আজকে আমার রান্নাঘরে রাখা মাছের থলিতে রয়েছে শিঙি মাছের কয়েকটা টুকরো। ৫০০-৬০০ গ্রাম মতো হবে। গোটা মনে হয় ১০-১২টা। দু -টুকরো করে কেটে পরিষ্কার করা। বাঃ ! ভালোই হলো। আমাদের গ্রাম বাংলায় শিঙি ,মাগুর ,ল্যাটা প্রভৃতি ...............মাছগুলোকে বলে জিওল মাছ। জল থেকে তোলার পর এই মাছ গুলো অনেক্ষন বেঁচে থাকে। সবাই বলে খুবই উপকারী মাছ। সব মাছই তো পুষ্টিগুণে ভরা। তবে কার্যকারিতার অনেক সময় একটু অদল - বদল তো থাকেই ।
শিঙি মাছ খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়াতে ,দুর্বল শরীরে শক্তি
যোগাতে , পেট ভালো রাখতে এই মাছের জুড়ি মেলা ভার। আমরা তো দেখেইছি ,দীর্ঘ দিন রোগে ভুগলে, ডাক্তার বাবুরা হালকা করে নানা সবজি দিয়ে শিঙি মাছের ঝোল খাওয়ার নির্দেশ ,তাঁদের প্রেসক্রিশনেই লিখে দেন।তার মানে রুগীর পথ্য হিসাবে এই মাছ দারুন উপকারী। তাই শরীর ঠিকঠাক রাখতে আমরা , ছোট বড়ো সবাই মাঝে মাঝেই এই মাছকে রান্নাঘরের মেনুতে আনতেই পারি।
আমি কিন্তু আজ শিঙি মাছ মোটেই হালকা করে রাঁধছি না। বরঞ্চ একটু টেস্টি টেস্টি আর বেশ মুখরোচক করে রাঁধবো। সবার ভালো লাগবেই। গরম একটু হালকা। কয়েকফোঁটা বৃষ্টি হলো খুব বেশি নয় ,কিন্তু সবচাইতে আনন্দ লাগছে একটা আরামদায়ক হাওয়া বইছে। তাই সবাই মিলে দুপুরের খাবার তো একটু জমিয়েই খেতে হবে।
এই সব ভাবতে ভাবতেই রান্নাঘরে ঢুকে ৪ চামচ মতো গোটা সর্ষে জলে ভিজিয়ে দিলাম। মাছ খানিকটা নুন দিয়ে মেখে নিয়ে বার বার জল দিয়ে ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রেখে ,জলখাবার তৈরিতে মন দিলাম।জল খাবার শেষ করে আর এক প্রস্ত চা খাওয়ার পর রান্নাঘরে ঢুকলাম দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নিতে ....
উপকরণ :-
শিঙি মাছ - ৫০০-৬০০ গ্রাম ( ১০-১২টি পিস , দু - টুকরো করে কাটা )
গোটা সর্ষে - ৪ চামচ মতো ( জলে ভিজিয়ে রাখা )
পাঁচফোড়ন - ১- ১.৫ চামচ
হলুদগুঁড়ো - ২ চামচ মতো
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১-২ চামচ ( রান্নায় ঝালের পরিমান নিজেদের ইচ্ছা মতো )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
কাঁচালঙ্কা - ৮-১০টি ( একদম গোটা ,রান্নায় দেওয়া হবে ,শুধু সুন্ধর গন্ধের জন্য )
পদ্ধতি :-
ভেজানো সর্ষে জল ঝরিয়ে মিক্সিতে নিয়ে মিহি করে বেটে একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে মাছ ভাজার মতো তেল দিলাম। তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে খুব সাবধানে শিঙি মাছের কয়েকটা টুকরো গরম তেলের মধ্যে দিলাম। শিঙি মাছ ভাজার সময় খুব ফাটে। তাই সাবধান হতেই হবে। মাছে একটু তেল মাখিয়ে নিলে একটু কম ফাটে । আর একটু ঢাকা দিয়ে দিয়ে ভাজলে আরোও ভালো হয়।
সমস্ত মাছ ভাজা হতেই ,আঁচ কমিয়ে ওই তেলের মধ্যেই আর একটু তেল দিলাম। তেল গরম হতে ফোড়ন দিলাম ---পাঁচফোড়ন। সর্ষে-বাটা অল্প জল মিশিয়ে কড়াইতে দিয়ে দিলাম। দিলাম হলুদগুঁড়ো, লাল লঙ্কাগুঁড়ো ,কয়েকদানা চিনি আর প্রয়োজনমতো নুন। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের মিশ্রণ নাড়তে লাগলাম। মিশ্রণ থেকে জল শুকিয়ে তেল বেরিয়ে এলে ,রসার পরিমান ভেবে কড়াইতে জল দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে দিলাম। ঝোল ফুটে উঠতেই ভাজা শিঙি মাছগুলো কড়াইতে দিলাম। ঝোল একটু ফুটিয়ে আঁচ কমিয়ে রান্না একটু হতে দিলাম।
খানিক্ষন বাদে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। মিষ্টি আর টাটকা শিঙি মাছের দুর্দান্ত স্বাদে রান্নার স্বাদ -- অসাধারণ লাগছে ! দারুন ! ওঃ! খুব আনন্দ হচ্ছে। সবার ভালো লাগবে ,ভেবেই আমি খুব খুশি।রান্নার মধ্যে কয়েকটি গোটা কাঁচালঙ্কা দিয়ে ,আঁচ বাড়িয়ে রসার পরিমান ঠিক করে ফেললাম। এবার গ্যাস বন্ধ করে রান্নায় একটা ঢাকা দিয়ে দিলাম। ঢাকা খুললেই কাঁচা লংকার সুন্দর গন্ধ রান্নায় মিশে রান্না হয়ে উঠবে আরো আকর্ষণীয় ,আরো টেস্টি টেস্টি।
আজ দুপুরের মেনু - মুসুরির ডাল ,ভিন্ডি আলু ভাজা ,কাঁচা আমের চাটনি। আর ? আর খুব দারুন স্বাদের আমিষ মেনু ---'সর্ষে বাটায় শিঙি মাছের টেস্টি টেস্টি রসা।' দুপুরে খাওয়ার টেবিলে আমরা সবাই খুশি। খুব আনন্দ করে ,মজা করে ,একেবারে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।
আপনারা সব্বাই আনন্দে থাকুন ,মজাতে থাকুন ,ভালো থাকার অবশ্যই চেষ্টা করুন আর অনেক অনেক সুস্থ থাকুন।
Comments