শীত ঋতুর শেষে ......গ্রীষ্ম ঋতুর শুরুর মাঝে , শীত - গরমে মাখামাখি এক ঋতুকে ,আমরা বাংলার সব্বাই খুবই পছন্দ করি ..........আর সেই পছন্দের ঋতু হলো বসন্ত ঋতু ....বসন্তকাল !!! খুব খুব আরামদায়ক ঋতু | না শীত বেশি ....না গরম বেশি | বড়োই সুন্দর আর মনোরম ওয়েদার | ঘরে ঘরে বীণাপাণির আরাধনায় আর হোলির সুন্দর
সুন্দর রঙে এই ঋতু যেন মুখরিত হয়ে ওঠে | নানা উৎসবের খুশিতে ছোট - বড়ো সবাই মেতে ওঠে |
ঠান্ডা চলে গিয়ে , ধীরে ধীরে গরম প্রবেশ করার এই সময়টাতে ....হঠাৎ হঠাৎ সর্দি- কাশি - জ্বর জ্বালার ভয় তো রয়েইছে , তাছাড়া হাম - পক্সের মতো নানা কষ্ট দায়ক রোগের প্রভাবও এই সময়ে হয়ে থাকে | কিন্তু সবার প্রথমে আমাদের শরীর কে সুস্থ রাখতেই হবে | আর তার জন্য তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই হবে | সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রকৃতি - মা ....প্রকৃতির মধ্যেই নানা ভাবে ,নানা রূপে ,নানা প্রতিষেধকের ব্যবস্থাও করেই রেখেছেন | শুধু চিনে নিতে হবে ....খাদ্য হিসাবে গ্রহণ ও করতে হবে | তাহলে ইমিউনিটি তো বেড়ে যাবেই .....রোগ ও ভয়ে দূরে ....বহুদূরে পালিয়ে যাবে |
এই বসন্তকালে প্রায়ই রাস্তার ধারে ,ছোট ছোট সাদাফুলে ভরা দারুন এক গাছ দেখতে পাই | পাতা নেই ,শুধু ফুলে ফুলে ভরা | যেন প্রকৃতির গড়া অনেক অনেক বড়ো বড়ো ফুলের তোড়া | একটু এগিয়ে গ্রামে - গঞ্জে গেলেই দেখা যাবে রাস্তার দুধার ভরে আছে এই তোড়ায় তোড়ায় | মনে হয় ,আমাদের স্বাগতম জানাতেই যেন এই সাজ - সজ্জা | আহা - হা - হা .....কি অপূর্ব ! ....কি অপূর্বই না লাগে | আর এই ফুলে ফুলে ভরা গাছগুলো আমাদের সবার পরিচিত সজনের - গাছ |
সজনে গাছের এই সাদা সাদা ফুল ,সজনে গাছের ডাটা হাম - পক্সের মতো কঠিন রোগের প্রতিরোধে ..এক মহৌষধ | প্রকৃতি - মায়ের মহা - অবদান |
সজনে ফুল ,সজনে ডাটা .....সবই বাঙালির ভীষণ ভীষণ প্রিয় | এই সময়ের মেনুতে মাঝে মাঝেই থাকে সজনে ফুল বা সজনে ডাটার নানা মুখরোচক রান্না - বান্না | আজ আমার রান্না ঘরে এসে গেছে সজনের ফুল | আমার খুবই প্রিয় .....অবশ্যই বাড়ির সবার ও খুব খুব প্রিয় | ভৱলাম আজ সজনের ফুল বেশ ভাজা ভাজা করে রাঁধবো | গরম ভাতে ,খাওয়ার শুরুটা দারুন হবে |সঙ্গে দেবো একটা বেগুন ,আর ভেজে নেওয়া কিছু ভাঙা বড়ি | ওহ - হো - হো ......ভীষণই এক স্বাদিষ্ট মেনু |
উপকরণ :-
সজনের ফুল - ২৫০ গ্রাম ( ভালো করে ছাড়িয়ে নিয়ে ,জলে ধুয়ে ,জল ঝরিয়ে রাখা )
বেগুন - ১টা ,মাঝারি সাইজের ( প্রথমেই জলে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ,ছোট ছোট ডুমো ডুমো করে কেটে রাখা)
কাঁচালঙ্কা - ৩-৪ টি ( অর্ধেক করে চিরে রাখা )
গোটা বড়ি - ১০ - ১২ টা
গোটা শুকনোলঙ্কা - ১টি বা ২টি ( একটু করে ফাটানো )
পাঁচফোড়ন - ছোট চামচের ১ চামচ
হলুদ - ১/২ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে ,দিলাম বড়িগুলো |ভেজে তুলে রাখলাম | এবার আঁচ বাড়িয়ে রান্নার প্রয়োজনমতো কড়াইতে অল্প তেল দিলাম | তেল গরম হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে দিলাম গোটা শুকনোলঙ্কা ,২-১ টা চেরা কাঁচালঙ্কা ,আর পাঁচফোড়ন | তেল গরম হলে আঁচ বাড়িয়ে দিলাম ডুমো ডুমো করে কাটা বেগুনের টুকরোগুলো , সামান্য গুঁড়ো হলুদ ,নুন আর চিনি |
বেশি আঁচে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে কড়াইতে দিলাম সজনের ফুলগুলো আর কয়েকটা অর্ধেক করে কাটা কাঁচালঙ্কা |আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সজনের ফুল ভাজতে ভাজতে ,ভাজার সুন্দর গন্ধ বার হতেই ,ভাজা বড়িগুলো ভেঙে ছোট ছোট টুকরো করে ,কড়াইতে দিয়ে দিলাম | এবার আবার কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ,আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে হালকা হাতে নেড়েচেড়ে নিলাম |
সজনের ফুল আর বেগুনের টুকরো ভাজা ভাজা হয়ে এসেছে মনে হতেই রান্নার স্বাদ চেখে দেখলাম | বাঃ ! বাঃ ! .......বড়োই মধুর ! বড়োই মধুর ! গরম গরম ভাত ...সঙ্গে সজনের ফুল ভাজা ...আহা..হা ...হা ..খাওয়ার শুরুটা হবে দারুন স্বাদের | আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ নেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম |
দু - মিনিটে রান্না ..... মুখরোচক সজনের ফুল ভাজার রান্নায় ....কথাটা একেবারে ঠিক | যেন চাপালাম আর নামালাম | বলতে যা সময় লাগে .......তার আগেই রান্না শেষ .......| তাড়াতাড়ি ....অথচ স্বাদে ভরা আর খুব লোভনীয় |
যথারীতি দুপুরে খাবার টেবিলে উপস্থিত আমরা সব্বাই | টেস্টি টেস্টি মুখরোচক সজনের ফুল ভাজা আর গরম গরম ভাত দিয়ে শুরু হলো সবার খাওয়া | অপূর্ব স্বাদে জিভ গেলো ভরে ........আর মন ও গেলো ভরে|খাওয়ার শুরুটা যখন সুখের .....শেষ টাও যে সুখের হবে ....তাতো বলাই বাহুল্য |
সবাই খুব খুব ভালো থাকুন ,সব সময়ে সুস্থ থাকুন আর অনেক অনেক আনন্দে থাকুন |
Comments