top of page

ইস্কুল - শুরু


তিতলি - মিতলীর মা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ,তিতলির স্কুল যাওয়া নিয়ে --- না ! না ! আর দেরি করা যাবে না | তিতলি বেশ বড়ো হয়ে গিয়েছে | ঠিক ঠিক সময়ে পড়াশোনা শুরু করতেই হবে | আর শুরু ঠিক হলে তবেই তো পড়াশোনা ভালো হবে |সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা -----| না ! না ! চিন্তা টা বেশ বেড়ে যাচ্ছে যে ----একদম ভালো কথা নয় ----|


চিন্তা করতে করতে তিতলির মা কথাটা ,তিতলির বাবাকে বলেই ফেললেন | খেয়াল করেছেন তিতলির বাবার এদিকে তেমন কোনো খেয়ালই নেই |তিতলির বাবা দুপুরের শিফটে অফিস যাবেন | খেতে বসেছেন | কোলে বসে আছে ছোট্ট মিতলী | বাবা খেতে বসলেই ,গুটি গুটি পায়ে বাবার কোলে চড়ে

বসে | খুব ছোট্ট তো ,বাবার কোলে নিয়ে খেতে কোনো কষ্টই হয় না | আর তিতলি একটু দূরে বসে পুতুলের শাড়ি গোছাতে ব্যস্ত |


বাবা মাকে বললেন --'',কিন্তু তিতলি তো খুবই ছোট |'' মা একেবারে অবাক হয়ে বললেন ''ছোট ? কোথায় ছোট ! এই তো সামনের বৈশাখেই চার বছর হবে |এখনই তো ঠিক ঠাক সময় | এখন থেকে ইস্কুলে পড়া শুরু করলে , পড়াশোনাতে মন বসে যাবেই |'' বাবা শুনে বললেন ঠিক আছে ,নতুন বছরের ক্লাস শুরুর প্রথমেই ,তিতলিকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দেবেন |


তিতলি দূরে বসে সব শুনছিলো আর মা - বাবাকে দেখছিলো | অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে ,তিতলির ইস্কুল যাওয়া নিয়ে বাবার রাজি হওয়াতে মায়ের চোখে জল আর মুখে আনন্দের হাসি | তিতলি কে যে অনেক পড়া মা শিখিয়ে দিয়েছেন |একমনে মা ঘরের সব কাজ করেন ,আর তারই মাঝে মাঝে তিতলিকে সেখান নানান ছড়া, পড়ান আর লেখান ----অ-আ -ই -----,১ এ চন্দ্র -২ এ পক্ষ - ৩ এ নেত্র ----------,শোনান নানা গল্প ,নানা গান ,রামায়ণ ,মহাভারতের কথা ----------অনেক অনেক কিছু | তাই

তিতলি ইস্কুলে যেতে একটু ও ভয় পায় না ,সে তো মায়ের কাছেই স ------ব শিখে নিয়েছে | সে ইস্কুল যেতে রাজি | খুশি খুশি মনেই রাজি |


আর একটা বিষয়ে তিতলি কিন্তু একটু একটু শুনেছে |সেটা হলো --তিতলি রা পিঠোপিঠি তিন ভাই - বোন |তিতলি -মিতলী - আর ছোট্ট ভাই | ঘরের সব কাজ কর্মের মাঝে ,তাদের তিনজনের দিকে মাকে সব সময়েই নজর রাখতেই হয় | একজন কিছুক্ষন ইস্কুলে থাকলে ,মা অন্তত খানিকটা নিশ্চিন্ত |তিতলি মাকে ভীষণ ভালোবাসে | তাই মাকে ভালো রাখতে ,খুশি রাখতে সে বাবার হাত ধরে ইস্কুলে ভর্তি হতে যাবেই যাবে|


অবশেষে সেই পরীক্ষা দেওয়ার দিনটা চলে এলো | মা তিতলি কে জামা জুতো পরিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন | বার বার বলছেন ,''কোনো ভয় নেই -----কোনো ভয় নেই ----ইস্কুলে গিয়ে মাষ্টারমশাইকে প্রণাম করে ,সামনে যারা গুরুজন থাকবেন সব্বাইকে প্রণাম করে ,ভালো করে মাষ্টারমশাইয়ের প্রশ্ন গুলো শুনে উত্তর দিও '' |তিতলি মনে মনে তৈরি |বাবার হাত ধরে ইস্কুলের পথে চললো |বাবার কোলে কিন্তু ছোট্ট মিতলী |হাঁটতে ভালো পারে না | কিন্তু কথা কম কম বললেও ,যেটুকু বলে ,একেবারে পরিষ্কার উচ্চারণ |আর বড়ো দিদি তিতলি ? হাঁটতে বললে ,ছুট্টে যায় ,কিন্তু কথা একেবারেই আদো আদো -----| তাই তো মায়ের এতো চিন্তা |



