আমাদের জীবনে তো রোজনামচা আছেই | আর এই রোজনামচায় , সমস্ত কাজের সাথে সাথে খাওয়ার কাজটাও আছে কিন্তু | শরীর সুস্থ রেখে , মন ভালো রেখে সমস্ত কাজ ঠিকঠাক সারতে গেলে , শরীর - মনের এনার্জি দরকার | আর তা আছে পুষ্টিকর স্বাদিষ্ট খাবারে |
সাধারণতঃ সারাদিনে আমরা চারবার খাওয়ার কথা ভেবে রাখি | সকালের চা - জলখাবার , দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজ , বিকালে একটা হালকা চা - স্ন্যাক্স আর রাতে ডিনার | আর এই ধারাটা সংসারে যারা ঠিকঠাক বয়ে নিয়ে চলেছে , তাদের যেমন দায়িত্ব আছে , তেমনি আছে নানা চিন্তাভাবনা , তারা অনবরত চেষ্টা করে , সংসার ... কিভাবে সুখে আনন্দে সুস্থতায় ভরে থাকবে | আমি....আমিও চেষ্টা করি সব্বাইকে একটু খুশি আনন্দে ভরিয়ে রাখতে |
আজ রবিবারে ছুটির আমেজে সবাই মশগুল | দুপুরের খাওয়া সেরে জমিয়ে ভাতঘুম ও দিয়ে চলেছে | এবার আমেজ কেটে গেলেই ...চা এর সঙ্গে একটু টা এর খোঁজ করবেই | আর জাঙ্ক ফুডের দিকে তো লোভ সবারই !! ভাবলাম ...আমিই আজ সন্ধ্যায় , সবার জন্য একটু মজাদার খাবার তৈরি করে ফেলি | বাড়িতে খানিকটা পাস্তা আনা রয়েছে , ডিম ও রয়েছে | ডিম্ - আলু - পাস্তা দিয়ে একটা স্বাদিষ্ট টিফিন তৈরি করে ফেলি | মন তো বলছে সবার ভালো লাগবেই , লাগবে (Egg-Potato-Pasta)|
পাস্তা !! এক ইতালিয়ান ফুড ! ময়দা দিয়ে তৈরি | ইতালিতে তো এর চাহিদা থাকবেই , কিন্তু এখানের চাহিদাও কম যায় না | আজকের দিনে ঘরে ঘরে পাস্তার আনাগোনা রকমারি মেনু হয়ে | ভারতের ছোট -বড়ো অনেক মানুষ পাস্তার খুব ভক্ত | সব চাইতে গ্রহণযোগ্য কথা এই যে, পাস্তার যে কোনো মেনুই চটজলদি তৈরি হয়ে যায় , অথচ হয় দারুন দারুন স্বাদিষ্ট !! আমরাও ...মানে , আমার বাড়ির সব্বাই , আমরা পাস্তা খেতে খুব খুউব ভালোবাসি |
ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম | একে একে সব উপকরণ এক জায়গায় এনে রাখলাম | ৩টে মাঝারি সাইজের আলু খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি মোটামোটা আলু ভাজা কায়দায় কেটে জলে ভিজিয়ে দিলাম | ৫টা মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ ও , খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে লম্বালম্বি একটু মোটামোটা করে কেটে রাখলাম | টুকরো টুকরো করে কেটে রাখলাম কয়েকটা লাল - সবুজ কাঁচালঙ্কা |
উপকরণ :-
পাস্তা - ৩০০ গ্রাম
আলু - ৩টে , মাঝারি সাইজের , খোসা ছাড়ানো আর লম্বালম্বি মোটা মোটা টুকরো করে কাটা
পেঁয়াজ - ৫টা , মাঝারি সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি মোটা মোটা করে কেটে রাখা
কাঁচালঙ্কা - ৬-৭টা , একটু বড়ো বড়ো করে কুচানো
ডিম্ - ৬-৭টা
গোটা গোলমরিচ - ১- ১.৫ চামচ , একটু বড়ো বড়ো টুকরোতে ভেঙে রাখা
চিনি - স্বাদ বাড়াতে ....কয়েকদানা
নুন - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো , অন্য রান্নার তেলেও রান্নাটা ভালো লাগবে
পদ্ধতি :-
সব কিছু জোগাড় করে ফেলেছি মনে হতেই , রান্না তৈরিতে মন দিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে কাটা আলুগুলো খানিকটা জলের মধ্যে নিয়ে , বেশি আঁচে সেদ্ধ হতে দিলাম | জল টগবগ করে ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে কড়াইতে একটা ঢাকা দিয়ে আলুগুলো মজতে দিলাম | খানিকক্ষন বাদে আলু খানিকটা সেদ্ধ হয়ে এসেছে ভেবে নিয়ে ঢাকা খুলে দেখে নিলাম | বাঃ ! ঠিকঠিক সেদ্ধ ও হয়েছে আর গোটাগোটাও রয়েছে | ঠিক সময়েই ঢাকা খুলেছি | ফুটন্ত জল থেকে সেদ্ধ আলুগুলো জল ঝরিয়ে একটা পাত্রে তুলে রাখলাম |
