মাছে - ভাতে বাঙালি | চায় , রোজ রোজ ভাতের পাতে থাকুক মাছের মেনু | নাহঃ , তবে রোজ পাতে একরকমের মাছ থাকুক , এটাও কিন্তু তাদের না - পসন্দ | তাদের পছন্দ নানা -নানা রকমের মাছ | আর যে কোনো মাছেরই এক ধরণের মেনু ও তারা চায় না | তাদের চাহিদার তালিকায় অনেক অনেক রকমের মেনু | আর সেটা অবশ্যই হতে হবে , এক একদিন এক এক রকম |
আমার বাড়ির সব সদস্যই মাছ খেতে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসে | আর তাদের ও পছন্দ এক একদিন এক একরকমের মাছ , এক একরকমের মেনু হয়ে তাদের পাতে পাতে পৌঁছে যাক | সে চেষ্টাও চালিয়ে যাই | বাড়ির সবার পছন্দই তো আমার ও পছন্দ |
তবে একটা কথা কিন্তু বড়োই সত্যি | প্রতিদিন খাবার পাতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অবশ্যই রাখতেই হবে | শরীর সুস্থ রাখতে , সবল রাখতে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অর্থাৎ আমাদের ইমিউনিটি বাড়ানোতে প্রোটিন এক বিশেষ মাধ্যম | আর সব আমিষ খাবারের মধ্যে সব ধরণের মাছই প্রোটিনের এক এক বিশাল ভান্ডার | ভাতের পাতে মাছ তো শরীর ও সুস্থ |
আজ আমার রান্নাঘরে মাঝারি সাইজের কিলোখানেক টাটকা পাবদা | রুপোর মতো চকচক চকচক করছে | কি সুন্দর দেখতে !! এক কাঁটার প্রোটিন সমৃদ্ধ এই মাছটি ছোট থেকে বড়ো সবারই খুব পছন্দের | খেতে যেমন মজা ,স্বাদেও তেমনিই মজা | সুন্দর স্বাদের এই মাছটির কিন্তু বাঙালি বাড়িতে কদর ও বে.........শ বেশি | বাড়িতে অতিথির আগমনে বা ছোটখাটো নানা ঘরোয়া অনুষ্টানে প্রায় ই পাবদা মাছের কোনো না কোনো মেনু থেকেই থাকে | আর নিমন্ত্রিত সব্বাই সাদরে সেই মেনু চেটেপুটে শেষ ও করে |
কিন্তু এখন এই জ্যৈষ্ঠ মাসের গরম ....গ্রীষ্মকালীন অসহ্য গরমের দামামা বাজিয়ে চলেছে , বাজিয়েই চলেছে !!! গরমে সব্বাই ক্লান্ত ! শরীরে শুধু ক্লান্তি আর ক্লান্তি !! জল ছাড়া তো অন্য কিছুই খেতে ভালো লাগছে না | তবুও খেতে তো হবেই | প্রতিদিনের নিজ নিজ কাজকর্ম তো আমাদের সারতেই হবে | তার জন্য শরীরে মনে শক্তি তথা এনার্জি আনতেই হবে | আর আমাদের শক্তির প্রধান আধার আমাদের রোজকার খাওয়া - দাওয়া | আর তাই , তাই খেতে তো হবেই |
কিন্তু এই গরমে তো আমরা কেউই খুব মশলাদার খাবার খেতে পারছি না | একটু হালকা - পুলকা ঠান্ডা ঠান্ডা শান্ত স্বাদের খাবারই সবার ভালো লাগছে | তাই ভেবে নিলাম আজকের পাবদাগুলো খুব খুব হালকা করে অথচ খুব টেস্টি টেস্টি করেই রাঁধবো | পাবদা মাছের - হলুদগোলা - ঝোল (Pabdamacher - jhol)!! মনে তো হয় বাড়ির সব্বার ভালো লাগবেই ........ , আর রুচিও বাড়বে|
উপকরণ :-
পাবদামাছ - মাঝারি সাইজের , কিলোখানেক | কেটেকুটে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে নুন হলুদ আর অল্প সর্ষের তেল মাখানো | রান্না শুরু হওয়া পর্যন্ত্য ম্যারিনেট হোক | আর তাতেই রান্না সুন্দর ভাবে মজে যাবে
কালোজিরে - ১ - ১.৫ চা চামচ
কাঁচালঙ্কা - ২-৩টে গোটা , ৬-৭টা , লম্বালম্বি চিরে রাখা , তবে ঝাল নিজের নিজের পছন্দমতো