স্কুলের গেট এসে গেছে | ছোট্ট ইস্কুল | বাবা তাদের নিয়ে এক মাষ্টার মশাইয়ের ঘরে ঢুকলেন | মাষ্টার মশাই সব শুনে বাবাকে বসতে বললেন ,বললেন ,ঠিক আছে -ঠিক আছে চিন্তার কিছু নেই ,তবে তিতলি কে কয়েকটা মুখে মুখে প্রশ্ন করবেন -------বাবা রাজি |শুরু হলো প্রশ্ন ---প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে মাষ্টারমশাই উত্তর ও পেতে লাগলেন | কিন্তু একী ? -----তিতলি তো একটাও উত্তর দেয়নি -----| তবে এতো তাড়াতাড়ি উত্তর এলো কোথা থেকে ?-----অবাক কান্ড ! সব উত্তর দিয়েছে মিতলী | ছোট্ট তিতলি একেবারে হতবাক -----তাকে শেখানো মায়ের পড়া গুলো কখন সবার অজান্তেই মিতলীও শিখে ফেলেছে |


মাষ্টারমশাই তো বেজায় খুশি |খুশি খুশি মুখে বলে উঠলেন --''-বাঃ ! বাঃ ! খুব সুন্দর ! আপনার দুই মেয়েকেই আমি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে নিচ্ছি '' |কিন্তু --- কি ? কি শুনছে তিতলি ? সে না দিদি ! মিতলীর বড়ো দিদি ! আর মিতলীর সঙ্গে একই ক্লাসে পড়বে ? হঠাৎ একটা তীক্ষ্ণ কচি গলার প্রতিবাদ ------''না --না ---না --আমি মিতলীর সঙ্গে এক ক্লাসে পড়বো না --না --না ---না'' | তারপরেই কিছুক্ষন বাদে জল ভরা চোখে ,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ,খুব আস্তে আস্তে বলে উঠলো ,''আমি যে মিতলীর দিদি ''|


হৃদয়বান ,বুদ্ধিমান মাষ্টার মশাই যেন এক মুহূর্তেই পুরো ব্যাপার টা বুঝে ফেলেছেন ------হাঁক পারলেন ---''সুবিনয়-- ক্লাস ২ এর বাংলা বইটা আনো তো ''| বই এসে গেলো -----মাষ্টারমশাই তিতলি কে

কোলের কাছে টেনে নিয়ে বললেন -----'' তুমি একেবারে ঠিক বলেছো -মা |দিদি কখনো বোনের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়তে পারে ? খুব অন্যায় ---খুবই অন্যায় ''| বইয়ের একটা পাতা খুলে তিতলি কে বললেন ---''আমাকে একটু পরে শোনাও তো ''| মা বলেছিলো'' তিতলি তুই সব জানিস ,কখনো ভয় পাবি না''| মায়ের মুখটা ভাবতে ভাবতেই তিতলি কি সুন্দর ----পুরো বইয়ের পাতাটা পরে ফেললো |


'' অপূর্ব ! অপূর্ব ! আপনার দুই মেয়েই অপূর্ব !'' মাষ্টারমশাই আনন্দে খুশিতে বাবাকে বলে উঠলেন |বললেন --''আজ থেকে তিতলি আমার ক্লাস -টু এর ছাত্রী আর ? আর মিতলী আমার ক্লাস -ওয়ানের ''|হয়ে গেলো তিতলি - মিতলী ইস্কুলে ভর্তি | মা তো শুনে একেবারে অবাক ! আনন্দে আত্মহারা !------


আনন্দ হবে না !! মায়ের শেখানো যে সার্থক হয়েছে |খানিকটা ইচ্ছা পূরণ ও হয়েছে |মা যে জানেন ,যতো তাড়াতাড়ি লেখাপড়া শুরু , ততোই ভালো | নারীশিক্ষার বড়োই প্রয়োজন | আর মায়ের সবচাইতে বড়ো ইচ্ছা ,তার তিতলি - মিতলী স্বাবলম্বী হয়ে ,মাথা উঁচু করে জীবনের পথে এগিয়ে যাক |

3 views0 comments

Comments


bottom of page