কটিলা - খয়রা - ভাপা | Khoyra Bhapa
- Kaveri Nandi
- Mar 23
- 3 min read

কটিলা - খয়রা !! খুব সুন্দর স্বাদের একটি মাছ | বাজারে যে ছোট ছোট খয়রা মাছগুলো দেখতে পাই , তার থেকে একটু লম্বা লম্বা আর একটু হার্ড | গা - ভরা আঁশ | বাজারে আসে ...কিন্তু ,....মাঝে মাঝে !! আমার রান্নাঘরে ও আজ এসেছে , তবে অনেকদিন বাদে | টাটকা কাটিলা - খয়রাগুলো দেখে মন খুশি খুশি হয়ে গেলো | ভাবলাম খুব জমিয়ে একটা মুখরোচক মেনু রাঁধবো | যা সবারই ভালো লাগবেই লাগবে |'' কটিলা - খয়রার - সর্ষে - ভাপা '' !!! গরম গরম ভাতের পাত জমাতে তুলনাহীন | ভাবলেই যেনো জিভে ....লোভে ভরা জল !!

ছোট ছোট সব মাছই , কিন্তু খুবই উপকারী | মাঝে মাঝে ভাতের পাতে থাকলে আমাদেরই উপকার | সহজপাচ্য তো বটেই , উপকারিতার ও কোনো শেষ নেই | চোখ , হাড় কে ভালো তো রাখেই , সাথে সাথে নানা কঠিন রোগের মোকাবিলায় শারীরিক ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় | গরম কালও তো চলে.................ই এলো | এই সময়ে ছোট ছোট মাছের নানা ধরণের মেনু , খেতে যেমন টেস্টি টেস্টি লাগে , তেমনি সহজে হজম হয়ে শরীরকে সুস্থ ও রাখে | আর শরীরের শান্তি , মানে মনেরও শান্তি |

সকালের নানা কাজকর্ম সারতে সারতে রান্নার নানা কাজ ও খানিকটা গুছিয়ে নিতে লাগলাম | মাছগুলো কেটেকুটে আনা হয়েছিল | আমি শুধু ভালো করে ধুয়ে নিয়ে , নুন আর হলুদ মাখিয়ে রেখেছি | ৪-৫ চা চামচ সাদা গোটা সর্ষে একটু কুসুম কুসুম গরমজলে , এক চিমটে নুন দিয়ে ভিজিয়ে দিলাম | এদিকে জলখাবারের ব্যবস্থাও কমপ্লিট | এবার শুধু , খেয়ে নেওয়ার পালা |

আরাম করে প্রাতঃরাশ শেষ করে , আবার ঢুকে পড়লাম আমার প্রিয় জায়গা , আমার রান্নাঘরে | কেন জানিনা রান্না করতে যেমন ভালো লাগে , রান্নাঘরে কিছুটা সময় কাটাতেও খুব ভালো লাগে |
যাহোক শুরু করছি .আজকের স্পেশাল রান্না ...''কটিলা - খয়রা - সর্ষে - ভাপা '' (Khoyra Bhapa)|
উপকরণ :-
কটিলা - খয়রা - ৬০০ গ্রাম , কেটেকুটে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে , নুন - হলুদ মাখানো
সাদা - সর্ষে - ৪-৫ চা - চামচ , জলে ভেজানো
কাঁচালঙ্কা - ৫টি বেটে দেওয়ার জন্য , ৮-৯টা একদম গোটা গোটা রান্নায় দেওয়ার জন্য
হলুদগুঁড়ো - ২-৩ চা - চামচ
লাল - লংকার গুঁড়ো - ১-২ চা চামচ বা নিজের নিজের পছন্দমতো
চিনি - কয়েকদানা , স্বাদ বাড়াতে , ইচ্ছে না হলে নাও দিতে পারেন
নুন - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্নাঘরে ঢুকে প্রথমেই ভেজানো সাদা - সর্ষে , জল ছেঁকে মিক্সিতে নিলাম | নিলাম ৫টা গোটা কাঁচালঙ্কা আর এক চিমটে নুন , মিহি করে বেটে ফেললাম | এবার নুন হলুদ মাখানো মাছগুলো একটা ছড়ানো স্টিলের টিফিন বক্সের মধ্যে নিয়ে নিলাম | বাটা সর্ষে বক্সের মধ্যে ঢেলে দিলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো নুন , কয়েকদানা চিনি , অল্প হলুদ , ১.৫ চা চামচ লাল লংকার গুঁড়ো , প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | মাছগুলোর গায়ে , সব ভা.....লো করে মাখিয়ে দিলাম | সর্ষে বাটার মিক্সিটা ধুয়ে একটু জল বাটির মধ্যে ছড়িয়ে দিলাম | দিয়ে দিলাম গোটা কাঁচালংকাগুলো | তৈরি মাছ - সর্ষে মাখাটা একটু চেখে নিলাম | বাহ্ সব একদম ঠিকঠাক !!

