কাল রাতেই ঠিক করে রেখেছি আজ কষা কষা রসা রসা করে চিকেন রাঁধবো | রবিবারে সবাই বাড়িতে থাকবো | একসঙ্গে জমিয়ে জমিয়ে হবে লাঞ্চ থেকে ডিনার | ভাবতে ভাবতে কখন যেনো নিশ্চিন্তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম | হলো রবিবারের ভোর | ঘুম ভেঙে চা তৈরি ও করে ফেল্লাম | চায়ের কাপে এক চুমুক দিতেই আমি পুরোপুরি চাঙ্গা | সবাই কে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে পৌঁছে গেলাম বাজারের থলিটার দিকে | এর মধ্যে কিন্তু সকালের বাজার ও সারা |
খুশি খুশি বাজারের থলিতে হাত দিয়ে প্রথমেই বার করলাম , এক মুঠো কাঁঠালের বীজ | বাঃ ! বাঃ ! আমি তো একেবারে অবাক !!! কাঁঠালের বীজ !! আমার যে বড়োই প্রিয় !! খুশিতে আনন্দে মন ভরে উঠলো | খাদ্যগুণে ভরপুর কাঁঠালবীজের খাদ্যগুণের কথা জানলে যে রোজ রোজ কাঁঠাল বীজ খেতে ইচ্ছে হতেই পারে | হজম শক্তি বাড়াতে , শরীরে
আয়রন খনিজ পদার্থ , ভিটামিনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এই বীজের কিন্তু কোনো তুলোনাই হয় না |গ্রীষ্ম - বর্ষার সিজনে যখন বাজারে পাকা কাঁঠালের আনাগোনা , তখন তো বাজারে কাঁঠাল বীজের আনাগোনাও শুরু | তাই নিজেকে ভালো রাখতে , পরিবারের সবাইকে ভালো রাখতে মাঝে মধ্যে খাওয়ার পাতে কাঁঠাল বীজের মেনু তো রাখতেই পারি | কি ! তাইতো !!
মাংস রান্না তো করবোই | কিন্তু আজ আমি কাঁঠাল - বীজের একটা পদ রাঁধবোই রাঁধবো | আজকে পেয়েছি | রেঁধে .. আজকেই রাখবো পাতে | আজ রবিবারের দুপুরে আমাদের খাওয়া শুরু হবে কাঁঠাল-বীজের একটা মেনু দিয়ে , আর শেষ হবে কষা কষা চিকেন দিয়ে | ব্যাপারটা মনে হয় একটু বেশিই ভালো হয়ে যাবে | মানে জমে উঠবে !! তাই না !!!!!
ফ্রিজে রাখাই ছিলো খানিকটা কুঁচো চিংড়ি | আর ছিলো অল্প কিছুটা মৌরালা মাছ | মৌরালা মাছগুলো দিলে বেশ মাখো মাখো ও হবে | সব ফ্রিজ থেকে বার করে নরম্যাল তাপমাত্রায় আসার জন্য জলে ভিজিয়ে রাখলাম | রবিবারের সকালে জমিয়ে সারলাম জলখাবারের পাট | খুশিতে খুশিতে শেষ করলাম সকালের কিছু কাজ | এবার ?? এবার শুরু হবে আমার রান্নাবান্না ..........
