top of page

মটরশুঁটি -দিয়ে -বাঁধাকপির - ডালনা


শীতকাল !! বাংলার ছয় ঋতুর মধ্যে ,এই ঋতুটাকেই বোধহয় আমরা একটু বেশিই পছন্দ করি |গ্রীষ্ম ,বর্ষা ,শরৎ, হেমন্ত ,শীত আর বসন্ত ---এদের নিয়েই বাংলার ঋতুচক্র |কিন্তু একজনের --মানে গ্রীষ্মের দাপাদাপি ,চাপাচাপিতে আমরা সবাই কেমন যেন একটু বেশিই কাবু কাবু ,আর ঠিক এই কারণেই ,গ্রীষ্মের একদম বিপরীত চরিত্রের শীতকে প্রায় সবারই একটু বেশিই পছন্দ |সব্বাই চায় শীত জাঁকিয়ে পড়ুক আর থাকুক অনেক ---অনেকদিন |


শীতের ছোঁয়ায় সুন্দর সুন্দর খাবার দাবারের স্বাদ ,শীতের হালকা রোদে সবুজ শাক সবজির হাসি ,শীতের আমেজে রোদে পিঠ ঠেকিয়ে ঘরে বাইরে একটু পিকনিক আর লেপের তলায় জমিয়ে শীতঘুম --সবই যেন অসাধারণ -----

অসাধারণ !! আর সবচাইতে বড়ো শান্তি ,গরমের দাবদাহ থেকে এ ---কটু মুক্তি |


কিন্তু প্রিয় শীতকাল ,থাকে বড়ো অল্প | গ্রীষ্মের দাপটকে সে ও অগ্রাহ্য করতে পারে না | তাই সে আসে আর যায় |এই শীতের সময়ের শীতকালীন সবুজ শাকসবজি ও মানুষের খুব পছন্দ | যেন এক মধুর স্বাদে ভরা | যদিও এখন সব শাক - সবজি বারোমাসই পাওয়া যায় ,তবুও শীতের শুরুতে শীতের সবজিগুলো এক স্পেশাল স্বাদে ভরা থাকেই আর খেতেও খুব ভালো লাগে | বেশ মনে পরে ,ছোট বেলায় দেখেছি ,রান্নাঘরে বাঁধাকপি -ফুলকপি মানেই-- মনে হতো এইবার চলে এসেছে আমাদের প্রিয় শীতকাল |


আমি আজ রান্না করছি ,মটরশুঁটি দিয়ে বাঁধাকপির ডালনা | যদিও এই রান্না এখন প্রতি ঘরের প্রায় ধরতে গেলে প্রতিদিনের রান্না , সবাই খুব সুন্দর করেই রান্নাটা জানে ,তবুও রান্নাঘরে প্রবেশ করা নতুন নতুন রন্ধন শিল্পীদের জন্যই খুব সহজ এক পদ্ধতি | শিখে যাওয়া তো খুবই ভালো কথা |আর নতুন নতুন গৃহিণীদের কাছে সবচাইতে ভালো ,নিজে হাতে .নিজে নিজে রান্না করে কাউকে খাওয়ানো -----তাতে বড়োই আনন্দ ----বড়োই তৃপ্তি |


তাহলে এবার রান্না শুরু করছি ,মটর শুঁটি দিয়ে বাঁধাকপির ডালনা -----------


উপকরণ :-


  • বাঁধা কপি - ১টা ,মাঝারি সাইজের,কচি আর সবুজ ,একটু মিহি করে কুচিয়ে জলে ভেজানো

  • আলু - ৩টি ,একটু বড়ো সাইজের ,খোসা ছাড়িয়ে প্রতিটি ৪ টুকরো করে নিয়ে জলে ভেজানো

  • টমেটো - ১টি ,মাঝারি সাইজের ,মিহি করে কুচানো

  • মটরশুঁটি - কচি মতো ,২৫০ গ্রাম ,ছাড়িয়ে রাখা

  • আদা - ১ ইঞ্চি মতো ,খোসা ছাড়িয়ে ,ছোট ছোট টুকরো করে কেটে রাখা

  • রসুনের কোয়া - ৪-৫টি ,খোসা ছাড়িয়ে রাখা

  • কাঁচালঙ্কা - গোটা ৫-৬টি

  • গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টি ,একটু করে ফাটানো

  • তেজপাতা - ২টি

  • গোটা জিরে - ১/২ চামচ

  • হলুদগুঁড়ো -১/২ থেকে ১ চামচ

  • জিরেগুঁড়ো-- ২-৩ চামচ

  • লালঙ্কাগুঁড়ো - ১/২ - ১ চামচ ( সুন্দর রঙের জন্য একটু ,প্রয়োজনমতো )