এবার বাটিটা ঢাকা বন্ধ করে দিলাম | গ্যাসে একটা কড়াই চাপিয়ে অল্প একটু জল দিলাম | বাটি কড়াইয়ের জলের মধ্যে বসিয়ে দিলাম | বেশি আঁচে কড়াইয়ের জল ফুটতে শুরু করতেই , আঁচ কমিয়ে সমস্ত কিছুর উপর একটা ঢাকা ও দিয়ে দিলাম | কড়াইয়ের ফোটা জলে মধ্যে থাকা বাটির সর্ষে মাখা মাছ , ভাপে ধীরে ধীরে মজতে লাগলো | কারণ সবকিছু ছাপিয়ে ভাপার সুন্দর গন্ধে চারিদিক যে মো মো ....মো মো করছে | মাঝে মাঝে কড়াইতে দেওয়া জলটুকু দেখে নিয়ে , আবার প্রয়োজনমতো একটু জল দিয়েও দিচ্ছিলাম |

যেহেতু কম আঁচে ভাপা হচ্ছে , তাই একটু বেশি সময় দিয়েই রান্নাটা করলাম | ৩০ - ৪০ মিনিট মতো গ্যাসে কড়াইয়ের মধ্যে বাটি বসানো ছিলো | হয়েই গেছে ভেবে গ্যাস বন্ধ করলাম | একটু ঠান্ডা হতে দিলাম | তারপর কড়াই থেকে বাটি তুলে খুলে ফেলতেই .....আহা আহা কি সুন্দর এক লোভনীয় মিষ্টি মিষ্টি ঝাঁঝাল গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো !!

ঢাকা খুলতেই মনে হলো রান্নার রং টাও দেখার মতো হয়েছে আর রান্নাটাও বেশ মাখো মাখো হয়েছে | দেখলাম ভাপা সর্ষের মধ্যে সাজানো মাছগুলোর গা একটু ফাটাফাটা হয়ে গেছে | বুঝলাম রান্না একেবারে তৈরি | তৈরি আমার ...............অপূর্ব স্বাদে ভরা '' কটিলা - খয়রা - সর্ষে - ভাপা '' (Khoyra Bhapa)!!!

দুপুরে লাঞ্চ টেবিলে , বলতে গেলে প্রায় আমরা সবাই...ইইইইই হৈ হৈ করে খাওয়া শুরু করলাম , গরম গরম ভাতে কটিলা - খয়রা - সর্ষে - ভাপা দিয়ে ....শেষ ও করলাম কটিলা - খয়রা - সর্ষে - ভাপা দিয়ে | আহা - হা - হা ! কি ভালোই যে লাগলো !! স্বাদের আনন্দে জিভ তো লাফিয়ে উঠলোই .....মন - প্রাণ ও ভরে গেলো তৃপ্তির স্বাদে আর তৃপ্তির অনেক অনেক আনন্দে !!! আমার অনুরোধ , যারা যারা ছোট মাছ খেতে পছন্দ করেন ......অন্তত , একবার ....একবার কটিলা - খয়রা - সর্ষে - ভাপা করে কিন্তু খেয়ে দেখতেই পারেন | ভালো লাগবেই লাগবে |
ভালো খান , ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন |
Comments