আজ আমার রান্নাঘরে খুব কচি একটা চালকুমড়ো। চালকুমড়ো - খুবই উপকারী সবজি। ফাইবার ,শর্করা,মিনারেলে সমৃদ্ধ চালকুমড়ো খেতে কিন্তু আমরা ভালোই বাসি। পেট ভালো রাখতে ,ব্রেইনের কাজকে শক্তিশালী করতে ,শরীর ঠান্ডা রাখতে ,রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে প্রভৃতি নানা ধরণের উপকারী কাজে চালকুমড়ার ভূমিকা অপরিসীম। চালকুমড়ো খেতে ভালো লাগে। নানা মুখোরোচক খাবারও
চালকুমড়ো থেকে তৈরি হয়। তাই বাংলার সবজির বাজারে আর বাঙালির রান্নাঘরে চালকুমড়ো প্রায় দেখা যায়। শুক্ত ,ঘন্ট , নারকোলের দুধে .....নানা .... নানাভাবে আমরা চালকুমড়ো রাঁধি।
যে কোনো শহরাঞ্চল ছেড়ে একটু এগিয়ে যেতে যেতে একসময় শুরু হয় গ্রামের দৃশ্য। মফস্বল শহরাঞ্চল গুলির চারিদিকই তো ঘেরা থাকে ছোট ছোট গ্রাম দিয়ে। সেই গ্রামের পথে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে মাটির বাড়ির খড়ের চালায়,টালির ছাদে বা টিনের ছাদে ঝুলছে নানা ধরণের লতানো সবজির গাছ। যেমন লাউ ,কুমড়ো ,চালকুমড়ো ..............আরো নানা ধরণের গাছ। তৈরি মাচাতেও এই সবজিগুলো চাষ হয়। কিন্তু সবচাইতে বেশি চোখে পড়ে চালকুমড়ার গাছ। ছাদে ঝুলে রয়েছে কচি কচি চালকুমড়ো সঙ্গে বিশাল বড়ো বড়ো সাদা হয়ে যাওয়া চালকুমড়োও ।অনেকদিন ধরে রাখা আছে। দেখতে খুবই ভালো লাগে।
এই বড়ো বড়ো চালকুমড়ো গুলো থেকে তৈরি হয় অনেকেরই অতি প্রিয় মুখোরোচক চালকুমড়ার - মোরব্বা। যা আমাদের দেশের এক বিশাল শিল্প। অনেকেরই রুজিরুটি। তাছাড়া আচার ,বড়ি প্রভৃতি তৈরিতেও চালকুমড়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক অনেক।
আসলে এর প্রয়োজনীয়তাও অনেক ,আর গুণও অনেক ,বলে বোধহয় কখনোই শেষ করতে পারবো না!! ................ও হো হো !ভাবতে ভাবতে কোথায় যে চলে যাই ! রান্নাটাতো সারতে হবে !
নইলে দুপুরে খাবার টেবিলে ..................
বৃষ্টি ভেজা দিন। বাড়িতে বসে মুখররোচক যে কোনো খাবার বড়োই ভালো। আমারও ইচ্ছা আজ খুব টেস্টি টেস্টি করে চালকুমড়ো রাঁধি। মাছের থলিতে কয়েকটা ছাড়ানো মাঝারি সাইজের চিংড়ি দেখেছি। চালকুমড়ো - চিংড়ি রাঁধবো। বৃষ্টির একটু ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় গরম গরম ভাতে ...চালকুমড়ো- চিংড়ি খুব জমে যাবে।
উপকরণ :-
চালকুমড়ো - ১টি খুবই কচি ( খোসা ছাড়িয়ে জলে ধুয়ে নিয়ে ,মিহি করে কুচানো )
চিংড়ি - ৩০০ গ্রাম ( ছোট ছোট টুকরো করে কুচানো )
পাঁচফোড়ন - ১- ১.৫ চামচ
গোটা শুকনোলঙ্কা - ৪টি একটু করে ফাটানো
কাঁচালঙ্কা - ৪-৬টি অর্ধেক করে চেরা
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
প্রথমেই বলি খুব সহজ রান্না। পরিশ্রম খুবই কম। কিন্তু স্বাদে গুনে মেনু অসাধারণ ......!!! কুচানো চিংড়ি মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে নিয়ে একটু নুন মাখিয়ে রাখলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম ফাটানো শুকনো লঙ্কা আর
পাঁচফোড়ন। দিলাম চিংড়িমাছের কুচানো টুকরো গুলো। আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার ভালো করে নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম ,কুচানো চালকুমড়ো,নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি। বেশি আঁচে কয়েকবার ভালো করে নেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম।
কিছুক্ষনের মধ্যে চালকুমড়ো - চিংড়ির সুন্দর গন্ধে মনে ভরে উঠলো। ঢাকা খুলে দেখি রান্না থেকে প্রচুর জল বেরিয়েছে। মনে হলো রান্না প্রায় হয়েই এসেছে। কয়েকটা চেরা কাঁচালঙ্কা রান্নায় দিয়ে দিলাম। রান্নার স্বাদও দেখে নিলাম। আঁচ বাড়িয়ে জল শুকিয়ে চালকুমড়ো ,কুচানো চিংড়ি মাখো মাখো করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে রান্না ঢাকা দিলাম।
দুপুরে খাবার শুরু হলো। চালকুমড়ো - চিংড়ির সুন্দর গন্ধ আর স্বাদে প্রথম পাত জমে তো গেলোই ,কেউ কেউ আসতে আসতে বলে উঠলো ,আর এক .....টু হবে ? খুব ভালো রান্না করে ফেলেছো।
কিচ্ছু করার নেই।আমরা বার বার চাইবোই ..। বড়ো ভালো ....বড়োই ভালো ......
এবার বলি ,আপনারা একবার রান্না করে খেয়ে দেখুনই না।খুবই ভালো লাগবে .......। খুব খুব ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। আনন্দে থাকুন। আর ? আর খুব খুব মজাতেও থাকুন।
Kommentare