সকালে ঘুম থেকে উঠে ,চা করতে করতে হঠাৎ মনে হলো আজ তরকারির ঝুড়িটা একটু ঝাড়পোছ করা দরকার। অনেকদিন ভালোকরে খেয়াল করাই হয়নি। বাজার আসছে -বাজার রাখছি। ব্যাস কাজ সারা। না ! না! আজ কাজটা করতেই হবে। কি কি তরকারি রয়েছে দেখে নিতে হবে। যা আছে সেগুলো দিয়ে কিছু একটা বানিয়ে নেবো। নষ্ট করবো না। চায়ের পাট শেষ করে তরকারির ঝুড়িটা টেনে নিলাম। ঝুড়িতে রয়েছে কয়েকটা আলু ,খান ছয় পটল ,খানিকটা পাকা কুমড়ো ,কয়েকটা ছোট
ছোট মুখীকচু ,তাছাড়া রয়েছে পেঁয়াজ,রসুন,আদা আর অল্প কয়েকটা কাঁচালঙ্কা।
ঝুড়ি পরিষ্কার করে ঝেড়ে ঝুরে রাখলাম। তরকারিগলো আলাদা করে রাখলাম। ভাবলাম এগুলো তো বেশ ভালোই রয়েছে। এগুলো দিয়ে পাঁচমিশালি কিছু একটা করে নিতে হবে। হঠাৎ মনে পড়লো ,আচ্ছা আজকের মাছের বাজারে এসেছে রুইমাছ ,সঙ্গে খানিকটা টাটকা মাছের তেল। মাছের তেল আর এই তরকারি দিয়ে পাঁচমেশালি আর টেস্টি টেস্টি একটা রান্না করা যেতেই যাবে। গরম ভাতে বেশ জমে যাবে। ব্যাস চিন্তা ভাবনা শেষ। এখন টেস্টি রান্নায় মন তো দিতেই হবে।এই পাঁচমিশালি রান্নায় আরোও অনেক তরিতরকারি মেশানো যায়। ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু আমার তরকারির ঝুড়িতে যা ছিল ,তাই দিয়েই রান্নাটা করছি।
আজ জল খাবার খেয়ে সবাই বেশ খুশি। আমিও খুশি। খুশি খুশি মনে শুরু করলাম ,প্রথমেই মাছের তেলে পাঁচমিশালি রান্নাটা। দেখি কি হয় ..................
উপকরণ :-
মাছের তেল - ১৫০ গ্রামের মতো
আলু - ৪-৫ টি ( খোসা ছাড়িয়ে প্রত্যেকটি ৮ টুকরো করে কেটে জলে ভেজানো )
পটল - ৬টি একটু বড়ো বড়ো ( খোসা ছাড়িয়ে আড়াআড়ি প্রত্যেকটি ৩ টুকরো করে কাটা )
মিষ্টি কুমড়ো - ৫০০ গ্রাম ( অল্প অল্প খোসা ছাড়িয়ে একটু বড়ো বড়ো ডুমো ডুমো করে কাটা )
মুখী কচু - ছোট ছোট কয়েকটা ( খোসা ছাড়িযে গোটা গোটা রাখা )
পেঁয়াজ - ৪টি ছোট সাইজের ( কুচানো )
রসুন কোয়া - ১০-১২টি ( খোসা ছাড়িয়ে কুচানো )
কাঁচালঙ্কা - ৮-১০টি ( অর্ধেক করে চেরা )
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টি ( একটু করে ফাটানো )
পাঁচফোড়ন - ১-২ চামচ
হলুদ গুঁড়ো - ১.৫ - ২ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
গরম মশলা গুঁড়ো - ১-১.৫ চামচ ( ইচ্ছা না হলে নাও দিতে পারেন )
ঘি - ১.৫ - ২ চামচ ( ইচ্ছা না হলে নাও দিতে পারেন )
পদ্ধতি :-
মাছের তেল খুব ভালো করে ধুয়ে নুন হলুদ মাখালাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে একটু তেল দিলাম। তেল গরম হলে ,মাছের তেল কড়াইতে দিয়ে ভালো করে ভেজে নিলাম। বাকি তেলে ধোয়া কাটা পটোলের টুকরো গুলো একটু ভেজে নিলাম।
এবার কড়াই ভালো করে পরিষ্কার করে গ্যাসে চাপলাম। প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই দিলাম গোটা শুকনোলঙ্কা আর পাঁচফোড়ন। দিলাম পেঁয়াজকুচি ,রসুনকুচি ,কয়েকটি কাঁচালঙ্কা কুচি। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ রসুন ভাজতে লাগলাম। পেঁয়াজভাজা একটু নরম হলে ,পেঁয়াজে হালকা বাদামি রং এসে গেলেই ,আঁচ কমিয়ে দিলাম জলে ধোয়া কাটা আলু আর কচুর টুকরোগুলো। আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে ভাজতে লাগলাম। দিলাম নুন ,হলুদ আর প্রয়োজন মতো চিনি। কয়েকবার ভালো করে নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম কুমড়োর কাটা টুকরোগুলো।
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ নাড়তে লাগলাম। সব উপকরণ ভাজা ভাজা হয়েছে মনে হতেই কড়াইতে দিলাম ,ভাজা মাছের তেল। বেশ করে নেড়েচেড়ে নিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে আঁচ কমিয়ে রান্না হতে দিলাম।( রান্নায় আলাদা করে কোনো জল দেওয়া যাবে না।) ঢাকা খুলে মাঝে মাঝে রান্না নাড়াচাড়া করে আবার ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম।এইভাবে
কয়েকবার করার পর যখন দেখলাম ,রান্না বেশ মজে গিয়েছে ,রান্না থেকে বার হচ্ছে সুন্দর গন্ধ,আলু ,কচুও নরম হয়ে এসেছে ,তখন আঁচ বাড়িয়ে বাকি কাটা কাঁচালংকাগুলো কড়াইতে দিয়ে রান্না নাড়তে লাগলাম।
মজে যাওয়া রান্নার রং চলে আসতেই ,রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। দিলাম অল্প গরম মশলার গুঁড়ো আর ১.৫ চামচ মতো ঘি। সমস্ত রান্না কয়েকবার নেড়েচেড়ে গ্যাস বন্ধ করে ,রান্না একটা ঢাকা দিয়ে রাখলাম। দুপুরে খাবার টেবিলে ঢাকা খুলবো।
সত্যিই স্বাদে অপূর্ব আমার পাঁচমিশালি রান্না। গরম ভাতে প্রথম পাতই আমাদের দারুন জমে উঠলো। সুন্দর স্বাদে ,মন প্রাণ ভরে গেলো। এদিকে আমি ভাবছি টেস্টি টেস্টি এই খাবার খাওয়ার পর অন্য্ মেনু আর খাবো কিনা .......................?সবাই তো একমনে চেটেপুটে খাচ্ছে। দেখি ওরা কি বলে.........?
ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন ,আনন্দে থাকবেন।
Comments