হলুদগুঁড়ো - ১.৫ - ২ চা চামচ
চিনি - না না ইচ্ছে না হলে দিতে হবেই না , আমি দিয়েছি ঠিক ২-১ দানা , ১) রঙে চটক আনতে , ২) স্বাদে চমক আনতে
নুন - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
খুব সহজ রান্না | আর খুব তাড়াতাড়ি - তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়া এক রান্না | অথচ রান্নাটা খেতে কিন্তু অসা.........ধারণ স্বাদের আর টেস্টি টেস্টি | যাহোক এবার রান্না ... শুরু করে দিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে , প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল সুন্দর ভাবে গরম হয়ে উঠতেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম ১ চামচ মতো কালোজিরে আর কয়েকটা চিরে রাখা কাঁচালঙ্কা | আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিলাম নুন - হলুদ আর অল্প একটু তেল মাখানো পাবদামাছগুলো | মাছগুলোর উপর ছিটিয়ে দিলাম ১/২ চামচ মতো হলুদগুঁড়ো , কয়েকদানা চিনি আর প্রয়োজনমতো নুন |
আঁচ কমিয়ে পাবদা মাছগুলো উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করলাম | যে কটা মাছ পারলাম ওল্টাতে , উল্টে দিলাম ( না উল্টে দিলেও হবে )| কয়েকটা ওল্টানো গেলো না | খুব নরম মাছ !! মাছ যেনো ভেঙে না যায় , তাই সবকিছুই খুব সাবধানে করে নিলাম | আবার আঁচ বাড়িয়ে দিলাম | দিলাম ঝোলের পরিনাম ভেবে নিয়ে জল | ঝোল টগবগ টগবগ করে ফুটতে শুরু করতেই , চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো সুন্দর এক লোভনীয় গন্ধ | অনেকটা ঠিক ইলিশ মাছের মরিচ - কাটা ঝোলের মতো | সত্যিই লোভনীয় !! কড়াইতে দিয়ে দিলাম ২-৩টে গোটা কাঁচালঙ্কা | আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে , রান্না খুব অল্প সময়ের জন্য মজতে দিলাম |
রান্না হয়ে এসেছে ভেবে নিয়ে ঢাকা খুলে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | ও হো হো ! কি অপূর্ব ! কি ...ই অ......পূর্ব ! কত হালকা রান্না ! অথচ কি ভীষণ টেস্টি টেস্টি !! আঁচ বাড়িয়ে রসার পরিমান ঠিক করে নিলাম | গ্যাস করলাম বন্ধ | রান্না একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম | লাঞ্চ টেবিলে ঢাকা খুলবো আর সবাই একসাথে এনজয় করবো |
যথারীতি দুপুরের খাবার টেবিলে আমরা সবাই | পাবদামাছের - হলুদগোলা - ঝোল রেঁধেছি সেটা বাড়ির কেউই খেয়াল করেনি (Pabdamacher - jhol) | কিন্তু খাবার টেবিলে মেনু দেখে সবাই উচ্ছ্বসিত ! মুগ্ধ !! হালকা ঝোলের মিষ্টি - মধুর গন্ধে সবার মুখে যেনো স্বস্তির এক উজ্জ্বল আলো | খুব শান্তিতে স্বস্তিতে আমরা সবাই লাঞ্চের সময়টা পার করলাম | খুব ভালো লাগছিলো | মুখে ছিল তৃপ্তির এক মনোরম স্বাদ আর মনে বইছিলো স্বস্তির দারুন হাওয়া | অবশ্যই আনন্দের হাওয়া ......আনন্দের,,,,,,,আনন্দের........অনেক অনেক আনন্দের........( ...বইতে থাকুক ...)
আনন্দে থাকুন | সুস্থ থাকুন | ভালো খান | ভালো থাকুন |
Comments