তিতলি !!! ছোট্ট মেয়ে তিতলি | সত্যিই যেন এক তিতলি | ছোট্ট দুটি পায়ে প্রজাপতির মতোই চারিদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে বেড়ায় | ছোট্ট মনটা আনন্দে ভরা | তার ছোট্ট মনের চারিদিকে যা দেখে তাই যেন ভীষণ ভীষণ ভালো | -----সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দেওয়া মায়ের মুখটা ,জানলার বাইরের সকালটা ,বেশি দুধ দিয়ে তৈরি মায়ের হাতের চা ,তাকে দেখেই লাফালাফি করা কুকুরের বাচ্চাটা -----সব সব সবকিছু ,আর সবচাইতে ভালো লাগে গুটি গুটি পায়ে চলা তার মিষ্টি ছোট্ট বোন ----মিতলী--কে |
পুজো চলে এলো | '' দুর্গাপুজো ''-----কি মজা ! কি মজা ! সবাই খুশি | নতুন জামা --নতুন জুতো ---নতুন নতুন খাওয়া দাওয়া ---আহা - হা - হা , যেন আনন্দের লুটোপুটি | আকাশে আনন্দ ,বাতাসে আনন্দ ,সবার মনে মনে আনন্দ | তিতলির ও খুব আনন্দ |কিছু বুঝে ও আনন্দ আবার কিছু না বুঝে ও আনন্দ |কিন্তু ঘরে বাইরে সব্বার এতো এতো আনন্দ তেই তার যেন সবচাইতে বেশি আনন্দ | ছোট্ট তিতলি ,সবকিছু না বুঝতে পারলেও ,সবার আনন্দে ভরা মুখটা কিন্তু বুঝতে পারে |আর আনন্দে ভরা মুখগুলো দেখে তার এতো আনন্দ হয় কেন ?------ কিচ্ছু বুঝতে পারে না ----কিন্তু আনন্দ হয় !
তিতলির বাবার বদলির চাকরি | এখন তারা একটা ছোট্ট জায়গায় ,ছোট্ট কোয়ার্টারে থাকে | বাড়ির সামনেই পুজোর প্যান্ডেল | এক চালার খুব সুন্দর মা -দুর্গার মূর্তি |মা - দুর্গার যেন ছেলে -মেয়ে নিয়ে আনন্দে ভরা এক সুন্দর সংসার | তিতলি জানে অনেক অনেক দিন ধরে এখানেই ,এক চালচিত্রে মায়ের পুজো হয়ে আসছে | মায়ের কাঠামোতে প্রথম মাটি দেওয়ার দিন থেকে ----আজ পর্যন্ত , সে যখনই সুযোগ পেয়েছে ,মিতলীর হাত ধরে ছুট্টে গিয়ে পুরো ঠাকুর তৈরির কাজ মন দিয়ে দেখে নিয়েছে | আর মনে কোনো প্রশ্ন এলেই ,উত্তর পাওয়ার তো একটাই জায়গা ! জায়গাটা হলো ----তিতলি - মিতলীর --মা | কেন ? কেননা তিতলি - মিতলীর দৃঢ় বিশ্বাস ---- - তিতলি - মিতলীর মা সব জানে ---!!!
