আজ আমার রান্নাঘরে প্রায় ৫০০ গ্রামের মতো ট্যাংরা মাছ | চকচকে মাঝারি সাইজের খুব টাটকা | মাছগুলোর পেটে অল্প অল্প ডিম্ ভরা ছিলো | এই মাছের বাটি চচ্চড়ি কিন্তু অসা........ধারণ লাগে | গরম গরম সাদা ভাতে মেখে খেলে , মুখের স্বাদে এক দারুন চমক এসে যায় | আবার এই অসহ্য কঠিন গরমে , গরম গরম ডাল ভাত আর লেবুর সঙ্গে ও কিন্তু অসাধারণ |
মাছপ্রিয় বাঙালিদের কাছে ট্যাংরা মাছের কদরই আলাদা | প্রোটিনে ভরা এই মাছ এক স্পেশাল স্বাদে ভরা | যে পদ্ধতিতেই রান্না করা হোক না কেনো , অসাধারণ হয়ে উঠবেই উঠবে | ট্যাংরামাছ তো আমরা নানা নানাভাবে রান্না করি | কখনো ট্যাংরা মাছের ঝোল , কখনো ঝাল , কখনো বা বেগুন ট্যাংরা বা কখনো ধনেপাতা ট্যাংরা .........আরো আরো নানা রকম ভাবে | কিন্তু সব রান্নাই হয়ে ওঠে ফাটাফাটি |
সকালে তো সংসারে অনেক কাজ থাকে | সব একে একে শেষ করলাম | সকালের জলখাবারের পাট ও সুন্দর ভাবেই হয়ে গেলো | এবার নিশ্চিন্ত মনে আমি রান্নাঘরে ঢুকতে পারি | তাছাড়া এই অসহ্য গরমে রান্নাবান্নার কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করাই ভালো | তীব্র গরম থেকে শরীরকে যত দূরে রাখা যাবে , শরীর মন ততই ভালো থাকবে | সব্বাইকে ভালো রাখতে , সুস্থ রাখতে , নিজেকে অবশ্যই ভালো রাখতেই হবে |
বাজারের থলি থেকে ট্যাংরামাছগুলো নামিয়ে নিয়েছি | মাছগুলোকে অনেক অনেকবার জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে , শেষে একটু নুনজলে ভিজিয়ে রেখেছি | নুনজলে ভেজানো মাছ খুব তাড়াতাড়ি খুব পরিষ্কার হয়ে যায় | যাহোক আর দেরি করে বোধহয় কোনো লাভ নেই | রান্না শুরু করে ফেলাটাই এক্কেবারে ঠিকঠাক হবে | তা.............ই শুরু ও করলাম .......
উপকরণ :-
ট্যাংরা মাছ - ৫০০ গ্রাম , কেটে কুটে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে , অল্প নুন জলে ভেজানো
পেঁয়াজ - মাঝারি সাইজের ২-৩টি , খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে কুচিয়ে রাখা
রসুনের কোয়া - ৫-৭টা , মিহি করে কুচানো
কাঁচালঙ্কা - লাল - সবুজ মিলিয়ে কয়েকটা , লম্বালম্বি চিরে রাখা
টমেটো - ১টা ছোট সাইজের , ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে নিয়ে ধুয়ে রাখা
হলুদগুঁড়ো - ১ -১.৫ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
লাল লঙ্কারগুঁড়ো - প্রয়োজন মনে হলে , স্বাদ বাড়াতে অল্প
চিনির দানা - প্রয়োজন মনে হলে স্বাদে চমক আনতে ২-১ দানা
আর একটা বিশেষ কথা , ইচ্ছে হলে এই বাটি চচ্চড়িতে অল্প ধনেপাতা কুচানো ও দেওয়া যেতে পারে , যদিও আজ আমি রান্নায় ধনেপাতা দিই নি |
পদ্ধতি :-
রান্না শুরু করতে প্রথমে একটা কড়াই নিলাম | নুন জলে ভেজানো ট্যাংরামাছগুলো জল থেকে তুলে কড়াইতে রাখলাম | এবার কড়াইতে দিলাম কুচিয়ে রাখা পেঁয়াজ , কুচানো রসুন , চেরা লাল - সবুজ কাঁচালঙ্কা , টমেটোর টুকরোগুলো , প্রয়োজনমতো নুন , ২-১ দানা চিনি , প্রয়োজনমতো হলুদগুঁড়ো আর প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল |
কড়াইতে রাখা সমস্ত উপকরণ হাত দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে লাগলাম | গ্যাস জ্বালালাম | উপকরণ সমেত কড়াই বেশি আঁচে গ্যাসে বসলাম | কড়াই ভালো মতো গরম হয়ে উঠলেই , আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম | জল দিলাম না | উপকরণ থেকে বেরোনো জল আর রান্নায় দেওয়া তেলেই রান্না সুন্দর ভাবে মজে উঠবে |
অসম্ভব সুন্দর এক লোভনীয় গন্ধে আমার রান্নাঘর মো মো করছে | না না শুধু রান্নাঘরই নয় , সুন্দর গন্ধ ঘরের কোনায় কোনায় !! জিভে জল আনা গন্ধ !! ঢাকা খুলে দেখি রান্না থেকে জল বেরিয়ে , রান্না হয়ে চলেছে | আঁচ বাড়িয়ে খুন্তি দিয়ে খুব হালকা হাতে রান্না একটু এপিঠ ওপিঠ করে দিলাম | এবার আঁচ কমিয়ে রান্নায় দিয়ে দিলাম ১/২ চামচ মতো লাল লংকার গুঁড়ো | হালকা নাড়াচাড়া করলাম | ঢাকা দিয়ে আবার রান্না অল্পক্ষন মজতে দিলাম |
রান্না হয়ে গেছে মনে হতেই ঢাকা খুলে আঁচ বাড়িয়ে দিলাম | রান্না চেখে ও নিলাম | বাঃ ! ভারী সুন্দর হয়েছে তো ! অপূর্ব !!সত্যি সত্যি ই জিভে জল এসে গেলো !!নাঃ রান্না হয়েই গেছে মনে হতেই , কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ হালকা হাতে একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | রান্নার সুন্দর গন্ধে মন ভরে যাচ্ছে | এবার অপেক্ষা শুধুই খাবার টেবিল পর্যন্ত |
এখন বাড়ির সবাই আমরা খাবার টেবিলে | খুশি মনে খাওয়া শুরু করলাম | জমিয়ে জমিয়ে গরম গরম ভাত আর ট্যাংরা মাছের বাটি চচ্চড়ি দিয়ে খাওয়া শেষ ও করলাম (Tangramachher - Batichorchori) | দারুন লাগলো | দারুন ! দারুন ! সুন্দর স্বাদে আর তৃপ্তিতে সবার মন ভরে উঠলো | খুশি , আমরা খুশি |
আপনারাও খুশিতে থাকুন | ভালো খান | ভালো থাকুন | অনেক অনেক সুস্থ থাকুন |
Comments