আমাদের বাজারের থলিতে আজ আমাদের সবার খুব খুব পছন্দের , মাঝারি সাইজের একটা ঘটকচু | আমি তো একেবারে অবাক !! অনেক অনেকদিন বাদে | খুব সুন্দর স্বাদের , মুখরোচক স্বাদের এক সবজি | রান্না পাতে পড়লে , জমতে দেরি লাগে না | অপূর্ব স্বাদে জিভ মজে ওঠে | ভাবতে ভাবতে ....হঠাৎ ই , কেন জানিনা দিদার কথা মনে পড়ে গেলো | আসলে দিদার হাতের ঘটকচু রান্না স্বাদে গন্ধে ছিলো.... অসাধারণ .....অসা......ধারণ | আমাদের সবার প্রিয় |
ছোট বেলায় গরমের ছুটি পেলেই সব্বাই মিলে আমরা প্রথমেই পৌঁছে যেতাম মামার - বাড়ি | মামার বাড়ি যাবো ভাবলেই মনে পড়ে যেত ..., সে......ই কথাটা.....মামার বাড়ি ভারী মজা ....কিল - চড় নাই | .....কথাটা সত্যিই তাই | আমাদের দেখেই মামার বাড়ির সব্বাই খুশিতে আনন্দে ছোটাছুটি শুরু করে দিতো | ভেবেই পেতো না , কি করবে ,কি ভাবে আমাদের আদর করবে , যত্ন করবে !! আর আমার দিদা ??
দিদা তো ব্যস্তই হয়ে পড়তো , আমাদের নানা মজাদার টেস্টি টেস্টি , লোভনীয় মেনু তৈরি করে খাওয়াতে ! তৈরি করেও ফেলতো ......আনন্দ করেও খাওয়াতো | আর আমরা সবাই খেতাম , ঘুমুতাম আর খুশিতে-আনন্দে বিভোর হয়ে থাকতাম ! আমার সেই প্রিয় দিদা যে কি সুন্দর চিঙড়িমাছ দিয়ে ঘটকচু রান্না করে আমাদের খাওয়াতো , ভাবলেই মনে হয় যেন , সেই অপূর্ব স্বাদ আমি এখনো পাচ্ছি | অপূর্ব ! অপূর্ব !! অপূর্ব তোমার রান্না !!! আসলে দিদা তুমিই অপূর্ব !!!
আজকের বাজারের থলিতে চিংড়িমাছ ও আছে | ভেবেই ফেললাম , আজকে আবার দিদার মতো করে ঘটকচু - চিংড়ি রেঁধে আমরা সব্বাই মিলে জমিয়ে জমিয়ে খাবো (Ghot - Kochu - Chingri) | আর আমি ছোট্ট বেলার নানা সুখকর কথা একটু নাহয় মনে মনে ভেবেই নেবো | যে কোনো ধরণের কচু ই প্রাকৃতিক মহা - ঔষধ ......অসাধারণ খাদ্যগুণে ভরা | মাঝে মাঝে রান্নাঘরে যে কোনো রকমের কচুর কোনো একটি পদ রান্না হলে , আমাদেরই উপকার | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অনেক বেড়ে যায় | যাহোক , সকালে তো নানা কাজ | কাজগুলো ও শেষ করতে হবে | তাই কাজে লেগে পড়লাম | সকালটাকে গুছিয়ে নিয়ে দুপুরের চিন্তা শুরু করলাম | খুশি খুশি মনে আবার রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম , দুপুরের রান্না সেরে ফেলতে |
উপকরণ :-
ঘটকচু - ১টা মাঝারি সাইজের , সুন্দর করে ধুয়ে নিয়ে , খোসা ছাড়িয়ে ৪ টুকরো করে কেটে নিলাম | এইবার কুড়নি দিয়ে পুরোটা কুড়িয়ে নিলাম
চিংড়িমাছ - ৩৫০ গ্রাম , পরিষ্কার করে কেটেকুটে ধুয়ে , নুন হলুদ মাখানো
পেঁয়াজ -৩টে , খুব খুব ছোট সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে মিহি করে কুচানো
