কাজ ছিল রান্নাবান্না। কেটে বেটে দক্ষ হাতে নানা মেনু তৈরি করে পৌঁছে দিতেন আমাদের পাতে পাতে। আহা - হা ,কি অপূর্ব ! কি অপূর্ব এই রান্না শিল্পকলা। মনে হতে মা যেন তার মনের তুলিতে সুন্দর করে ,নিখুঁত করে এঁকে দিতেন নানা মধুর মধুর স্বাদের নানা মধুর মধুর পদ। আর ধীরে ধীরে মায়ের এই শিল্পকলাকে আমিও কখন যেন খুব খুব ভালো বেসে ফেললাম। শিল্প -রন্ধন শিল্প। আমার বড়োই প্রিয়।


রন্ধন শিল্প কিন্তু এই বিশ্বের এক বিশাল শিল্প। কত শত শত মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল ,তা হিসাবে আনা কিন্তু খুবই কঠিন। জীবনের রুজি - রোজগার নির্ধারণে , পায়ে পায়ে এগিয়ে চলার পথে বহু মানুষ এই শিল্প কে সঙ্গী করে ফেলেছেন। ভালোবেসে ফেলেছেন। মনের তুলিতে এঁকে চলেছেন নতুন নতুন পদ আর সঙ্গে নতুন নতুন চমক। ভাবলে গর্ব হয় ,শত শত রন্ধন শিল্পীদের মধ্যে আমিও একজন। আমি, আমার বাড়ির গৃহিনী তথা বাড়ির রন্ধন -শিল্পী। আমিও সবসময়ে চেষ্টা করি পরিবারকে সুস্থ রাখতে ,আনন্দে রাখতে। আর ? নতুন কিছু করতে ......


আজ আমার রান্নাঘরে অনেক কিছুর মধ্যে রয়েছে একটা লাউ আর কিছুটা চিংড়িমাছ। না না লাউ -চিংড়িই রাঁধবো। তবে মনের তুলিতে একটু নতুন টান দিয়ে। আজ রাঁধবো লাউ - চিংড়ির - ডালনা।

ভাতের পাতে স্বাদগুণে অসাধারণ। দারুন স্বাদিষ্ট মেনু।


উপকরণ :-


  • লাউ - ১টি ( খোসা ছাড়িয়ে জলে ধুয়ে নিয়ে ,বড়ো বড়ো ডুমো ডুমো করে কাটা )

  • চিংড়ি মাছ - ৪০০ গ্রামের মতো ( খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করা )

  • আলু - ২টি ( একটু বড়ো সাইজের ,খোসা ছাড়িয়ে বড়ো বড়ো ডুমো ডুমো করে কাটা )

  • টমেটো - ১টি মাঝারি সাজের ( টুকরো টুকরো করে কাটা )

  • রসুন - ৫-৬ কোয়া

  • আদা - অল্প খানিকটা ( খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কাটা )

  • কাঁচালঙ্কা - ২-৩ টি

  • ছোট এলাচ - ৩-৪টি

  • লবঙ্গ - ৩-৪টি

  • দারচিনি - একটুকরো

  • তেজপাতা - ২টি

  • হলুদ - ২চামচ মতো

  • জিরেগুঁড়ো - ৪-৫ চামচ

  • লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১-২ চামচ

  • গরম মশলা গুঁড়ো - ১/২ - ১ চামচ

  • ঘি - ১- ১.৫ চামচ

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো


পদ্ধতি :-


রান্না শুরুর প্রথমে মিক্সিতে আদা ,রসুন কোয়া আর ২-৩টি কাঁচালঙ্কা নিয়ে বেটে নিলাম। চিংড়ি মাছ জলে বারবার ধুয়ে নিয়ে ,নুন হলুদ মাখালাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে সামান্য তেল দিলাম। তেল গরম হতেই নুন হলুদ মাখানো চিংড়িমাছগুলো কড়াইতে দিয়ে ,একটু সাঁতলে নিয়ে তুলে রাখলাম।


কড়াই পরিষ্কার করে নিয়ে গ্যাসে চাপলাম। প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম ,ছোট এলাচ ,লবঙ্গ ,দারচিনি ,জলে ধোয়া ডুমো ডুমো করে কাটা আলুর টুকরো গুলো আর ২টি তেজপাতা। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলু ভাজতে লাগলাম। আলুগুলো রাঙা রাঙা হয়ে এলে দিলাম ,নুন ,চিনি ,হলুদ গুঁড়ো ,জিরেগুঁড়ো , লাল লঙ্কাগুঁড়ো আর কাটা টমেটোর টুকরোগুলো । সমস্ত উপকরণ আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে কষতে লাগলাম।


কষা ঠিকঠাক হয়ে এসেছে মনে হতেই ,কড়াইতে দিলাম সাঁতলে রাখা চিংড়িমাছগুলো আর কাটা লাউয়ের টুকরোগুলো। বেশি আঁচে কিছুক্ষন ভালো করে নাড়াচাড়া করে নিয়ে, দিলাম অল্প পরিমান জল। রসা ফুটে উঠলেই আঁচ কমিয়ে ,একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম।সুন্দর গন্ধ ! রান্নার খুব সুন্দর গন্ধ ! একটু পরে ঢাকা খুলে মনে হলো রান্না হয়ে এসেছে। রান্নার স্বাদ দেখে নিয়ে রান্না মাখো মাখো করে নিয়ে দিলাম ,১/২ চামচ মতো গরম মশলার গুঁড়ো আর ১-১.৫ চামচ মতো ঘি। বেশি আঁচে ২-১ বার নেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম।


হঠাৎ একজন এসে বলে উঠলো ,খাওয়া দাওয়া তো দেরি আছে ,একটু তোমার লাউ - চিংড়ির তরকারি দাও না ....চেখে দেখি। .......ও হো হো কি রাঁধেছো গো। আজ দুপুরে কিন্তু শুধু এই লাউ - চিংড়ির - ডালনা দিয়েই পুরো ভাত খাবো ...........। এরপরতো দুপুরে খাবার টেবিলে লাউ - চিংড়ির - ডালনা খেয়ে সবার ভীষণ আনন্দ আর আনন্দ। সবাই খুব খুব খুশি। খুশি মনেই সবাই বলে উঠলো .....এই রান্নাটা মাঝে মাঝে মেনুতে রেখো কিন্তু ! এতো খুশির রান্না রেঁধে আমিও বড়োই খুশি।


খুশিতে থাকুন ,ভালো থাকুন ,ভালো খেতে হবে ,সুস্থ থাকতে হবে। আর তবেই থাকবেন অনেক অ.....নেক আনন্দে।


12 views0 comments

Komentarze


bottom of page