top of page

ঝোল ঝোল - রসা রসা - বেগুন - খয়রা (Begun - Khoira - Curry)



কাল মাঝরাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি | মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙলেই ঝম ঝম বৃষ্টির আওয়াজের শব্দ | আবার ঘুমের জগতে চলে যাওয়া | সকালে ঘুম ভেঙেও সেই একই দৃশ্য | একনাগাড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েই চলেছে ........হয়েই চলেছে | চারিদিক জলে থৈ থৈ করছে | বর্ষাকাল !! এমন বৃষ্টি তো হবেই !! কিন্তু তাহলে তো আজ আর বাজার বসতেই পারবে না | দেখাই যাক , দুপুরের মেনুতে কি রাঁধি !!



ভাবতে ভাবতে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াতেই দেখি , এক হাটু জল ঠেলে ঠেলে এগিয়ে চলেছে ভোলা | আমাদের খুবই চেনা এক মাছওয়ালা | সাইকেলের পেছনে বেঁধে রাখা ঝুড়িতে মনে হচ্ছে কিছু মাছ টাছ তো রয়েইছে !! ভোলা কে হাঁক পেড়েই , আমি তর তর করে সিঁড়ি ভেঙে আর হাঁটু জল পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম , ভোলার মাছের ঝুড়ির কাছে | আমাকে দেখে তো ভোলা বেজায় খুশি ! '' ও দিদি !! কি দেবো ? কি দেবো ?? সব খুবই টাটকা , বৃষ্টির সকালে যেটুকু জোগাড় করতে পেরেছি , তাই নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম গো , নাও ...নাও , মনে হচ্ছে , আজ তো আর বাজার বসবে না , আর আমার সব মাছ এক্ষুনি শেষ ও হয়ে যাবে | তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি নিয়ে নাও , সব টাটকা ''|



ভোলার মাছের ঝুড়িটার একেবারে ওপরেই রয়েছে , খানিকটা ছোট ছোট টাটকা চকচকে খয়রামাছ | দেখেই তো জিভে জল চলে এসে গেলো| আমি আবার খয়রা মাছ খুবই পছন্দ করি | স্পেশাল স্বাদের , মিষ্টি মিষ্টি স্বাদের এক স্পেশাল মাছ | এই মাছ চোখে পড়লেই আমার কেমন কেমন যেনো ইলিশ মাছের কথা মনে পরে যায় | ইলিশ মাছের মতো করে খয়রা মাছ রান্না করলে , ইলিশের স্বাদ যেনো আমি পাই | নিয়ে নিলাম ৪০০ গ্রামের মতো খয়রা মাছ | খুব খুশি খুশি মনে আবার জল ডিঙিয়ে , সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে গেলাম একেবারে আমার রান্নাঘরে |



সবার চা - জলখাবারের ব্যবস্থা করতে করতেই খয়রা মাছগুলো কেটেকুটে পরিষ্কার করে নিয়ে , ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | সকালের নানা কাজ শেষ করে , সবাইকে জলখাবার খাইয়ে আমিও শেষ করে নিলাম সকালের জলখাবার | চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কেটে নিলাম ছোট ছোট বেগুনগুলো | লম্বালম্বি কেটে জলে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রেখে দিলাম | এবার নিয়ে নিলাম ১৩ -১৪ গ্রামের একটা সর্ষে - পোস্তর প্যাকেট | প্যাকেট কেটে সর্ষে - পোস্তর গুঁড়োগুলো একটা পাত্রে ঢেলে নিলাম (Begun - Khoira - Curry)| পাত্রের মধ্যে দিলাম ১ চামচ মতো হলুদগুঁড়ো , ১ চামচ মতো লাল লঙ্কারগুঁড়ো , ২-১ দানা চিনি আর প্রয়োজনমতো নুন | জল দিয়ে সব কিছুক্ষন ভিজতে দিলাম | তাহলে ধীরে ধীরে রান্না শুরু করেই ফেলি , তাই না ??




