হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো | বিছানায় শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগছিলো না | বিছানা ছেড়ে এসে ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম | বাঃ !! শান্ত আকাশ - বাতাস - পথ - ঘাট ......কি সুন্দর যে লাগছে !! মন যেন খুব খুব ভালো হয়ে যাচ্ছে | ভোরের আলো ফুটতে তখন ও একটু বাকি | মনে মনে ভাবলাম অনেকদিন তো বাজারের পথে হাঁটা হয়নি | আজ আমিই বাজারটা সেরে আসি | আজ ছুটির দিন | সবাই একটু বেশিক্ষণই ঘুমোবে | সারা সপ্তাহের ব্যস্ততা , সবাই একটু আরাম করুক |
তৈরি হয়ে , মেইন দরজায় ডুপ্লিকেট চাবি লাগিয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লাম | কেউ বুঝতেই পারলো না | সবাই গভীর ঘুমে ......| আসল চাবি , নিজের জায়গাতেই ঝুলতে লাগলো | ভোরের আলো ফুটে , রাতের অন্ধকার আর নেই | রাস্তায় পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে বেশ ভালো লাগছিলো | উপভোগ করছিলাম | বাজারের ঢোকার মুখেই দেখি বেশ বয়স্কা এক ভদ্রমহিলা ঝুড়িতে কয়েক আঁটি শাক নিয়ে বসে আছেন | দেখে তো মনে
হলো শুশনি শাক | যাহোক শাকের ঝুড়ি পার হয়ে দু পা এগোতেই পেছন থেকে ডাক এলো ....'' অ ....দিদিমনি , অ......দিদিমনি শাক লিবি না ....শুশনি শাক লো '' !!!!!দু -পা এগিয়েও , আবার দু পা পিছিয়ে চলে এলাম শাকের ঝুড়ির সামনে | সত্যিই শাকগুলো দেখেই মনে হচ্ছে খুব টাটকা আর কচি কচি | মহিলার দিকে তাকিয়ে দেখি দারুন এক মিষ্টি হাসি নিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে , চোখে চোখ পড়তেই বলে উঠলেন , '' খেতে খুব ভালো , খেলে ভালো ঘুম ও হয় বটে , লিয়ে লে ...লিয়ে লে.....''
শুনেই চমকে উঠলাম , আমাকে দেখে কি বুঝে ফেলেছেন , আজ আমার ভালো ঘুম হয়নি | আমিও হাসি হাসি লাজুক লাজুক মুখেই ....দু আঁটি শুশনি শাক কিনেই ফেললাম | ভদ্র মহিলা তো বেজায় খুশি ! মনে হয় এটা তাঁর আজকের প্রথম বউনি | বাকি আরো কিছু বাজার সেরে , বাড়ির পথে চললাম | ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলেই ঘরে ঢুকলাম | এখনো সব্বাই বিছানায় | হাত - পা ধুয়ে নিয়ে বাজার পৌঁছে
দিলাম আমার রান্নাঘরে , আমার পূজা মন্দিরে| এখন চা জলখাবারের ব্যবস্থপনায় মন দিলাম | একে একে সবাই বিছানা ও ছাড়লো | জমিয়ে জমিয়ে চা - জলখাবারও সারলো | আমিও এবার নিশ্চিন্তে বাজারের থলির দিকে এগোলাম | সব বাজার, থলি থেকে একে একে নামিয়ে গুছিয়ে গুছিয়ে রাখলাম | বার করে নিয়েছি শুশনি শাক ও (Susni - Shak - Susuni - Sag) | দারুন স্পেশাল স্বাদের এক শাক | ঔষধীগুনে ভরপুর | গ্রামে গ্রামে জলা ধানিজমিতে , জমির আলের ধারে ধারে , অনেকটা জায়গা ধরে ( যতদূর চোখ যায় ) সবুজ শুশনি শাকে ভরে থাকে | চার পাতার শাক |কখনো মনে হয় , একগুচ্ছ সবুজ ফুল , তো কখনো মনে হয় এক ঝাঁক সবুজ প্রজাপতি | দারুন দারুন দেখতে লাগে | আমি দেখেছি , শখ করে শুশনি শাক জল থেকেও তুলেছি !!! মনে পড়তেই খু.....ব ভালো লাগলো | যাহোক এখন চিন্তা ভাবনার দেশ থেকে ফেরা যাক !! কাজগুলো তো সব সারতে হবে !! তাই চিন্তার জগৎ ছেড়ে এবার কাজের জগতে পৌঁছে গেলাম | শাকের পাতাগুলো ডাঁটি থেকে ছাড়িয়ে বেছে বেছে রাখলাম | সব পাতা বেছে নিয়ে একটু কুচিয়ে নিলাম | কুচানো শাক জলে ভিজিয়ে দিলাম | প্রথমেই শাক রান্নাই করবো | পোস্ত ভাজা দিয়ে শুশনি শাক রান্না | দারুন মুখরোচক হয় | সুন্দর এক স্বাদে মুখ ভরে ওঠে | খুব খুবই ভালো লাগে |
