ও দিদি ! দিদিগো ! কাটোয়ার ডাটা এনেছি গো ! তুমি বলেছিলে যে ! ও দিদি ! দিদি ...! ডাক শুনে হাসি হাসি মুখে পেছনে থাকতেই দেখি ....আমার প্রিয় সব্জিওয়ালী দিদি , নানা ধরণের টাটকা টাটকা সবুজ সবুজ সবজিভরা ঝুড়ি নিয়ে বসে আছে | আমাকেই ডাকছে | আমি তো খেয়ালই করিনি |
এগিয়ে গিয়ে দেখি সত্যিই ঝুড়ি ভরা টাটকা তরতাজা কাটোয়ার ডাটা | দেখেই কিনতে ইচ্ছে করছে | কিছুটা কিনেও ফেললাম | ডাটা কিনতে কিনতে চোখ গিয়ে পড়লো কচি কচি ঝিঙে গুলোর দিকে | কিলোখানেক ঝিঙেও কিনে ফেললাম | কিনতে কিনতে ভেবেও ফেললাম অনেকদিন বাদে আজ লাঞ্চে সবাইকে ডাটা - ঝিঙে - পোস্ত রেঁধে খাওয়াবো (Data - Jhinge - Posto) | এই ত্রাহি ত্রাহি গরমে এক্কেবারে ঠিকঠাক মেনু |
বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে যারা যারা বিছানায় ছিলো , বাড়ি পৌঁছে দেখি সবাই বিছানা ছেড়ে উঠেও পড়েছে , চায়ের পাট শেষ করে নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত হয়েও পড়েছে | ঠিক আছে | খুবই ভালো | আমিও আরো কাপ চা খেয়ে সকালের জলখাবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম | সব্বাই সারলাম হালকাপুলকা প্রাতঃরাশ |
এবার চট জলদি সেরে ফেলবো দুপুরের রান্না | এই গরমে যত তাড়াতাড়ি রান্না শেষ করবো ততই ভালো | ৫০ গ্রামের মতো পোস্ত জলে ভিজিয়ে দিলাম | ডাটা আর ঝিঙে ভালো করে ছাড়িয়ে নিয়ে কেটে ফেললাম | ঝিঙে জলে ধুয়ে জল ঝরিয়ে তুলে রাখলাম আর কাটা ডাটার টুকরোগুলো জলে ভিজিয়ে রাখলাম | ডাটা তো ! বার বার ভালো করে ধুয়ে নিতেই হবে |
উপকরণ :-
কাটোয়ার ডাটা - ২ ঝাড়ি ( পরিষ্কার করে কেটে কুটে নিয়ে জলে ভেজানো )
ঝিঙে - কচি কচি মাঝারি সাইজের ৬-৭টা ( খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে জলে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা )
কাঁচালঙ্কা - ২-৩টে বেটে নেওয়া আর কয়েকটা গোটা গোটা রান্নায় ছেড়ে দেওয়া , নিজের নিজের পছন্দমতো
পোস্ত - ৫০ গ্রাম , জলে ভিজিয়ে রাখা
পাঁচফোড়ন - ১ চামচ মতো
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২-৩টে , একটু করে ফাটানো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
আজ পাঁচফোড়নের স্বাদে ডাটা - ঝিঙে পোস্ত একটু রসিয়েই রাঁধবো | গরম ভাতে চটপটা স্বাদে ঠান্ডা ঠান্ডা ডাটা - ঝিঙে পোস্ত কিন্তু খেতে অসাধারণ অ,,,,,,,,,,,সাধারণ লাগবে | কঠিন গরমে মন ভালো রাখতে , শরীরের ক্লান্তি দূর করতে , খাওয়াতে তো চমক রাখতেই হবে |
রান্না শুরুর প্রথমেই মিক্সিতে নিয়ে নিলাম , জলঝরানো ভেজানো পোস্ত , ৩টে কাঁচালঙ্কা , আর এক চিমটে নুন | খুব মিহি করে বেটে নিলাম | এবার গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | তেল গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম , ১ চামচ পাঁচফোড়ন আর ৩টে ফাটানো শুকনোলঙ্কা | দিয়ে দিলাম জল ঝরানো কচি কচি ডাটার টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কয়েকবার নেড়ে নিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো নুন
আর প্রয়োজনমতো চিনি | আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম |
পাঁচফোড়ন , শুকনোলঙ্কা আর ডাটার ভাজা ভাজা সুন্দর গন্ধ বের হতে শুরু করলেই , আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম কেটে - ধুয়ে রাখা ঝিঙের টুকরোগুলো | কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে , একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম | কচি কচি ঝিঙে থেকে বেরোনো জল থেকেই ডাটা আর ঝিঙে মজে যাবে | একটুও জল লাগবে না কিন্তু !!!
আহা হা খুব সুন্দর এক ভোগ ভোগ গন্ধে চারিদিক যেনো মো মো করছে | রান্না হয়ে এসেছে মনে হতেই , ঢাকা খুলে রান্না দেখে নিলাম | মনে হলো ডাটা আর ঝিঙে ভালোমতো মজেও গেছে | এবার আঁচ বাড়িয়ে রান্নায় দিয়ে দিলাম বেটে রাখা পোস্তটা | মিক্সি ধুয়ে পোস্ত বাটা অল্প জল রান্নায় দিয়ে দিলাম | দিয়ে দিলাম কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা | আবার ও আঁচ কমিয়ে রান্না কিছুক্ষন পোস্তবাটা সমেত মজতে দিলাম |
রান্না হয়ে গেছে মনে হতেই আঁচ বাড়িয়ে , খুন্তি দিয়ে রান্না কয়েকবার নেড়ে চেড়ে নিয়ে , আবার আঁচ কমিয়ে দিলাম | চট করে রান্না চেখে ও ফেললাম | দারুন ! দারুন ! দারুন টেস্টি টেস্টি হয়েছে তো | গ্যাস বন্ধ করে , ডাটা - ঝিঙে - পোস্ত একটা পাত্রে তুলে রাখলাম (Data - Jhinge - Posto) | একটা ঢাকাও দিলাম | আর ঢাকা খুলবো একেবারে খবর টেবিল |
দুপুরে খাওয়ার শুরুটা , গরম গরম ভাতের সঙ্গে ডাটা - ঝিঙে - পোস্ত দিয়ে যে কি দারুন হয়েছিলো , তা সত্যিই মুখে বলে আমি বোঝাতে পারবোই না | অসহ্য গরমে এই ঠাডা ঠান্ডা স্বাদের রান্না ,
বড়োই মুখরোচক , আর লোভনীয় | একবার খেলে মনে হয় বার বার খাই | মন প্রাণ যেনো শান্তিতে সোয়াস্তিতে ভরে যায় | খুশি খুশি মনে আমাদের খাওয়া দাওয়া এগিয়ে চললো | আমার খুব খুব ভালো লাগছিলো .............
আপনারাও সবাই খুব খুব ভালো থাকুন | ভালো ভালো খান আর অবশ্যই সুস্থ থাকুন |
Comments