এবার গ্যাসের আঁচ বাড়িয়ে , কড়াইতে দিয়ে দিলাম আরো খানকিটা জল | দিলাম একচিমটি নুন , ১ - ১.৫ চামচ তেল | আবারো জল টগবগ করে ফুটে উঠতেই , পাস্তাগুলো সেদ্ধ করতে কড়াইতে ঢেলে দিলাম | বেশি আঁচে কয়েকবার ফোটার পর , আঁচ কমিয়ে পাস্তাগুলোকেও মজতে দিলাম | পাস্তা সুসিদ্ধ হয়ে গিয়েছে মনে হতেই , আঁচ কমিয়ে ফুটন্ত জল থেকে , জল ঝরিয়ে পাস্তাগুলো ও আরেকটা পাত্রে তুলে রাখলাম |
এবার কড়াই পরিষ্কার করে আবার গ্যাসে চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল ( ৩ থেকে ৪ চামচ )| তেল গরম হলে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম কুচানো পেঁয়াজগুলো , আর কিছু কুচানো কাঁচালঙ্কা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালোকরে ভেজে নিতে লাগলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো নুন আর স্বাদ বাড়াতে কয়েকদানা চিনি | আবারো শুরু হলো ভালো করে নাড়াচাড়া | পেঁয়াজগুলো থেকে ভাজার সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ বের হতে শুরু করতেই , কড়াইতে দিয়ে দিলাম সেদ্ধ আলুগুলো | আঁচ বাড়িয়ে শুরু হলো আবা.........র নাড়াচাড়া |
আলু , পেঁয়াজ , কাঁচালঙ্কা সব ভালোমতো মজে গিয়েছে মনে হতেই , আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে ঢেলে দিলাম সেদ্ধ পাস্তাগুলো | আবার শুরু করলাম , খুব ভালো করে কড়াইতে থাকা সমস্ত উপকরণের নাড়াচাড়া | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নেড়েচেড়ে নিতে লাগলাম | উপকরণ গুলোতে হালকা রং ধরে আসতেই মনে হলো পাস্তা প্রায় তৈরি হয়েই এসেছে | তার সঙ্গে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পাস্তা ভাজার সুন্দর গন্ধ | আঁচ কমিয়ে অল্পক্ষন মজতে দিলাম |
এই ফাঁকে আর একটা গ্যাস ওভেন জ্বালিয়ে , কয়েকটা ডিমের ভুজিয়া বানিয়ে ফেললাম | ডিম্ নিজের নিজের পছন্দ মতো নিতে পারেন | আমি ৬-৭টা ডিমের ভুজিয়া বানালাম | ভুজিয়া বানাতে ডিমের মিশ্রনে দিলাম প্রয়োজনমতো নুন আর আধ ভাঙা ভাঙা খানিকটা গোলমরিচ | পাস্তাও তো অনেকটা ...তাইনা ? যাহোক , ভুজিয়া তৈরি করে নিয়ে পাস্তার কড়াইতে ঢেলে দিলাম | এই ওভেনটা বন্ধ করে দিলাম |
এবার আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে , ডিমের ভুজিয়া সমেত পাস্তা কয়েকবার নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিলাম | রান্নাটা একটু চেখেও নিলাম | কি সুন্দর হয়েছে !!! গরম গরম ডিম্ - আলু - পাস্তা টমেটো সস আর অল্প চিলি সস দিয়ে দারুন লাগবে | পাস্তা তৈরি ........মনে হতেই গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | দেরি না করে সব্বাইকে ডেকে নিলাম খাবার টেবিলে | হাতে হাতে পৌঁছে দিলাম সস আর কাঁটা চামচ সমেত পাস্তার প্লেট (Egg-Potato-Pasta)| লোভনীয় গন্ধে আর যেন পারা যাচ্ছে না | বেড়ে যাওয়া ক্ষিধে যেন আরো ..আরো ও বেড়েই চলেছে .......
হাতে প্লেট পৌঁছাতেই খাওয়া শুরু হয়ে গেলো গপা গপ ...গপ গপা গপ | মাঝ্যে মধ্যেই নানা ধরণের গলার আওয়াজ আসছে .....অসাধারণ .... অসাধারণ ...আহা হা খুব ভালো ....খুব ভালো ....অপূর্ব ....অপূর্ব ...রোজ খাবো ...আহা আহা বার বার খাবো .......এই ধরণের আরো অনেক অনেক রকমের আওয়াজ .....| আমিও খাওয়া শুরু করলাম | সত্যিই বড়োই স্বাদিষ্ট ...বড়োই স্বাদিষ্ট !!আজকের জলখাবারে জমিয়ে দিয়েছি ....এক বাক্যে সত্যি কথা ...যে সব্বাই খুশি - খুশি - খুশি ! খুউব খুশি !!!
ভালো খান , ভালোবেসে খান , ভালো থাকুন |
Comments