সবজি খেতে হবে ......সবুজে ভরা সবজি | অর্গানিক হলে তো খুবই ভালো | আমরা প্রায় সব সময়ে কথায় কথায় বলি ....ওঃফ ! বাচ্চাদের সবজি খাওয়ানো যে কি কঠিন ...খেতেই তো চায় না | কিন্তু নাঃ ! শুধু বাচ্চাদের দোহাই দিলে হবে না.. অনেক অনেক বড়দেরও সবজি খাওয়ানো আরো আরো কঠিন |
কিন্তু ...কিন্তু সবজি তো খেতেই হবে | ইমিউনিটি বাড়াতে গেলে অবশ্যই সবজি খেতে হবে | প্রকৃতির সৃষ্টি সমস্ত রকম শাক - সবজি ই কোনো না কোনো ঔষুধীগুনে ভরা | সংসার সুস্থ রাখতে ,সংসারের প্রতিটি সদস্যকে সুস্থ রাখতে ,তাই খাওয়ার টেবিলে এক - একদিন এক - এক রকমের সবজির তৈরি পদও আমাদের অবশ্য অবশ্যই রাখতেই হবে | আর তাইতো আমাদের প্রতি রান্নাঘরে .....আমরা... বাড়ির গৃহিণীরা তো সেই চেষ্টা করেই চলেছি.........করেই চলেছি ................
আজ ছুটির দিন | বাড়ির সবাই বাড়িতে | কয়েকজন আত্মীয় - স্বজন ও আজ আমাদের বাড়িতে | আজ সবাই মিলে একসঙ্গে মজা করে , ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া করে ছুটির দিনটা কাটাবো | দুপুরের রান্নাবান্নার কথা তো ভেবেই ফেলেছি ......ভাবলাম বিকালের জলখাবারেও কিছু মজাদার মেনু তৈরি করে ফেলবো | তৈরি করবো সবজি - সুজি | নানারকম সবজি দিয়ে , খুব টেস্টি - টেস্টি করে ঝাল- ঝাল সুজি | সবজি ও খাওয়া হবে , মুখরোচক স্বাদে মন ও ভরে যাবে |
আর সুজি তো ছোট - বড়ো সবার জন্যই ভীষণ ভীষণই উপকারী এক খাদ্য উপকরণ | খেতেও ভালো ......আবার তৈরিও হয়ে যায় .....এক্কেবারে চটজলদি | সবজি - সুজি তৈরির সব উপকরণই আমার হাতের কাছেই , এই রান্নাঘরেই রয়েছে | তাইতো চিন্তা করার ও কিছু নেই | বিকালে চা - এর পাট শেষ হলেই , সবজি - সুজি তৈরি শুরু করে দেবো | নিশ্চিন্ত হয়ে অন্য কাজে মন দিলাম | বিকালের ভাবনা ....না হয় বিকালেই ........ভাববো |
উপকরণ :-
সুজি - ৬০০ গ্রামের মতো
ব্রকলি - ছোট সাইজের ১টা , ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কাটা
গাজর - ছোট সাইজের ২টো , খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কাটা
আলু - ২টো , একটু বড়ো সাইজের ,খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কাটা
টমেটো - ২টো , মাঝারি সাইজের ,ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কাটা
পেঁয়াজ - ৩-৪টে , একটু বড়ো সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ডুমো
ডুমো করে কাটা
মটর শুঁটি - ছাড়ানো ১ কাপ মতো
কাঁচালঙ্কা - ১০ - ১২ টা ,ছোট ছোট টুকরো করে কাটা ( ঝাল অবশ্যই নিজের নিজের পছন্দমতো )
শুকনো লঙ্কা - ৪টে গোটা গোটা ,এক .......টু ,এক .......টু করে ফাটানো
কালো সর্ষে - ২ চামচ মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদা তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
দুপুরের খাওয়া - দাওয়াটা বড়োই ভালো হয়েছে | খেয়ে দেয়ে ভাত ঘুমের আবেশে চোখ জড়িয়ে এসেছিলো | হঠাৎ তাকিয়ে দেখি বেলা তো বেশ গড়িয়ে
গেছে | চা খাওয়ার সময়ও তো হয়েই এসেছে .......আর বিকালের টিফিনে
সবাইকে সবজি - সুজির খাওয়ানোর কথা ও মনে পরে গিয়েছে | তাড়াতাড়ি বিকালের চা সবাইকে পরিবেশন করেই .....সবজি - সুজি রান্নায় মন লাগিয়ে ফেললাম |
প্রথমে গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে শুকনো খোলায় সমস্ত সুজি একটু কড়া কড়া , হালকা লালচে লালচে করে ভেজে তুলে রাখলাম | এরপর কড়াইতে অল্প পরিমানে তেল দিলাম | তেল গরম হয়ে যেতেই , আঁচ কমিয়ে ,কেটে রাখা
