'' বসন্ত জাগ্রত দ্বারে |''......বসন্ত কাল !! আমাদের সবার কাছেই ভীষণ পছন্দের এক কাল | কালটি নানা রঙে রাঙা | প্রকৃতি পলাশের রঙে রাঙা | ঘর - ঘর হোলির রঙে রাঙা | মানুষের মন উৎসবের রঙে রাঙা | পুরো বসন্তকালটি যেন উৎসবেরই কাল | নানা নানা ধরণের উৎসব !! আমরা ও সব্বাই সব কিছু ভুলে উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে যাই |
কিন্তু শীতের শেষে বসন্ত আসার সাথে সাথে বা বসন্ত চলে গিয়ে গ্রীষ্মের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে , নানা ধরণের রোগ জীবাণুর ও যেন আনাগোনা ভীষণভাবে শুরু হয়ে যায় | সিজিন চেঞ্জের জন্য সর্দি -কাশি তো লেগেই থাকে , তার উপর হাম - পক্সের মতো ভয়ঙ্কর রোগগুলোও সুযোগ পেলেই উঁকি-ঝুঁকি মারা শুরু করে দেয় | আর কোনো ঘরে একবার ঢুকে পড়লে তো কথাই নেই,সারা বাড়িকেই অসুস্থ করে তোলে | মানুষজন তো অসুস্থ হয়ে পরেই আর ভীষণ দুর্বল ও হয়ে যায় |
আর তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নানা ভাবে চেষ্টাও করে | আর সেই চেষ্টায় আমাদের প্রধান সঙ্গী আমাদের প্রকৃতি মা | প্রকৃতির ঘরে তাঁর সন্তানদের জন্য নানা ঔষধি থরে থরে সাজানোই রয়েছে | শুধু প্রহণ করো আর নিজেকে সুস্থ রাখো | ভালো রাখো | আর এই সময়ের জন্য সবচাইতে বড়ো ঔষধ সজনে ফুল ,সজনে ডাটা ,সজনে পাতাও | পুরো সজনে গাছই কিন্তু মহা ঔষধের ধারক বাহক | প্রকৃতির আশীর্ব্বাদ !!!
এই সময়ে আমার রান্নাঘরেও কিন্তু সজনে ডাটা , সজনে ফুল খুবই আসে | আর আমরা বাড়ির সবাই এগুলো খেতেও খুব ভালোবাসি | নানা মজার মজার মেনু তৈরি করি | আর জমিয়ে জমিয়ে খাই | আজ আমার রান্নাঘরে বেশ খানিকটা সজনে ফুল | একেবারে টাটকা ! সুন্দর এক স্পেশাল গন্ধে ভরা | দেখে এতো ভালো লাগছে যে .....মন বলছে সাজিয়েই রাখি | কিন্তু সাজাবো কি !! রাঁধতে হবে না ! খেতে হবে
তো , আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে আর আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে | তাই না ??
