top of page

ধনেপাতা - দিয়ে - ট্যাংরা - ঝোল (Tangra - Dhonepata - Jhol)




নানা ধরণের ছোট ছোট মাছ খাওয়া ছোট বড়ো আমাদের সবার জন্যই খুব ভালো | চোখ ভালো থাকে | হাড় মজবুত হয় | সহজে হজম হয়ে শরীরে পুষ্টি যোগায় | টাটকা টাটকা ছোট মাছ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় | রক্তাল্পতা দূর করে | হার্ট সবল রাখে ,সুস্থ রাখে | ছোট মাছ নিয়ে এই ধরণের আরো নানা নানা উপকারিতার কথা , আমরা সব্বাই সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি | প্রতিটি কথাই যেমনই ভীষণ সত্যি তেমনিই ভীষণ দামি |


তবে এতো সব গুন্ থাকা সত্বেও , অনেকে ছোট মাছ খেতে ভীষণ ভয় পায় | কারণ মাছের কাঁটা | আর যত পুষ্টি কিন্তু ছোট মাছের এই কাঁটাতেই | ছোট বা বড়ো , যাদের ছোট মাছখাওয়ার অভ্যাস একবার হয়ে গিয়েছে , তাদের কাছে ছোট মাছ সবসময়ে খুব পছন্দের খুব লোভনীয় | এখনো আমাদের গ্রাম বাংলার এমন অনেক মানুষ আছেন , যাদের ভাতের পাতে , ছোট ছোট মাছের কোনো না কোনো মুখরোচক মেনু প্রতিদিন থাকবেই থাকবে |


তবে আমি খেয়াল করেছি , ট্যাংরা মাছ যদিও ছোট মাছেদের দলেই পরে , কিন্তু প্রায় প্রতিটি বাড়িই ট্যাংরা মাছ খুবই পছন্দ করে | প্রতি বাড়ির রান্নাঘরেই ট্যাংরা মাছের অবাধ প্রবেশ | নেই কোনো বাধা | কারণ ট্যাংরা মাছ যে স্বাদে একেবারে অসাধারণ | একেবারে অন্যরকম | দারুন টেস্টি টেস্টি | প্রতিটি রান্নাঘরেই নানাভাবে ট্যাংরা মাছের নানা মেনু তৈরি হয় | আর প্রতিটি মেনুই কিন্তু স্বাদে গুনে ফাটাফাটি !!!


আমার রান্নাঘরেও মাছের মেনুতে আজ ট্যাংরামাছ | টাটকা , রুপোর মতো চকচকে , ৪০০ গ্রামের মতো | এদিকে আবার শীতকালীন ছোঁয়া আবহাওয়ায় চারিদিকে কচি কচি ধনেপাতার গন্ধ | তরকারির বাজারের প্রতিটি দোকানে সবুজ কচি কচি ধনেপাতা , আর তাদের সুন্দর স্পেশাল গন্ধ | আজ সেই কচি কচি ধনেপাতার ও খানিকটা আমার রান্নাঘরে | স্পেশাল গন্ধেও রান্নাঘর ভরে উঠেছে | আরো রয়েছে কিলো খানেক নতুন আলু | সঙ্গে পেঁয়াজ আদা রসুন ,টমেটো ,কাঁচালঙ্কা | আরো ২-১ রকম টাটকা সবজি |



বাজার থেকে কিনে আনা আনাজপাতি গুলো গোছাতে গোছাতে হঠাৎ মনে হলো , ট্যাংরা আর ধনেপাতা তো রান্নার এক দারুন জুটি | আর এখনকার নতুন আলুগুলোও তো স্বাদে অসাধারণ | তাহলে ধনেপাতা ছিটিয়ে নতুন আলু দিয়ে ট্যাংরা মাছের হালকা করে ঝোল রাঁধলে আজ কেমন হয় ? নতুন নতুন ধনেপাতা , নতুন নতুন আলু দিয়ে , টাটকা ট্যাংরা মাছের আজ নতুন ধরণের টেস্টি টেস্টি ঝোল , মনে হয় গরম গরম ভাতের সঙ্গে সবারই খুব ভালো লাগবে |



বাজারের থলি থেকে ট্যাংরা মাছগুলো নামিয়েই খানিকটা নুন মাখিয়ে রেখেছিলাম | এতে মাছ সুন্দর ভাবে পরিষ্কার হয়ে যায় | এবার সময় হতেই , ট্যাংরা মাছগুলো পরিষ্কার করে নিয়ে , জলে বার বার ধুয়ে , জল ঝরিয়ে আবার প্রয়োজনমতো নুন , হলুদ আর কয়েকফোঁটা কাঁচা সর্ষের তেল মাখিয়ে রাখলাম | গরম তেলে ট্যাংরা মাছ ভাজতে শুরু করলেই , মাছ ভীষণ ফাটে ,চারিদিকে গরম তেল ছিটকে যায় | কিন্তু মাছের গায়ে সামান্য সর্ষের তেল মাখানো থাকলে ফাটাটা বেশ খানিকটা কমে যায় | তবে কড়াইতে ঢাকা চাপা দিয়েও মাছ ভেজে নেওয়া যায় |


এবার খানিকটা ধনেপাতা বেছে নিয়ে কুচিয়ে ফেললাম | কোঁচানো ধনেপাতা একটা পাত্রে জলে ভিজিয়ে দিলাম | ২টো মাঝারি সাইজের নতুন আলু নিয়ে খোসাগুলো হালকা হাতে ছাড়িয়ে , লম্বালম্বি প্রত্যেকটা আলু ৬ টুকরো করে কেটে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখলাম | রান্না শুরুর খানিকটা প্রস্তুতি হয়েই রইলো | সব কাজ শেষ হতেই , চটজলদি রান্নাও শুরু করতে পারবো (Tangra - Dhonepata - Jhol) |


সকালের কাজগুলো সারা, আমার রান্না হলো শুরু ....................