উপকরণ :-
শুশনি শাক - ২ আঁটি , বেছে নিয়ে , কুচিয়ে জলে বাজানো
রসুন - ছোট সাইজের একটা , কোয়াগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে , মিহি করে কুচিয়ে রাখা
কাঁচালঙ্কা - চেরা ৪-৫টি
পোস্ত - ২-৩ চা চামচ
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টো , একটু করে ফাটানো
পাঁচফোড়ন - ১/২ চা চামচ
কালোজিরে - ১/২ চা চামচ
হলুদগুঁড়ো - ১/২ চা চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমেই গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে , শুকনো খোলায় পোস্ত নেড়েচেড়ে মুচমুচে করে ভেজে তুলে রাখলাম | এবার কড়াইতে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে ফোরণে দিলাম ২টো শুকনোলঙ্কা , ১/২ চামচ পাঁচফোড়ন , ১/২ চামচ কালোজিরে , ২টো চেরা কাঁচালঙ্কা আর কুচানো রসুনগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে দিলাম জল ঝরিয়ে কুচানো শুশনি শাকগুলো | বেশি আঁচে নাড়তে নাড়তে দিলাম অল্প হলুদের গুঁড়ো , অল্প নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি | চিনি দিতেই হবে | তা না হলে খাওয়ায় মজা আসবে না |
কড়াইতে একটা ঢাকা দিয়ে আঁচ কমিয়ে শাক মজতে দিলাম | একটু পরেই ঢাকা খুলে দেখি শাক থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে , শাকের জলেই শাক সেদ্ধ হচ্ছে | দিয়ে দিলাম বাকি কটা , চেরা কাঁচালঙ্কা | আবার ঢাকা দিয়ে শাক আরো কিছুক্ষন হতে দিলাম | শাক সেদ্ধ হয়ে গেছে মনে হতেই , ঢাকা খুলে , আঁচ বাড়িয়ে শাকের জল শুকিয়ে নিতে
লাগলাম | তাক ..... ঠিক ঠাক হয়েছে কিনা , একটু চেখে তা দেখেও নিলাম | শাক ভাজা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে তাই , ভাজা পোস্তর দানাগুলো শাকের উপর ছড়িয়ে দিলাম | আলতো হাতে খুন্তি দিয়ে শাক আর পোস্ত ভালো করে মিশিয়ে নিতে লাগলাম | রান্না হয়ে গেছে মনে হতেই গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | পোস্ত ছেটানো শুশনি শাক ভাজা একটা পাত্রে ঢেলে নিলাম | ঢাকা দিলাম | ঢাকা খুলবো একেবারে লাঞ্চ টেবিলে |
অসাধারণ স্বাদের মুখরোচক শুশনি শাক দিয়ে মেখে ভাত মুখে দিতেই , সবাই যেন একসঙ্গেই চেঁচিয়ে উঠলো বাঃ! বাঃ !অসা...........ধারণ (Susni - Shak - Susuni - Sag) !! অসাধারণ লাগছে !! একেবারে ফাটা......ফাটি .......!! ভাজা পোস্ত ছড়ানো শুশনি শাক ভাজা সত্যিই স্বাদগুণে অপূর্ব !! আর সেই অপূর্ব স্বাদের আনন্দের বর্ষণে ,যেনো মুখর আমাদের আজকের লাঞ্চ টেবিল!!!!!
আপনারাও অনেক অনেক আনন্দে থাকুন | ভালো খান | ভালো থাকুন আর সুস্থ থাকুন |
Comments