সজনে ফুল গুলো খুব টাটকা | ভেবে ফেললাম , আজ সজনে ফুল ভাজা খাবো | খুব মুখরোচক করে বানাবো | গরম ভাতে প্রথম পাতে আনবে খুশির হাওয়া | ভাবতে ভাবতে সজনে ফুলগুলো বেছে ফেললাম | বাছা ফুলগুলো জলে বার বার ধুয়ে নিয়ে , জল ঝরিয়ে একটা পাত্রে রাখলাম | নিলাম ২টো মাঝারি সাইজের আলু | খোসা ছাড়িয়ে , ছোট ছোট চৌকো চৌকো করে কেটে জলে ভিজিয়ে রাখলাম | নিলাম ৩ - ৪টে গোটা কাঁচালঙ্কা | মিহি করে কুচিয়ে রাখলাম | আর নিয়ে রাখলাম ২-৩ চামচ গোটা পোস্ত | সব উপকরণ মোটামুটি জোগাড় হয়ে গেছে | এবার সব রান্নার শেষে গরম গরম সজনে ফুল ভেজে ফেলবো (Sojne - Phool - Bhaja) | গরম ভাতে শুরুটা বে......................শ ভালো হবে |
উপকরণ :-
সজনেফুল - ফুলে ভরা কয়েকটা ডাল
আলু - ২টো , মাঝারি সাইজের , ছোট ছোট চৌকো চৌকো করে কেটে জলে ভেজানো
কাঁচালঙ্কা - ৩-৪টে গোল গোল করে কুচানো
পোস্ত - ২-৩ চামচ
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টো , একটু করে ফাটানো
পঁচফোড়ণ - ১/২ চামচের মতো
হলুদগুঁড়ো - ১ চিমটে মতো , মানে খুবই সামান্য
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
আজকে দুপুরের সব মেনু তৈরি | বাকি শুধু সজনেফুল ভাজা | মুখরোচক , চটপটা গরম গরম সজনে ফুল ভাজা | গ্যাসে কড়াই বসিয়ে দিলাম | বেশি আঁচে কড়াই গরম হয়ে উঠলেই দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | আঁচ কমিয়ে দিলাম পাঁচফোড়ন আর ২টো ফাটানো শুকনোলঙ্কা | ফোড়নের সুন্দর গন্ধ নাকে আসতেই কড়াইতে ছেড়ে দিলাম , জল ঝরানো ছোট ছোট আলুর টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে , কমিয়ে আলুগুলো সুন্দর করে ভাজতে লাগলাম |
আলু হালকা মুচমুচে হয়ে আসতেই , আঁচ কমিয়ে দিলাম এক চিমটে হলুদগুঁড়ো , প্রয়োজনমতো নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে সজনে ফুলগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | বেশি আঁচে সমস্ত কয়েকবার ভালোকরে নেড়ে নিয়ে , আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে আলু আর সজনে ফুল মজতে দিলাম | সজনে ফুল খুব নরম হয় | অল্প ভাপেই সুন্দর ভাবে নরম হয়ে যাবে | সজনে ফুলের
স্পেশাল সুন্দর গন্ধ আমার রান্নাঘরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে | ঢাকা খুলে দেখলাম আলুর টুকরোগুলো আর সজনেফুল সুন্দর ভাবে মজে গিয়েছে | একটু চেখে তাক ঠিক করে নিয়ে , আঁচ বাড়িয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম ৩ চামচ মতো গোটা পোস্ত আর কুচানো কাঁচালংকাগুলো |
এবার বেশি আঁচে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালো করে কয়েকবার নাড়াচাড়া করে নিলাম | পোস্ত সমেত সজনেফুল ভাজা হয়ে গেছে মনে হতেই গ্যাস বন্ধ করে দিলাম (Sojne - Phool - Bhaja) | সজনেফুল একটা পাত্রে তুলে নিয়ে পৌঁছে গেলাম খাবার টেবিলে | টেবিলে এখন আমরা সবাই | ফুল আর পোস্ত ভাজার সুন্দর গন্ধে সবার জিভে জল | নিমেষে গরম ভাত আর গরম গরম মুখরোচক পোস্ত ছেটানো সজনে ফুল ভাজা দিয়ে খুশি খুশি মনে আমাদের শুরু হলো খাওয়া | সবার মুখে একটাই কথা , ওহ ওহ কি অসাধারণ গো ! কি অসাধারণ !! সত্যি ই শুরুটা হলো খুব খুব স্বাদে আর আনন্দে | আর এই সুন্দর আনন্দের পরিবেশে আমাদের খাওয়া দাওয়া ও এগিয়ে চললো ,এগিয়েই চললো , এগিয়েই চললো ............
আপনারাও আনন্দে থাকুন | ভালো খান | ভালো থাকুন | আর অবশ্য অবশ্যই সুস্থ থাকুন |
Komentarze