উপকরণ :-


  • ট্যাংরা মাছ - ৪০০ গ্রাম

  • নতুন আলু - ২টো , মাঝারি সাইজের , প্রত্যেকটা খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি ৬ টুকরো করে কাটা

  • ধনেপাতা - ১/২ কাপ মতো কুচানো

  • গোটা কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টা

  • টমেটো - ১টা ছোট সাইজের , কুচানো

  • ছোট সাইজের পেঁয়াজ - ৩টি , কুচানো

  • রসুন - ৪-৫ কোয়া , ছাড়িয়ে , মিহি করে কুচানো

  • হলুগুঁড়ো - ১.৫ চামচ মতো

  • লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১.৫ থেকে ২ চামচ মতো

  • জিরেগুঁড়ো - ১.৫ থেকে ২ চামচের মতো

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - স্বাদে চটক আনতে কয়েকদানা

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো

পদ্ধতি :-


গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল বেশ ভালোমতো গরম হয়ে উঠলেই , আঁচ কমিয়ে , কয়েকটা নুন , হলুদ , তেল মাখানো ট্যাংরা মাছ কড়াইতে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মাছগুলো হালকা কড়া করে ভেজে নিয়ে তুলে রাখলাম | বাকি সব মাছগুলোও এইভাবেই ভেজে ফেললাম |



সব মাছগুলো ভাজা হয়ে গেলে , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে প্রয়োজনমতো আরো একটু তেল দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে দিলাম | তেল গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিলাম দুটো ফাটানো শুকনোলঙ্কা আর ১ থেকে ১.৫ চামচ মতো পাঁচফোড়ন | পাঁচফোড়ন ফোরণে যে কোনো ধরণের রান্না ঝোল কিন্তু দারুন টেস্টি টেস্টি আর মুখরোচক হয় | যাহোক এদিকে ফোরণের সুন্দর গন্ধ বের হতে শুরু হলেই , কড়াইতে ছেড়ে দিলাম , কুচানো পেঁয়াজ , কুচানো রসুন | আঁচ কমিয়ে বাড়িয়ে ভাজতে লাগলাম | পেঁয়াজ ভাজায় অল্প রং ধরে এলেই কড়াইতে দিলাম জলে ধুয়ে রাখা কাটা আলুর টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলুগুলো ভালো করে ভাজতে লাগলাম |



আলু ভাজা খানিকটা হয়ে গেছে মনে হতেই আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম ১/২ চামচ মতো হলুদগুঁড়ো , ১ চামচ কুচানো ধনেপাতা , প্রয়োজনমতো নুন | আবার খানিকক্ষণ আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ নাড়তে লাগলাম | সবকিছু মজে এসেছে মনে হতেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম টমেটোর টুকরোগুলো | আবার খানিকক্ষণ চললো খুন্তির নাড়াচাড়া | এবার আঁচ কমিয়ে দিলাম ২ চামচ মতো জিরেগুঁড়ো , ১.৫ চামচ মতো লাল লঙ্কারগুঁড়ো আর কয়েকদানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালো করে কষতে লাগলাম | বাঃ রে ! সুন্দর গন্ধে চারিদিক যেন ম ম করছে | ঝোলের পরিমান ভেবে কড়াইতে দিলাম জল |



ঝোল টগবগ টগবগ করে ফুটে উঠেছে | কিছুক্ষন ফোটার পর আঁচ কমিয়ে একটা হালকা ঢাকা দিয়ে ঝোল মজতে দিলাম | ঢাকা খুলে আলু একটু মজে এসেছে মনে হতেই আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম , ভেজে রাখা ট্যাংরা মাছগুলো | মিডিয়াম আঁচে মাছ সমেত ঝোল খানিকক্ষণ ফুটতে লাগলো | ও হো হো , একেবারে জিভে জল আনা গন্ধ ! রান্না হয়ে এসেছে মনে হতেই একটু চেখে দেখে নিলাম | সত্যিই দারুন হয়েছে কিন্তু ! আর কিচ্ছু লাগে না | শুধু গরম গরম ভাতের সঙ্গে এক বাটি ট্যাংরা মাছের ঝোল | ভাবলেই মনে যেনো খুশির চমক |





এবার কড়াইতে দিয়েদিলাম কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা আর খানিকটা কুচানো ধনেপাতা | আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস করলাম বন্ধ | কি সুন্দর যে গন্ধ !!! আহা আহা দারুন !!তবে কাছ থেকে অনুভব না করলে বোঝা ও যাবে না | আর অনুভব করতে হলে একবার তো রেঁধে , খেয়ে দেখতেই হবে | যাহোক গরম গরম ট্যাংরা ঝোল একটা পাত্রে ঢেলে দিলাম | দিলাম একটা ঢাকা |


দুপুরে সত্যি সত্যিই আমাদের কারোর আর কিচ্ছু লাগলো না | শুধু মাত্র ধনেপাতা ছেটানো গরম গরম ট্যাংরা মাছের ঝোল আর সঙ্গে গরম গরম ভাত (Tangra - Dhonepata| অপূর্ব ! অপূর্ব লাগলো | সুন্দর স্বাদে মনপ্রাণ ভরে গেলো | বড়োই যেনো তৃপ্তির খাওয়া | সবাই খুশি | আমরা সব্বাই খুশি .......


থাকুন , আপনারাও সবাই খুশিতে থাকুন | আনন্দে থাকুন | ভালো ভালো খান | আর অনেক অনেক ভালো থাকুন |




4 views0 comments

Comments


bottom of page