আলুর টুকরো গুলো জলে ধুয়ে নিয়ে ,জল ঝরিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম | একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে একে একে কড়াইতে দিয়ে দিলাম জলে ধোয়া গাজর , ব্রকলি ,মটরশুঁটি আর টমেটোর টুকরোগুলো | দিলাম এক চিমটে নুন আর কয়েকদানা চিনি | কম আঁচেই খানিকক্ষন নাড়াচাড়া করে নিয়ে
একটা ঢাকা দিয়ে সমস্ত মজতে দিলাম |
সবজিগুলো মজে গিয়েছে মনে হতেই , কড়াই থেকে নামিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিলাম | কড়াই পরিষ্কার করে আবার গ্যাসে চাপালাম | দিলাম প্রয়োজনমতো তেল| তেল গরম হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে ফাটানো গোটা শুকনোলঙ্কা গুলো কড়াইতে তেলের মধ্যে দিয়ে দিলাম | এপিঠ ওপিঠ করে হালকা কড়া করে ভেজে নিয়ে তুলে রাখলাম | রান্না শেষে আবার কড়াইতে রান্নায় মিশিয়ে দেবো | আর একটা বিশেষ কথা হলো যে , শুকনোলঙ্কা দিয়ে ভাজা তেলে দারুন সুন্দর এক গন্ধ আর স্বাদের মজা পাওয়া যায় |
ভাজা শুকনোলঙ্কাগুলো তুলে নেওয়ার পর ,কম আঁচেই কড়াইতে তেলের মধ্যে দিলাম কালো সর্ষে | আঁচ বাড়িয়ে দিলাম ডুমো ডুমো করে কেটে রাখা পেঁয়াজের টুকরোগুলো | নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | পেঁয়াজ কুচো গুলোতে হালকা লালচে ভাজা ভাজা রং ধরে এলেই , আঁচ কমিয়ে কড়াইয়ে দিলাম কাঁচালঙ্কাকুচি ,প্রয়োজনমতো নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি | দিয়ে দিলাম ভাপিয়ে রাখা সবজিগুলো | বেশি আঁচে কয়েকবার নাড়াচাড়া করে নিয়ে , কড়াইতে দিলাম , শুকনোখোলে ভেজে রাখা সুজি |
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালো ভাবে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | আঁচ কমিয়ে জল ছিটিয়ে নিয়ে আবার আঁচ বাড়িয়ে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | এইভাবে কয়েকবার জল ছিটিয়ে নাড়াচাড়া করার পর ,সবজি সুজি ভালো মতো মিশে এসেছে মনে হতেই , আঁচ কমিয়ে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | আহা
হা হা....কি দারুন লাগছে ! রান্নার সুন্দর স্বাদে জিভ যেন মুগ্ধ | রান্নায় দিয়ে দিলাম ,প্রথমেই তেলে ভেজে রাখা শুকনোলঙ্কাগুলো সঙ্গে আরো ২-৪টে কুচানো কাঁচালঙ্কা | আঁচ বাড়িয়ে রান্না আবার কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | কতো হালকা করে রান্না সারলাম , অথচ খেতে কি দারুণই না হয়েছে | চটজলদি তৈরি হওয়া এক টিফিন মেনু | সবার মনে হয় ভালো লাগবেই .......এই কথা ভেবেই মনটা কেমন যেনো একটু খুশি খুশি |
সব্বাইকে খাবার টেবিলে ডেকে নিয়ে ,সবার হাতে হাতে এগিয়ে দিলাম , ডিশ ভরা সবজি - সুজি ,সঙ্গে একটা করে চামচ | সবজি - সুজির সুন্দর লোভনীয় গন্ধে সবার জিভ কি জলে ভরে উঠলো ? চটপট শুরু হলো আমাদের বিকালের টিফিন খাওয়া |..... ওঃ ! কি দারুন হয়েছে গো .....কারোর .কারোর গলায় বিস্ময় | .......আবার কেউ কেউ বলে উঠলো ....অপূর্ব ! ....অপূর্ব হয়েছে তো ! .....আর একটু পাবো ? ........অল্পতেই সবাই কতো খুশি ! কতো কতো প্রশংসা ! মন তো আনন্দ পাবেই ......
আনন্দে থাকুন | আপনারা সব্বাই খুব খুব আনন্দে থাকুন | খুশিতে থাকুন |ভালো ভালো খেয়ে থাকুন অনেক অনেক সুস্থ |
Comments