উপকরণ :-


  • খয়রা মাছ - ছোট ছোট ৪০০ গ্রামের মতো | কেটেকুটে ধুয়ে , নুন হলুদ মাখিয়ে রাখা

  • বেগুন - ছোট ছোট সাইজের ৩০০ গ্রাম | লম্বালম্বি দু ভাগে চেরা | জলে ধুয়ে , জল ঝরিয়ে রাখা

  • কাঁচালঙ্কা - ৭টা , ২ তো ফোরণের জন্য , বাকি গোটা গোটা রান্নায় দেওয়ার জন্য

  • কালোজিরে - ১ - ১.৫ চামচ

  • হলুদগুঁড়ো - ১.৫ চামচ থেকে ২ চামচ মতো

  • লাল লংকার গুঁড়ো - ১ চামচ

  • জিরেগুঁড়ো - ১ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - খুবই অল্প , প্রয়োজনমতো , কিন্তু লাগবে সুন্দর স্বাদ আনতে

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো




পদ্ধতি :-


রান্নার ব্যবস্থাপনা তো অনেকটাই এগিয়েই রেখেছি | এখন শুধু হবে শুরু ....হবে সারা | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল বেশ ভালোমতো গরম হয়ে উঠলেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম বেগুনের কাটা টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে বেগুনগুলো মুচমুচে করে ভেজে তুলে রাখলাম | আঁচ কমিয়ে দিলাম | কড়াইয়ের ওই তেলের মধ্যে আরো একটু তেল দিয়ে আঁচ বাড়ালাম |



তেল গরম হয়ে গেলেই , আঁচ কমিয়ে তেলের মধ্যে দিলাম ১ চামচ কালোজিরে আর দু টো ফাটানো কাঁচালঙ্কা | খুন্তি দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে দিলাম | আহা হা হা সুন্দর গন্ধ !! আঁচ বাড়িয়ে তেলের মধ্যে এক এক করে মাছগুলো সাজিয়ে দিলাম | মাছ সমেত তেল ভালোমতো গরম হয়ে উঠতেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম ভিজিয়ে রাখা সর্ষে পোস্তর মিশ্রণটা | আঁচ বাড়িয়ে হাল.....কা হাতে একটু নেড়ে দিলাম | মশলার জল শুকিয়ে তেল বেরিয়ে আসতেই , ঝোলের পরিমান ভেবে নিয়ে , কড়াইতে দিয়ে দিলাম জল | ঝোল ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে একটু মজতে দিলাম |


রান্না প্রায় হয়ে এসেছে মনে হতেই আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের মধ্যে দিলাম ১ চামচ জিরেগুঁড়ো , ৫টা গোটা কাঁচালঙ্কা আর ভেজে রাখা বেগুনের টুকরোগুলো | ঝোল ফুটছে ....ঝোল ফুটছে ...আর সুন্দর এক গন্ধে চারিদিক মো মো করছে | জিভে জল আনা গন্ধ !!! দারুন ! রান্না একটু চেখেও নিলাম | বেশ তাক তাক হয়েছে মনে হতেই , বেশি আঁচে ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিলাম | রান্নাটা হলো ঝোল ঝোল ....রসা রসা | গ্যাস বন্ধ করলাম |

আমরা সবাই এখন লাঞ্চ টেবিলে | এখনো ঝির ঝির বৃষ্টি হয়েই চলেছে | সবাইকে দেখে তো মনে হচ্ছে সবাই এই বৃষ্টি ভেজা দিনটা খুব খুব উপভোগ করছে | সব্বাই একেবারে চুপচাপ | কিন্তু হঠাৎ ই একজন বলে উঠলো '' কি রেঁধেছে গো , কি রেঁধেছ ?? গন্ধে যে জিভে জল ধরে রাখাই মুশকিল হচ্ছে!! আর ক্ষিধেও প্রচন্ড বেড়ে যাচ্ছে !! দাও দাও তাড়াতাড়ি খেতে দাও !!'' বাকিরাও তালে তাল মিলিয়ে বলে উঠলো '' ঠিক ..একদম ই .ঠিক ''| ...........আজকের লাঞ্চ টেবিলে আমরা সবাই খুবই খুশি (Begun - Khoira - Curry) | সুন্দর স্বাদের আমেজে , আনন্দে , তৃপ্তিতে আমরা ভরপুর ..........


সবাই ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন |

Comentários


bottom of page