আজ জমিয়ে হলো সকালের জলখাবার | সব্বাই বেজায় খুশি | কাল সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে | ঘুমের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ চোখ খুললেই ....ঝমঝম ..ঝমঝমাঝম প্রবল বৃষ্টির আওয়াজ | যাহোক সকালে ঘুম ভেঙে দেখি ,বৃষ্টি থেমে গেছে , তবে আকাশ কিন্তু মেঘলা মেঘলা | আবার বোধহয় এক - পশলা হবে!! গাছের ভেজা পাতা থেকে টুপটাপ টুপটাপ বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ছে | বৃষ্টি ভেজা সবুজ গাছ গুলোকে দেখে মন যেনো আনন্দে ভরে যাচ্ছে | খুব .....খু ....উব ভালো লাগছে | ঠান্ডা ঠান্ডা জোলো হাওয়ার পরিবেশ | আর এই পরিবেশে দারুন ভাবে জমিয়ে দিতেই ....মজাদার জলখাবার |
বাজার তো এসে রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছে | দেখি তো কি কি এলো ! সকালের মতো দুপুরটাও কি জমাতে পারবো ??? ভাবতে ভাবতে সবজির থলিতে দেখি খুব টাটকা ছোট ছোট দুটো ফুলকপি | যদিও এটা ফুলকপির সময় নয় ,কিন্তু এখনতো সারাবছরই সব সব্জিরই চাষ হচ্ছে | তবে এই ফুলকপি আশেপাশের গ্রামগুলোর মানুষজন তাদের বাড়ির এদিক - ওদিকে কয়েকটা চাষ করেছে |
নিজেরাও খাচ্ছে ,আবার কিছু পয়সা পেতে দু - একটা বাজারে বিক্রি ও করছে | সারা বছরই তারা বাড়ির আশেপাশে নানা রকমের সবজি চাষ করে , নিজেরদের জন্য ....কিছু কিছু আমাদের জন্যও |
আমার চোখ কিন্তু অন্যদিকে | মনেও এক অন্য ভাবনা | কপি দুটোর খুব কচি কচি পাতাগুলো দেখেই আমার হঠাৎই কপিপাতা বাটা খেতে খুবই ইচ্ছে করতে লাগলো | পাতার পরিমান তো বেশ কম ,আবার পাতাবাটা খেতে ইচ্ছেও তো করছে | ইচ্ছে হলে তো উপায় বার করতেই হবে | কি করি ....কি করি ......ভাবতে ভাবতে বাজারের থলি থেকে বেরোলো খানিকটা কচি আর সবুজ ধনেপাতা | বাঃ ! উপায় তো হয়েই গেলো | কপিপাতা আর ধনেপাতা একসঙ্গে বেটে ...পাতাবাটা করবো | আরো ভালো হবে | দারুন স্বাদের হবে |
উপকরণ :-
কপিপাতা - কচি কচি খানিকটা ,আন্দাজমতো
ধনেপাতা - ২ আঁটি মতো
রসুন - গোটা একটা , মাঝারি সাইজের
কাঁচালঙ্কা - ৬-৭ টা ,অবশ্যই নিজের নিজের পছন্দমতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
কত অল্প উপকরণ | কিন্তু পদটি ভীষণ মুখরোচক | জিভের স্বাদে চটক আনার এক জাদুগর | শুধু একটু টেস্টি টেস্টি পাতাবাটা দিয়ে গরম ভাতে খাওয়া শুরু করলে ,অনেকটাই ...বা সবটাই খেয়ে ফেলা যায় | যারা স্বাদ পেয়েছেন ,তারাই জানেন |
বাজার থেকে আনা সবকিছু গুছিয়ে ফেললাম | এবার ধনেপাতাগুলো ভালো করে বেছে নিয়ে ,জলে ভিজিয়ে দিলাম | কপিপাতাগুলো ও বেছে নিয়ে ডাটা থেকে ছাড়িয়ে নিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে খানিকটা জল দিলাম | বেছে রাখা কপিপাতাগুলো জলে ধুয়ে ,কড়াইতে জলের মধ্যে দিয়ে দিলাম |
জল ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে ,পাতা মজতে দিলাম | বর্ষাকালে কিন্তু শাকপাতা খুব খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে | একটু কুসুম কুসুম গরম জলে ধুয়ে নিলে তো আরো ও ভালো |
এবার রসুনের প্রত্যেকটা কোয়া ভালো করে ছাড়িয়ে নিয়ে মিক্সিতে নিলাম | মিক্সির মধ্যে দিলাম নিজের ইচ্ছামতো কয়েকটা কাঁচালঙ্কা আর এক চিমটে নুন | মিহি করে বেটে নিয়ে একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম | এবার জলে ধোয়া ধনেপাতাগুলো ও মিহি করে বেটে নিয়ে ,ওই পাত্রের মধ্যেই ঢেলে রাখলাম
এদিকে কপিপাতাগুলো বেশ মজে গিয়েছে | গ্যাস বন্ধ করে ,জল ঝরিয়ে ভাপানো কপিপাতাগুলো মিক্সিতে নিলাম | মিহি করে বেটে নিয়ে ,রসুন - কাঁচালঙ্কা আর ধনেপাতা বাটার সঙ্গে মিশিয়ে নিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল খুব ভালো ভাবে গরম হয়ে গেলে ,আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম ,রসুন - কাঁচালঙ্কা - ধনেপাতা - কপিরপাতা বাটার মিশ্রণ | কড়াইয়ের মধ্যে দিলাম ,প্রয়োজনমতো নুন আর চিনি |
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মিশ্রণ নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | সমস্ত মিশ্রনের এক সুন্দর ভাজা ভাজা গন্ধে আমার রান্নাঘরই শুধু নয় .....সারা বাড়িই ম ......ম ....করতে লাগলো | দুপুরের মেনুর গরম ভাতে প্রথম পাতের খবরটিতে সব্বাই খুশি | আনন্দে একেবারে আত্মহারা | ধীরে ধীরে মিশ্রনের রং পাল্টাতে লাগলো |কড়াইয়ের সঙ্গে মিশ্রণ আর লেগে থাকছে না ,দেখে মিশ্রনের স্বাদ দেখে নিলাম | আহঃ ! কি অপূর্ব !রান্নার স্বাদে জিভ জলে ভরে যাচ্ছে | সব ঠিকঠাক মনে হতেই গ্যাস করলাম বন্ধ | কড়াই থেকে সযত্নে মুখরোচক কপিপাতা - ধনেপাতা বাটা তুলে রাখলাম একটা পাত্রে |এখন শুধু দুপুরের খাওয়ার সময়ের অপেক্ষা |
কত দিন ...কত দিন বাদে গরম ভাতে পাতাবাটা দিয়ে আমাদের সবার খাওয়া শুরু হলো | জিভ যেনো স্বাদে - আনন্দে ভরে যাচ্ছে | বড়োই তৃপ্তি ......বড়োই তৃপ্তি ....আর অনেক অনেক চমকের খুশি ....
আপনারাও খুব খুব খুশিতে থাকুন , ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন |
Comments