কাঁচালঙ্কা - প্রয়োজনমতো , কুচানো , যে যেমন ঝাল পছন্দ করবেন , তেমনই ব্যবহার করবেন , শুধু কাঁচালংকার ঝালেই রান্নাটা করবো
হলুদগুঁড়ো - ১চা চামচ
কালোজিরে - ১ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো , অবশ্যই লাগবে
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো , সব ধরণের তেলেই রান্নাটা করা যাবে , কিন্তু সর্ষে তেলে রান্নাটা খুব স্বাদের হবে
পদ্ধতি :-
রান্নাঘরে ঢুকেই গ্যাসে একটা কড়াই চাপিয়ে দিলাম | ঘটকচু ভাপিয়ে নিতে , কড়াইতে দিলাম কুড়ানো ঘটকচুটা আর পরিমাণমতো জল | কড়াইয়ের জল ফুটে উঠতেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে একটা ঢাকা দিলাম | খুব অল্প সময়ের মধ্যে , ঘটকচু নরম হয়ে যেতেই গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | জল ঝরিয়ে সেদ্ধ কচু একটা পাত্রে তুলে রাখলাম |
আবার কড়াই পরিষ্কার করে নিয়ে গ্যাসে চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | তেল গরম হয়ে উঠতেই আঁচ কমিয়ে , কড়াইতে দিলাম ১ চামচ মতো কালোজিরে | দিলাম কুচানো পেঁয়াজ আর খানিকটা কুচানো কাঁচালঙ্কা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ মজিয়ে নিলাম | দিলাম ১/২ চামচ মতো হলুদগুঁড়ো , অল্প নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি | চিনি কিন্তু লাগবেই , নাহলে রান্না স্বাদিষ্ট হবে না | যাহোক , আবার শুরু হলো অল্প নাড়াচাড়া | এবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে ঢেলে দিলাম , নুন হলুদ মাখানো চিংড়িমাছগুলো |
বেশি আঁচে , শুরু হলো নাড়াচাড়া | অল্পক্ষন বাদে আঁচ কমিয়ে চিংড়িগুলো একটু মজিয়ে নিলাম | আবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম ভাপানো ঘটকচুটা | সমস্ত উপকরণ ভালো করে কষতে লাগলাম | কিছুক্ষন কষার পর , আঁচ কমিয়ে , একটা ঢাকা দিয়ে রান্না কিছুক্ষন হতে দিলাম | দারুন এক মিষ্টি মিষ্টি , জিভে জল আনা গন্ধে চারিদিক ভরে উঠলো | খুব লোভনীয় !! এবার ঢাকা খুলে রান্না একটু চেখে নিলাম | বাঃ ! বাঃ !! বে....শ তাকতাক হয়েছে তো !! আঁচ বাড়িয়ে
রান্নার জল শুকিয়ে নিলাম | তৈরি হয়ে গেলো ভাজা ভাজা ঘটকচু - চিংড়ি (Ghot - Kochu - Chingri) |
কি ভালো ....কি ভালো যে আমাদের দুপুরের খাওয়াদাওয়া হলো , তা বোধহয় আপনারা বুঝতেই পারছেন | গরম গরম ভাত ...সঙ্গে টেস্টি টেস্টি ঘটকচু - চিংড়ি | আরো কিছু মেনু থাকলেও , অনেকেরই আর কিছু লাগেনি | এক মুখরোচক রান্নাতেই সবাই খুশি সবাই তৃপ্ত ....... আমার দিদা ...জিন্দাবাদ |
ভালো খান , ভালো থাকুন , খুশিতে থাকুন , অনেক অনেক আনন্দে থাকুন |
Комментарии