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো

  • ঘি - ১ থেকে ২ চামচ

  • গরম মশলা গুঁড়ো - ১/২ - ১ চামচ


পদ্ধতি :-


রান্নাঘরে ঢুকে প্রথমেই আদা কুচি ,রসুনের কোয়া আর গোটা কাঁচালংকাগুলো জলে ধুয়ে নিয়ে মিক্সিতে দিলাম | মিহি করে বেটে রাখলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম ,গোটা জিরে , ফাটানো গোটা শুকনোলঙ্কা আর জল ঝরানো আলুর টুকরোগুলো | দিলাম এক চিমটে হলুদগুঁড়ো ,এক চিমটে নুন, এক চিমটে চিনি আর দুটি গোটা তেজপাতা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলুর টুকরো গুলো ভালো করে ভাজতে লাগলাম |

আলুগুলো রাঙা রাঙা হয়ে এলেই ,মিক্সিতে বেটে রাখা মশলাটা কড়াইতে দিয়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আবার ও নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | আলু আর মশলা ভাজা ভাজা হয়ে এলে দিলাম ,প্রয়োজনমতো হলুদগুঁড়ো ,জিরেগুঁড়ো ,লাল লঙ্কাগুঁড়ো ,নুন আর চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ কষতে লাগলাম | আহা - হা - হা ,মশলা কষার কি সুন্দর গন্ধ ! দিয়ে দিলাম জল ঝরানো কুচানো বাঁধাকপির টুকরোগুলো আর টমেটোর কুচানো টুকরোগুলো |আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে বাঁধাকপি মজতে দিলাম |


বাঁধাকপির সঙ্গে মশলার সুন্দর গন্ধে রান্নাঘর ভরপুর | ঢাকা খুলে দেখি বাঁধাকপি থেকে বেশ অনেকটা জল বেরিয়েছে |আর কচি বলে বাঁধাকপি বেশ মজে গেছে | আলুর টুকরোগুলো ও নরম হয়ে এসেছে | কড়াইতে দিয়ে দিলাম ছাড়ানো মটরশুঁটি গুলো | কচি মটরশুঁটি গুলো বাঁধাকপি একটু মজে গেলে ,তবেই দিলাম ,নতুবা গলে গিয়ে তরকারিতে মিশে যেতো | বেশি আঁচে রান্না হতে থাকলো | রান্নার বাড়তি জল শুকিয়ে এলে ,হালকা হাতে খুনতি দিয়ে নেড়েচেড়ে রান্নার সমস্ত উপকরণ মাখো মাখো করে নিলাম | দেখে নিলাম রান্নার স্বাদ | বাঃ ! বেশ তাক তাক

হয়েছে তো ! দিলাম গরম মশলার গুঁড়ো আর ঘি | এবার ২-১বার ভালো করে নেড়েচেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | তৈরি আমার মটরশুঁটি দিয়ে বাঁধাকপির ডালনা |


এলো দুপুরে খাওয়ার পালা | হালকা হালকা শীতের আমেজে জমে উঠলো দুপুরের গরম গরম ভাত ,গরম গরম ডাল সঙ্গে গরম গরম বাঁধাকপির ডালনা | অপূর্ব ! অপূর্ব ! ভীষণ ভালো লাগছে | মুখ এক অসাধারণ স্বাদে ভরে যাচ্ছে আর মন ভরছে ভালো লাগার তৃপ্তিতে |তবে একটা কথা কিন্তু বড়োই ঠিক যে শীতের দুপুরে বাঙালির এই রান্নার সংযোগে ও আছে কিন্তু এক স্পেশাল --ভীষণ স্পেশাল আমেজ |


অল্প সময়ের সাথী ,নানা আমেজে ভরা এই শীত কে আমরা সবাই যেন উপভোগ করি | আনন্দ দিতেও হবে আর ? ----আর আনন্দ অবশ্যই নিতে হবে | নিজের জন্য ----আর সবার জন্য |


ভালো ভালো খেয়ে দেয়ে সুখে থাকুন ,আনন্দে থাকুন আর সুস্থ তো অবশ্যই থাকতেই হবে |






8 views0 comments

Comments


bottom of page