''গরমের দাবদহে যদি চাও স্বস্তি '' ....''পোস্তর মেনুতে করে নাও মস্তি। '' পোস্ত রান্নাঘরের এমন এক উপকরণ যা বোধহয় বেশিরভাগ বাঙালিরই বড়োই প্রিয়। স্বাদে গুনে একেবারে অসাধারণ।সৃষ্টির আদি কাল এগিয়ে যেতে যেতে একসময় তৈরি হয় সংসার। আসে হেঁসেলের ভাবনা। আর সংসার ,হেঁসেল সামলাতে আসেন সংসারের গৃহিনীরা। সমাজ বুঝে গিয়েছিলো নারীর ক্ষমতা অসীম। সংসার তাদের হাতে থাকলে ,সংসার সুস্থ ভাবে এগিয়ে যাবেই।
বহু বহু যুগ আগে ,এমন এক সময় ছিল ,যখন কন্যা সন্তান জন্মানোর মুহূর্ত থেকেই তাকে বোঝানো
হতো ,তার জন্মই অন্য এক সংসার সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার জন্য। আর ?..... আর তারা সেটাই সম্পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস করে আপ্রাণ চেষ্টা করতো ,তাদের প্রবেশ করা নতুন সংসার কিভাবে সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। রান্নাঘর ছিল তাদের এক আরাধনার জায়গা। সংসার সুখের করতে গেলে ,সংসারের প্রত্যেক সদস্যকে থাকতে হবে সুস্থ আর হাসিখুশি। আর এই কাজে রান্নাঘরের ভূমিকা ছিল অসীম......কারণ সুখের সংসারে রান্না হতে হবে পুষ্টিগুণে ভরপুর আর স্বাদিষ্ট। তাই তাদের অহরহ চেষ্টা চলতো নানা নতুন নতুন সুন্দর সুন্দর রান্নার আবিষ্কার করা আর সংসারকে আনন্দে রাখার।
এখন তো সমাজ অন্য জায়গায় পৌঁছে গেছে। নারী পুরুষ হাতে হাত মিলিয়ে ,কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তবুও এখনো সংসারের কর্ত্রী কিন্তু একজন গৃহিনী। মানে এখনো সমাজ এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী ........সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে।
আজ আমার রান্নাঘরের মেনু ''গোটা পটল পোস্ত''.....কোনো মহোয়সী নারীর রান্নাঘরে কোনো একদিনের আবিষ্কার ,যা ধীরে ধীরে পৌঁছে গেছে বাঙালির প্রতি রান্নাঘরে। গোটা - পটল - পোস্ত এক অসাধারণ স্বাদে ভরপুর রান্না। প্রথম পাতের খাওয়া গরম ভাতের সঙ্গে গোটা - পটল - পোস্ত দিয়ে শুরু হলে ,পরের কোনো মেনুর কথা ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।বরং অতিরিক্ত স্বাভাবিক ..............।
উপকরণ :-
গোটা পটল - ৭৫০ গ্রাম মতো ( গোটা পটোলের খোসা অল্প অল্প ছাড়িয়ে দু দিক একটু করে চেরা )
পোস্ত - ৫০ গ্রাম ( জলে ভেজানো )
কাঁচালঙ্কা - ৪-৫ টি
গোটা শুকনো লঙ্কা - ২টি একটু করে ফাটানো ( ইচ্ছে হলে দেবেন , আবশ্যিক নয় )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
প্রথমেই জলে ভেজানো পোস্ত জল থেকে তুলে দুটো কাঁচালঙ্কা দিয়ে মিহি করে বেটে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে পটোলগুলো ভাজার জন্য পরিমাপ মতো তেল দিলাম। পটল জলে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখলাম। তেল ভালো মতো গরম হলেই আঁচ কমিয়ে কয়েকটা পটল কড়াইয়ের তেলের মধ্যে দিয়ে দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত পটল মুচমুচে করে ভেজে নিলাম। কিন্তু কোনো পটল যেন একটুও পুড়ে না যায়। মুচমুচে হবে অথচ পুড়বে না।
পটল ভাজা হয়ে যেতেই ,কড়াই পরিষ্কার করে আবার গ্যাসে চাপলাম। অল্প পরিমান তেল দিলাম। তেল গরম হলে দিলাম দুটো ফাটানো শুকনোলঙ্কা আর ভাজা সব পটোলগুলো। আঁচ বাড়িয়ে একটু নেড়েচেড়ে ,আঁচ কমিয়ে দিলাম নুন আর চিনি। আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিয়ে দিলাম ,রসার পরিমান ভেবে জল
মেশানো পোস্ত বাটা আর ২-৩টে গোটা কাঁচালঙ্কা । রস টগবগ করে ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে পোস্ত আর পটল মজতে দিলাম।
পটল আর পোস্ত মজে গিয়ে মাখো মাখো হয়ে যেতেই ,রান্নার স্বাদ চেখে দেখলাম। ভীষণ ভীষণ ভালো আর অসাধারণ টেস্টি টেস্টি। ভাজা পটলে পোস্তর গন্ধ---খুব
সুন্দর। দুপুরের খাওয়ার টেবিল জমবেই।
সত্যি সত্যিই আমাদের খাবার টেবিল আনন্দে খুশিতে জমে উঠলো। খুব খুব মজা করে দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।
আপনারাও খুব মজা করে আনন্দ করে খাওয়া দাওয়া করবেন। ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন আর অনেক অনেক আনন্দে থাকবেন।
Comments