সকালে আজ একটু তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙে গেলো। বাইরে তাকিয়ে দেখি ভোরের সূর্য এখনো উঁকি দেয়নি। তবে ওয়েদার কেমন যেন একটু মেঘলা মেঘলা।সূর্য আজ উঠবে কি ? তাকিয়ে দেখি সবাই ঘুমাচ্ছে।যাক অনেক কাজই আমার এগিয়ে যাবে। ধীরে ধীরে সবাই উঠে দেখে আজ আমার চা - জলখাবার রেডি। সবাই মজা করে বললো ....তুমি তো আজ গুড - গার্ল ! কিন্তু দুপুরে কি স্পেশাল মেনু রাঁধছ ?বললাম দেখি .........
কিছুক্ষনের মধ্যে বাজারও এসে গেলো। সবজি বাজার গুছিয়ে রেখে ,মাছের ব্যাগে হাত দিলাম। খুলেই মনটা আনন্দে ভরে গেলো। প্রথমেই হাতে পেলাম ,ছোট ছোট একেবারে টাটকা কয়েকটা পাবদা মাছ। মাছের গা একেবারে রুপোর মতো চকচক করছে। খুব সুন্দর দেখতে। মাছগুলো কি ভাবে রান্না করলে ভালো হবে .......ভাবতে ভাবতে মনে হলো , যদিও ওয়েদার একটু চাপা চাপা ,তবুও এই টাটকা পাবদা মাছগুলো সর্ষে বাটায় কষিয়ে রাঁধবো। ভীষণ টেস্টি টেস্টি হবে। গরম গরম ভাতে খেলে ,সবার মুখ স্বাদে ভরে যাবে।
মাছ প্রিয় বাঙালিরা জানেন,পাবদা মাছের জনপ্রিয়তা তাদের কাছে কতখানি। রুই - কাতলা তো মাছের রাজাই ,কিন্তু যে কোনো অনুষ্ঠানে পাবদা ,গলদা ,ইলিশ,ভেটকি .....মাছগুলোর একটা স্পেশাল জায়গা থেকেই যায়। বাড়িতেও ইলিশ ,পাবদা ,গলদা প্রভৃতি মাছগুলো এলেই সবার যেন স্পেশাল আনন্দ। জলখাবার খেয়ে নিয়ে দুপুরের রান্নায় মন দিলাম। পাবদা রাঁধার জন্য পরিমাপ মতো গোটা সর্ষে জলে ভিজিয়ে দিলাম।
উপকরণ :-
পাবদা মাছ - ৬০০ গ্রাম ( ১২টা, পরিষ্কার করে কাটা )
গোটা সর্ষে - ২৫ গ্রাম
হলুদ - ২ চামচ মতো
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১- ১.৫ চামচ
কাঁচালঙ্কা - ৬-৭টি ( ২-১টি একটু ভাঙা ,বাকি গুলো গোটা )
পাঁচফোড়ন - ১- ১.৫ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নুন আর হলুদ মাখালাম। মাছ গুলো খুবই টাটকা ,আর খুব পরিষ্কার । গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল ভালোমতো গরম হলেই ,আঁচ কমিয়ে ৩-৪টি মাছ কড়াইতে দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মাছ কড়া করে ভাজতে লাগলাম। মাছ ভাজতে ভাজতে মিক্সিতে জল ঝরিয়ে ভেজা সর্ষে গুলো নিয়ে মিহি করে বেটে রাখলাম। এদিকে সব মাছগুলো ভেজেও ফেললাম।
মাছ ভাজা হতে ,ওই তেলের মধ্যেই প্রয়োজনমতো তেল দিয়ে ,তেল গরম হতে দিলাম। তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে দিলাম বাটা সর্ষে ,২-৩টি ভাঙা কাঁচালঙ্কা ,হলুদ ,নুন ,২-১ দানা চিনি ,প্রয়োজন মতো লাল লঙ্কাগুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ নাড়তে লাগলাম। মশলা ভাজার গন্ধ বেরিয়ে ,মশলা থেকে পুচপুচ করে তেল বেরোতেই ,কেমন মাছের রসা রাখবো ,সেই ভেবে আঁচ বাড়িয়ে নিয়ে কড়াইতে জল দিলাম।
সর্ষের রসা ফুটে উঠতেই ভাজা মাছগুলো আর কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা কড়াইতে দিয়ে দিলাম। বেশি আঁচে রসা ফুটতে ফুটতে ,একদম মাখা মাখা হয়ে আসতেই ,রসার স্বাদ দেখে নিলাম। সব ঠিকঠাক আছে মনে হতেই গ্যাস থেকে রান্না নামিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম ।
দুপুরে সবাই খাবার টেবিলে। ধীরে ধীরে খাবার পরিবেশন করছি। খাওয়ার শেষ পাতে দিলাম পাবদা - সর্ষে। সবাই মুখে দিয়েই ,মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ,বললো ওঃ কি রেঁধেছ গো। মিষ্টি মাছের সর্ষে ঝাল খেয়ে মন ভরে গেলো। এতো সুন্দর স্বাদ হয়েছে ! ভীষণ টেস্টি টেস্টি। নানা কথা বলতে বলতে সবাই আনন্দ করে খেয়ে চলেছে। দেখে বড়োই আনন্দ লাগলো । সবাই খুশি তো ,আমি অনেক অনেক বেশি খুশি ...........
খুশি মনে আনন্দ করে সব্বাই ভালো থাকুন। আর একটা খুব জরুরি কাজ .....অবশ্যই সুস্থ থাকা।
Comments