এখন একদম ভরা বর্ষা। বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি একটু থামলেই অসহ্য গুমোট গরম। তারপরেই আবার ঝমঝমিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি। তখন পরিবেশও হয়ে উঠছে ঠান্ডা ঠান্ডা আর বেশ আরামদায়ক। তবে কাল থেকে খুব বেশি বেশিই বৃষ্টি হয়ে চলেছে। তাই আজ সকাল থেকেই গরম গরম ভাবটা বেশ কম কম লাগছে।
জলখাবারের টেবিলে দেখি ,খেতে খেতে সবাই নিজেদের মধ্যে কি সব আলোচনা করছে। মন দিয়ে শুনে বুঝলাম ,আজ দুপুরে সবার গরম গরম মাংসের ঝোল ,আর গরম গরম ভাত খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। সবাইকে বললাম ,কিন্তু আমি তো দুপুরের মেনু ঠিক করে ফেলেছি। সব চাইতে বড়ো কথা রান্না খানিকটা এগিয়েও নিয়েছি।
কিন্তু সব শুনে মনটা--- কেমন যেনো একটু খারাপ খারাপ লাগছে। সবার ইচ্ছে হলো অথচ ..........। ভাবতে ভাবতেই একটা মজার চিন্তা মনে এসে গেলো। সবাইকে বললাম এখনই
যদি একটু মেটে ,একটু চর্বি আর অল্প একটু মাংস পেয়ে যাই ,তবে সবাইকে আমি আজ রাতে এক মজাদার রান্না করে খাওয়াব। অনেকদিন বাদে রাঁধবো ''মেটে - চর্বির - কষা - কষা '' ...রাতে রুটির সঙ্গে খুবই জমে যাবে আর গরম গরম ভাতের সঙ্গে তো .........কেমন জমে যাবে ,সেটা মনে হয় আগে থেকে অনেকের জানাই আছে।
সবাই তো আনন্দে লাফাচ্ছে আর বলছে ,কি মজা ! কি মজা !আজ রাতে মাংস দিয়ে আমাদের পিকনিক হবে । সবাই আমাকে একসঙ্গেই বলে উঠলো, চিন্তা কোরো না ! চিন্তা কোরো না .....এখনই সব জোগাড় হয়ে যাবে। সত্যি বলতে কি ... বলার সঙ্গে সঙ্গে স ....ব জোগাড় হয়েও গেলো। মনটা আমার চট করে বেশ ভালোও হয়ে গেলো।
উপকরণ :-
মেটে - ২০০ গ্রাম
চর্বি - ৫০ গ্রামের মতো
মাংসের টুকরো - খুব অল্প ( না হলেও চলবে )
আলু - ৪-৫টি মাঝারি সাইজের
পেঁয়াজ - ৩-৪টি
টমেটো - ১টি মাঝারি সাইজের
রসুন - খুব ছোট ১টা
আদা - ১-১.৫ ইঞ্চি মতো
কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টি
হলুদগুঁড়ো - ২ চামচ মতো
জিরে গুঁড়ো - ৩-৪ চামচ
লাল লঙ্কা গুঁড়ো - ১-২ চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো - ১ চামচ মতো
ঘি - ১-১.৫ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
মেটে ,চর্বি আর মাংস খুব ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে নিয়ে ,ধুয়ে একটা পাত্রে রেখে নুন আর কিছুটা সর্ষের তেল মাখিয়ে নিয়ে ঢাকা দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিলাম। বিকালে চায়ের পাট শেষ হতেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম ,মেটে - চর্বি কষা রান্নার জোগাড় করতে। প্রথমেই ফ্রিজ থেকে ম্যারিনেট করা মেটে - চর্বির পাত্র বের করে রাখলাম ,নরম্যাল
টেম্পাচারে আনার জন্য । আলু খোসা ছাড়িয়ে খুব ছোট ছোট টুকরো করে জলে ভিজিয়ে দিলাম। পেঁয়াজও খোসা ছাড়িয়ে খুব মিহি করে কুচিয়ে নিলাম। টমেটো মিহি করে কুচিয়ে নিলাম। আদা ,রসুন ,কাঁচালঙ্কা পরিষ্কার করে নিয়ে বেটে রাখলাম।
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে জলে ধোয়া আলুর কাটা টুকরো গুলো কড়াইতে দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলু মুচমুচে করে ভেজে তুলে রাখলাম। এইবার কড়াইতে প্রয়োজনমতো তেল দিয়ে দিলাম পেঁয়াজকুঁচিগুলো।
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ নরম করে ভেজে মজিয়ে নিলাম। দিলাম আদা রসুন কাঁচালঙ্কা বাটা। কিছুক্ষন নেড়ে নিয়ে দিলাম টমেটোর টুকরোগুলো। সমস্ত উপকরণ একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে দিলাম মেটে - চর্বি -মাংসের কুচানো টুকরোগুলো। দিলাম প্রয়োজনমতো নুন ,অল্প চিনি ( স্বাদ ও রংয়ের জন্য),হলুদগুঁড়ো,জিরেগুঁড়ো
আর লাল লঙ্কাগুঁড়ো।
এবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালো করে কষতে লাগলাম। মাংস কষার সুন্দর গন্ধ বেরোতেই কড়াইতে দিয়ে দিলাম ভাজা আলুর টুকরো গুলো। বেশি আঁচে মেটে - চর্বি -মাংস আর আলু কষে নিয়ে কড়াইতে দিলাম রসার পরিমান ভেবে খানিকটা গরমজল। বেশি আঁচে রসা ফুটে উঠতেই ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম।
মাংসের সুন্দর গন্ধে রান্নাঘর ভরে উঠলো। ঢাকা খুলে দেখে নিলাম মেটে - মাংস আর আলু সেদ্ধ হয়েছে কিনা। আর রান্নার স্বাদও দেখে নিলাম। বাঃ ! সব একেবারে ঠিকঠাক। এবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিলাম গরম মশলার গুঁড়ো আর ঘি। একটু নেড়েচেড়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম।
ছোট ছোট টুকরো করে কাটা মেটে - মাংস - চর্বি আর আলুর এই রসা রসা তরকারি খুব তাড়াতাড়িই সুসিদ্ধ হয়ে যায়। খেতে হয় একেবারে অসাধারণ। ঠিক যেনো এক টেস্টি টেস্টি মুখরোচক আচার।
কষা কষা এই মাংসের অল্প তরকারিতে গরম গরম ভাতের পাত যেমন জমে ওঠে তেমনি রুটির সঙ্গে তো অসম্ভব ভালো লাগেই। অল্প পরিমান মাংস দিয়েই রান্না এই তরকারি রান্নাঘর জমায় কিন্তু একটু বেশি করেই। একবার রান্না করলেই বোঝা যাবে ,কতো সহজ রান্না অথচ কতো মজাদার।
আহা ! আ - হা - হা ! কি দারুন খেতে হয়েছে গো ! তাক তাক কষা মাংসের স্বাদে মুখ যে ভরে গেলো !রাতে খাবার টেবিলে যেন আনন্দের বন্যা। সবার খুশি আর আনন্দে ,আমার মনও খুশিতে ভরে গেলো। রাতের খাওয়া দাওয়া খুব খুব আনন্দে আর খুশিতে শেষ করলাম।
আপনারাও খুব খুশিতে থাকুন ,আনন্দে থাকুন আর খুব ভালো থাকুন।
Comments