আজ ''দূর্গা - ষষ্ঠী ''| মা বলেছেন ---আজ '' মায়ের বোধন ''| আজ স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরে ,মায়ের মণ্ডপে গিয়ে দূর্গা - মাকে প্রণাম করতে হয় |আর সেই জন্যই মা আজ খুব সুন্দর করে তিতলি আর মিতলীকে সাজিয়ে দিয়েছেন ,পরিয়ে দিয়েছেন নিজের হাতের তৈরি সুন্দর জামা | দুজনে খুব খুশি হাত ধরাধরি করে চললো মণ্ডপে ,মা - দুর্গাকে প্রণাম করতে |
ওমা ! ওরা কারা ? ----এ - যে তিতলি আর মিতলী ! একেবারে পরীর মতো ! কি সুন্দর জামা ! বাঃ ! বাঃ
কে দিয়েছে ? খুব সুন্দর দেখতে | রাস্তায় পা বাড়াতেই একসঙ্গে অনেক অনেক প্রশ্ন |সবার কথা শুনতে শুনতেই ,হঠাৎ , তিতলি যেন একটু গর্বের সঙ্গেই বলে ফেললো -----আমার মা নিজে হাতে আমাদের জন্য তৈরি করেছে -----| খুব ভালো রে ! খুব ভালো ! এবার তাড়াতাড়ি মায়ের মণ্ডপে গিয়ে অনেক অনেক বিদ্যা - বুদ্ধি চেয়ে নে তো |আমাদের মা কিন্তু বড়োই জাগ্রত |
দুই বোনে হাত ধরাধরি করে পায়ে পায়ে এগিয়ে চললো ,মায়ের মূর্তির সামনে | মণ্ডপ পুরো সাজানো হয়ে গেছে | পুজো শুরু হয়েছে | চারিদিকে ফুল .চন্দন ,কর্পূর আর ধূপের গন্ধ |ঢাকের আওয়াজ -----খুব ভালো লাগে ,সঙ্গে কাঁসর ও বাজছে | ডাকের সাজে মায়ের চালচিত্র ঝলমল ঝলমল করছে |ছোট্ট তিতলির আর খুশি ধরে না | ছোট্ট চোখ দুটি দিয়ে যে দিকেই তাকায়-----চোখ আর সরাতে পারছে না | হঠাৎ মনে হলো ----সবাই যে বললো মাকে প্রণাম করে বিদ্যা আর বুদ্ধি চাইতে |
হাত জোড়া করে মায়ের মূর্তির দিকে তাকালো | কি সুন্দর বড়ো বড়ো টানা টানা দুটো চোখ ! হঠাৎই তিতলির মনে হলো চোখ দুটো যেন তার দিকে তাকিয়ে বলছে ,কি রে তিতলি কি চাই ----------? অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের মায়ের মুখটা ভেসে উঠলো | মা বলেছে তিতলি কখনো জোর
করে কারো কিছু চাইতে নেই ,কাউকে বিরক্ত করতে নেই | সবাই খুশি মনে কিছু দিলে খুব আনন্দ করেই তা নিতে হয় |দেখবে তাতেই অনেক আনন্দ | ঠাকুর তো আমাদের সবই দিয়েছেন |
ছোট্ট তিতলির কি মনে হলো কে জানে ? হাত জোড়া করে ,''মা- দুর্গার '' বড়ো বড়ো চোখের দিকে চেয়ে মনে মনে বললো ,মা - দূর্গা আমাদের কিচ্ছু চাইনা |তুমি তো আমাদের সব দিয়েছো ----আর আমরাও খুব খুশি | তুমি ভালো থেকো ,আমরাও ভালো থাকবো |
মায়ের সামনে কথাগুলো মনে মনে বলে ছোট্ট তিতলির মন আনন্দে যেন ডগমগ | জোড়হাতে মাকে প্রণাম করেই ,লম্বা লম্বা পা ফেলে মণ্ডপের বাইরের দিকে এগিয়ে চললো -----| হঠাৎ একটা মিষ্টি নরম গলায় ডাক শুনতে পেলো -----দি ----দি ------ও ------দি ---------দি ------| একি !!! এতো মিতলীর গলা ! তিতলি ঘুরেই দেখে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে মিতলী তার দিকে এগিয়ে আসছে | হাসি হাসি মুখে তিতলি তার বাঁ হাতটা এগিয়ে দিলো ----মিতলী ছুট্টে এসে দু হাতে সেটা আঁকড়ে ধরলো | কত যেন শান্তি ,কত যেন নির্ভরতা |ছোট্ট দুটি বোন তিতলি - মিতলীর যেন অনেক অ------------নেক পাওয়া --------|
Comments