কাঁঠাল বীজ গুলো দু - ফালা করে কেটে জলে ধুয়ে নিলাম | বেছে রাখা কুঁচো চিংড়ি আর মৌরালা মাছ আলাদা আলাদা ভাবে ধুয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম | হাফ কাপ মতো কুচানো কচি কচি সবুজ ধনেপাতা জলে ভিজিয়ে রাখলাম | একটা ছোট্ট টমেটো কুচিয়ে জলে ধুয়ে নিলাম | কুচিয়ে রাখলাম খোসা ছাড়ানো ৪-৫টা ছোট ছোট পেঁয়াজ , কুচিয়ে নিলাম ৪-৫টা রসুনের কোয়া আর লম্বালম্বি চিরে রাখলাম কয়েকটা সবুজ কাঁচালঙ্কা | আজ অব্শ্যই আমার প্রথম রান্না কাঁঠাল বীজ - কুঁচো চিংড়ির কড়াই চচ্চড়ি (Kanthal seeds - Prawn - Chorchori) | এই রান্না চাপিয়ে দিয়ে বাকি রান্নায় দেবো মন |
উপকরণ :-
কাঁঠাল বীজ - মুঠো খানেক
কুঁচো চিংড়ি - ১ কাপ মতো
ছোট ছোট মৌরালা মাছ - ১/২ কাপ মতো
ধনেপাতা - কুচানো ১/২ কাপ
টমেটো - ছোট্ট ১টা , ছোট ছোট করে কুচানো
কাঁচালঙ্কা - নিজের নিজের পছন্দমতো , লম্বালম্বি চিরে রাখা
পেঁয়াজ - ছোট ছোট ৪-৫টা
রসুনের কোয়া - ৪-৫টা
হলুদগুঁড়ো - ১চামচ থেকে ১.৫ চামচের মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - কয়েকদানা , স্বাদে চটক আনতে
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো , এই রান্নায় সর্ষের তেলই কিন্তু প্রয়োজনের তেল
পদ্ধতি :-
রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছি | রান্না শুরুর সব উপকরণ ও হাতের কাছে | তাই আর দেরি নয় | একটা পরিষ্কার কড়াই নিলাম | কড়াইয়ের মধ্যে একে একে রাখলাম , কুচানো পেঁয়াজ , কুচানো রসুন , ধুয়ে রাখা কাঁঠালের বীজগুলো , নুন - হলুদ মাখানো কুঁচো চিংড়ি , নুন - হলুদ মাখানো অল্প ছোট ছোট মৌরালা মাছ , জলে ধোওয়া কুচানো টমেটো , জলে ধোওয়া জল ঝরানো কুচানো ধনেপাতা , কেটে রাখা কাঁচালংকাগুলো ,
প্রয়োজনমতো হলুদগুঁড়ো , কয়েকদানা চিনি আর প্রয়োজনমতো নুন আর অবশ্যই প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | কোনো জল নয় কিন্তু ....একদম নয় .....
সমস্ত কিছু হালকা হাতে কড়াইয়ের মধ্যে ভালো করে মিশিয়ে নিলাম | বেশি আঁচে গ্যাসে কড়াই চাপলাম | কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালোমতো গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে , একটু নেড়ে চেড়ে নিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম | এর মধ্যেই সুন্দর জিভে জল আনা গন্ধ যেনো চারিদিকে ছোটাছুটি করছে | উফঃ !! কি দারুন !! খুব খুব খুশি খুশি লাগছে | একদিকে
রান্না মজছে | আর অন্যদিকে আমি ও অন্য কাজে ব্যস্ত | মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে কাঁঠাল বীজ - কুঁচো চিংড়ির কড়াই চচ্চড়ি হালকা হাতে নেড়ে দিয়ে আবার ঢাকা দিতে থাকলাম | রান্না ভালোভাবে মজে গিয়েছে মনে হতেই রান্নার স্বাদ চেখে নিলাম | অপূর্ব !! সত্যিই অপূর্ব !! কি করে বোঝাবো ?? বুঝতে গেলে যে একবার খেতেই হবে | গ্যাস বন্ধ করে রান্না একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে ঢাকা দিলাম | খুলবো একেবারে খাবার টেবিলেই |
বাকি রান্নাবান্না সব সেরে নিয়ে অবশেষে সবাই পৌঁছে গেলাম লাঞ্চের টেবিলে | গরম গরম ভাতে কাঁঠাল বীজ - কুঁচো চিংড়ির কড়াই চচ্চড়ি বড়োই ভালো লাগছিলো | এক্কেবারে ফাটাফাটি !!! ওহ হো হো ..চটপটা স্বাদে মুখ যেনো ভরে যাচ্ছিলো | সবার মনোযোগই নিজের নিজের পাতের দিকে | একমনে সবাই খেয়ে চলেছে | দু - একজন তো মাংসের বাটির দিকে তাকালোই না | আবার চেয়ে নিলো কাঁঠাল বীজ - কুঁচো চিংড়ির কড়াই চচ্চড়ি (Kanthal seeds - Prawn - Chorchori) | খাওয়া এগিয়ে চললো | আমার ও আজ , আমার প্রিয় কাঁঠাল বীজ - কুঁচো চিঙড়ির কড়াই চচ্চড়ি দিয়েই খুশি খুশি মনে খাওয়া শেষ হলো | আজ আমার বাড়ির সবাই খুশি, তাইতো.আমিও খুশিশিশিশিশিশিশি ...............
খুশি খুশি থাকুন | সুস্থ থাকুন | ভালো থাকুন | আনন্দে থাকুন |
Comments