ধনেপাতা !!! সবুজ ,সতেজ আর আকর্ষণীয় গন্ধে ভরা ....রান্নাঘরের এক স্পেশাল উপকরণ | প্রতিটি রান্নাঘরে উঁকি মারলেই ....বাজারের থলিতে বা তরকারির ঝুড়িতে বা ফ্রিজে ফ্রিজে ...ধনেপাতার দেখা মিলবেই মিলবে |কোনো কোনো রান্নায় ...অল্প একটু ধনেপাতা যেনো ....স্বাদগুণে এক নতুন মাত্রাই এনে দেয় | মন যেনো বলে ওঠে ..বাহ্ ! বাহ্ ! দারুন ! ......দারুন তো ! একটু ধনেপাতা কুঁচিতে গরম গরম আলুভাতে মাখা .....বা অল্প একটু ধনেপাতা কুচি দিয়ে হালকা ভাবে রান্না যে কোনো ডাল ....বা মাছের গরম গরম পাতলা ঝোলে কয়েকটা ধনেপাতা কুচি .....হঠাৎ করে রান্নার স্বাদই যেনো পাল্টে দেয় | খাবার টেবিলে এনে দেয় একরাশ খুশির হাওয়া ..........| বিভিন্ন রান্নায় ধনেপাতা যেমন টেস্টে টেস্টে চমক এনে দেয় .....তেমনি গরম ভাতে ধনেপাতা বাটা ...বা গরম ভাতে প্রথম পাতে মুচমুচে -মুখরোচক ধনেপাতার বড়া....নাঃ ! আর বলা যাবে না ....জিভে জলই এসে যাচ্ছে .........অসাধারণ ....অ...........সাধারণ !
ধনেপাতা যে শুধু রান্নায় সুন্দর স্বাদ এনে দেয় বা জিভ সুন্দর স্বাদে ভরিয়ে দেয় ....তা নয় কিন্তু | আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সবুজ ,সতেজ ধনেপাতা এক মহা ঔষধ | ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ধনেপাতা চোখ খুব ভালো রাখে | ধনেপাতার আইরন আছে বলে রক্তাল্পতা দূরে রাখে | হজম শক্তি বাড়িয়ে পেট ভালো রাখে | হার্টকে রাখে সুস্থ | রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে | আরো আরো কঠিন থেকে কঠিনতর রোগকেও দূরে রাখে | মোটকথা শরীরকে সুস্থ - সবল রাখতে ভীষণ ভীষণ ভাবে সাহায্য করে | প্রতিদিনের জীবনে খানিকটা ধনেপাতা ,মনেহয় অনেক শারীরিক সমস্যাকেই দূরে রাখে |
আজকে আমার রান্নাঘরে একেবারে টাটকা টাটকা মোটামুটি মাঝারি সাইজের খানিকটা চিংড়িমাছ | নাঃ.... আজ খুব মুখরোচক ....টেস্টি টেস্টি করে চিংড়িগুলো রাঁধবো , গরম গরম ভাতের প্রথম পাতটা জমিয়ে দিতেই হবে | তবে কি রাঁধি ?......কি রাঁধি ?......কি রাঁধি ? ......আচ্ছা ধনেপাতা আর চিংড়ি ভাজা ভাজা করলে কেমন হয় !! আজকের প্রথম পাত জমাতে মনে হয় , এর থেকে কিছু ভালো হতেই পারে না | ব্যাস ......খুশিতে মন একেবারে ডগমগ | ভালো কিছু চিন্তা মাথায় এলে ....মনটাও যেনো অনেকটা ভালো হয়ে যায় | সংসারের আনন্দই যে আমার ও আনন্দ |
কালকের বাজার থেকে আনা বেশ খানিকটা ধনেপাতা ফ্রিজেই রাখা রয়েছে | কালকের রান্নার পরেও অনেকটা বেচে গিয়েছিলো | গোড়াসমেত ধনেপাতাগুলো ছোট্ট একটা কাঁচের গ্লাসে জলের মধ্যে চুবিয়ে রেখেছিলাম | একটা হালকা কাপড় দিয়ে পাতাগুলো জড়িয়ে রেখেছিলাম | আজ ফ্রিজ খুলে দেখি ,ধনেপাতাগুলো কালকে যেমন সতেজ আর সবুজে ভরা ছিল ......আজ ও ঠিক তেমনিই আছে | বাহ্ ! মনের খুশি খুশি ভাবটাও যেনো আরো আরো অনেক বেড়ে গেলো |
সমস্ত কিছু ভাবতে ভাবতে চিংড়িমাছগুলো পরিষ্কার করে নিয়ে ,ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে ,জলে ধুয়ে একটু নুন আর এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো মাখিয়ে রাখলাম | একটা পাত্রে কুসুম কুসুম গরম জলে একচিমটে নুন দিয়ে ধনেপাতাগুলো পুরোপুরি ভিজিয়ে দিলাম | বর্ষাতে ,সবসময়েই শাকপাতা খুব খুব ভালো করে ধুয়েই রান্না করতে হয় | আর সেটা কিন্তু আমাদের সুস্থ শরীরের জন্য বড়োই প্রয়োজন | যাইহোক জলখাবারের পাট শেষ করে বাকি কাজগুলো ও শেষ করে নিলাম | রান্নাঘরে ঢুকে দুপুরের রান্না শুরু করে দিলাম | মোটামুটি সব রান্নাই শেষ | শুধু বাকি ধনেপাতা দিয়ে চিংড়িমাছ ভাজা | আজ রান্নাঘরের শেষের রান্না ......................
