আজ চৈত্র সংক্রান্তি | একটা বছরের শেষ | কাল... শুরু নতুন বছরের | আজকের দিনটা আনন্দে কাটালেই ,কালকের শুরুটাও হবে ভালো ..............এইসব ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে ঢুকে দেখি .....আজকের বাজার কমপ্লিট | .......বাঃ ! বাঃ ! কি সুন্দর !......কি সুন্দর ! বাজারের থলি থেকে বার করে আনলাম ,কিছুটা নিমফুল | অপূর্ব দেখতে ! সাদা ধবধবে ছোট্ট ছোট্ট নিমফুলের গুচ্ছ থেকে চোখ যেন সরেনা |
হঠাৎ ই মনটা আনন্দে ভরে উঠলো | ভাবলাম এই নিমফুলগুলো দিয়ে খুব মুখরোচক আর মুচমুচে করে ভাজবো ......নিমফুলের বড়া | গরম ভাতের প্রথম পাত টা স্বাদে স্বাদে ভরে যাবে | আজকে জিভ সুন্দর স্বাদে ভরে গেলে ......সেই স্বাদ থেকে যাবে ,কালকের নতুন বছরের মজাদার খাওয়া দাওয়াতে | চোতবোশেখের বেলায় খুব অল্প সময়ের জন্যই এই সুন্দরী ফুলগুলোর আগমন | ভীষণ উপকারী | মাঝে মাঝে আমাদের রান্নাঘরে রান্নার এই উপকরণটি নানাভাবে রান্না করে খেলে , আমাদেরই ভালো | এই সময়কার কিছু কঠিন রোগকেও কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখতেই পারি |
নিমগাছ ! প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি | গাছটির ছাল ,ডালপালা ,পাতা ,ফুল ,ফল ,শেকড় .......প্রভৃতি সমস্তই ....নানা ঔষুধীগুনের ভরপুর | সবচাইতে সুখের কথা ....হাত বাড়ালে খুব সহজেই ,আমাদের আশপাশ থেকেই ....এগুলো পেয়েও যেতে পারি | আজ সারা পৃথিবীতে এই গাছের বড়োই আদর .....হয়ে চলেছে এই গাছের ঔষধীগুনের গবেষণা |
আমি তো খুব আনন্দের সঙ্গে ,খুব যত্ন সহকারে নিমফুলগুলো বেছে ফেললাম | খুব ভালো লাগছিলো | মনে হচ্ছিলো বার বার ফুলগুলো স্পর্শ করি | খুব নরম ফুল | ফুলগুলো বেছে নিয়ে ,জলে ধুয়ে ,জল ঝরাতে দিলাম .........
উপকরণ :-
নিমফুল - ২ আঁটি ( সুন্দর করে ছাড়িয়ে নিয়ে ,জলে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা )
বেসন - ২-৩ চামচ
কর্ণফ্লাওয়ার - ২-৩ চামচ
চালের গুঁড়ো - ১-২ চামচ
কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টা ( ঝাল নিজের নিজের পছন্দমতো )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদা তেল - ভাজার জন্য ,প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
খুবই সহজ রান্না | অথচ বড়োই টেস্টি টেস্টি | একবার খেলেই মনে হবে ...আর একবার খাই | উপকরণ গুলোও তো সাধারণতঃ সবই আমাদের বাঙালিদের রান্নাঘরে পাওয়াই যায় | আমার রান্নাঘরেও রয়েছে | তাই উপকরণ নিয়ে চিন্তা-ভাবনাও নেই | কয়েক মিনিটের মধ্যেই সবার জন্যই গরম গরম মুখরোচক বড়া ভেজেই ফেলবো | প্রথমেই আজ দুপুরের সব মেনুগুলো রেঁধে ফেলেছি | শেষ রান্না নিমফুলের - টেস্টি - টেস্টি বড়া |
একটা পাত্র নিয়ে ,তারমধ্যে জলঝরানো নিমফুলগুলো রাখলাম | দিলাম বেসন ,কর্ণফ্লাওয়ার ,চালেরগুঁড়ো ,কুচানো কাঁচালঙ্কা ,নুন আর চিনি | পাত্রের মিশ্রনের মধ্যে একটু জল ছিটিয়ে নিয়ে সমস্ত উপকরণ ভালোকরে মিশিয়ে নিয়ে ,আটো আটো করে মেখে নিলাম | মাখার স্বাদ দেখে নিলাম | ....নিমফুলের গন্ধ ....কিন্তু সত্যিই অসাধারণ |নাঃ আর দেরি নয় .......গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম |
তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে ,নিমফুলের মাখা থেকে বড়ার আকারে গড়ে গড়ে তেলের মধ্যে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে বড়াগুলোর এপিঠ ওপিঠ মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিলাম | এইভাবে সব বড়া ভাজাও শেষ করে ফেললাম | এবার শুধু জমিয়ে জমিয়ে খাওয়ার পালা |
দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজে উপস্থিত আমরা সবাই | খাওয়া শুরু গরম গরম ভাত আর আমার ভাজা গরম গরম নিমফুলের মুচমুচে বড়া দিয়ে | আহা - হা - হা .....কি সুন্দর লাগছে গো .......,কারুর গলায় মুগ্ধতা ;কেউ আবার বলে উঠলো ...নিমফুলের কি অসাধারণ স্বাদ !! জিভ তো আনন্দ পাচ্ছেই .......মন ও তো আনন্দে ডগমগ | কারুর কারুর কথা হলো সুন্দর স্বাদের আমেজ কিন্তু থেকেই যাবে ,তাই আরো একদিন নিমফুলের এই মুখরোচক বড়াভাজাটা হলে বড়োই ভালো হয় ........নিমফুলের মুচমুচে বড়া ..সত্যিই স্বাদে অসাধারণ অপূর্ব !.....অপূর্ব !!...অপূর্ব !!! আনন্দের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম .....আর অনেক অনেক আনন্দ নিয়ে নতুন এক শুভ নববর্ষের অপেক্ষায় রইলাম |
সব্বাই খুব খুব ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন ,আনন্দে থাকুন |
Commenti