উপকরণ :-
চিংড়িমাছ - ৫০০ গ্রাম ( খোসা ছাড়িয়ে ,ছোট্ট ছোট্ট টুকরো করে কাটা | আর জলে ধুয়ে অল্প নুন আর এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো মাখানো )
ধনেপাতা - ২ আঁটি মতো( কুসুম কুসুম গরম জলে এক চিমটে নুন দিয়ে ভিজিয়ে রাখা )
পেঁয়াজ - ৩-৪টা ( মিহি করে কুচানো )
রসুন - ৪-৫ কোয়া ( মিহি করে কুচানো ,ইচ্ছে না হলে নাও দিতে পারেন , কিন্তু ধনেপাতা আর রসুন ভাজায় এক সুন্দর গন্ধ তৈরি হয় ,তাই আমি দিলাম )
কাঁচালঙ্কা - সবুজ আর লাল মিলিয়ে ১০-১২টা ( ছোট ছোট টুকরো করে কুচানো ,তবে ঝাল অবশ্যই নিজের নিজের পছন্দমতো )
হলুদগুঁড়ো - চা চামচের ১/৪ ভাগ হলুদ গুঁড়ো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
শেষের রান্নার শুরুর প্রথমেই ,জলে ভেজানো ধনেপাতাগুলো ,জল থেকে তুলে ,জল ঝরিয়ে কুচিয়ে রাখলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে নুন আর অল্প হলুদ দিয়ে ভেজানো চিংড়ি মাছের টুকরো গুলো কড়াইতে ঢেলে দিলাম | কম আঁচে কুচানো চিংড়ি গুলো সাঁতলে নিয়ে একটা পাত্রে তুলে রাখলাম | এবার কড়াই পরিষ্কার করে ,আবার গ্যাসে চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল
তেল ভালোমতো গরম হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে ,পেঁয়াজকুঁচিগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ ভাজতে লাগলাম | দিলাম কুচানো রসুনগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে নাড়তে পেঁয়াজগুলো নরম নরম আর হালকা বেগুনি রঙের হয়ে এলে , অল্প ধনেপাতা কুচি রেখে ,বাকি সবটা কড়াইতে দিয়ে দিলাম | দিলাম খানিকটা কুচানো কাঁচালঙ্কা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালো করে নাড়তে লাগলাম |
পেঁয়াজ ,রসুন ,ধনেপাতা কুচি ভাজা ভাজা হয়ে আসতেই ,কড়াইতে দিয়ে দিলাম সাঁতলানো চিঙড়ি ,প্রয়োজনমতো নুন আর স্বাদে চমক আনতে কয়েকদানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে চিংড়ি সমেত সমস্ত উপকরণ ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | আহা ...হা ...হা ...চিংড়ি - ধনেপাতা ভাজার..... সুন্দর গন্ধে চারিদিক ভরে গেছে | চিংড়ি - ধনেপাতা ভাজা হয়ে এসেছে মনে হতেই , আঁচ কমিয়ে নিয়ে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | বাঃ ! অপূর্ব ! অপূর্ব হয়েছে !!!
রান্না হয়ে গেছে মনে হতেই ,আঁচ বাড়িয়ে রান্নায় দিয়ে দিলাম ,বাকি কুচানো ধনেপাতাগুলো আর কয়েকটা কুচানো কাঁচালঙ্কা | রান্না দু - একবার নেড়েচেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | রান্নায় দিলাম ঢাকা | এখন শুধু আমাদের দুপুরে খাওয়ার টেবিলে যাওয়ার অপেক্ষা .........
টেস্টি টেস্টি রান্নায় জিভের স্বাদ জমিয়ে শুরু হলো আমাদের সবার মধ্যাহ্ন ভোজ | আনন্দে টেবিল জমিয়ে খাওয়া শেষ ও হলো | সব্বাই খুব খুব খুশি | তৃপ্তিতে ভরপুর | কিন্তু !....কিন্তু সব্বাই রইলাম আবার পরের খুশির অপেক্ষায় ..............
আপনারাও খুশিতে থাকুন | ভালো ভালো খাওয়া দাওয়ায় .....আনন্দে থাকুন | থাকুন অনেক অনেক সুস্থ |
Comments