top of page

রুই - পটোলের - কালিয়া


হঠাৎ বলেই ফেললাম ,আর-- ভালো লাগছে না।চলো কোথাও বাড়ির সব্বাই মিলে দু -দিনের জন্য ঘুরে আসি। সবাই এক সঙ্গেই বলে উঠলো আমরা সবাই রাজি। দু -দিন ,দু -রাতের জন্য আমরা গেলাম কলকাতার খুব কাছে , 'ভেদিক ভিলেজ স্পা রিসোর্টস'। সবুজ গাছ পালায় ঘেরা ছোট ছোট কটেজ আর সুন্দর সুন্দর বাংলো নিয়ে বিশাল এক শান্ত পরিবেশ। কতো রকমের সুন্দর সুন্দর পাখি আর সারাক্ষন তাদের নানা ধরণের ডাক। ভীষণ ভালো লাগছিলো।


কিন্তু আমার সবচাইতে ভালো লাগলো আমাদের খাবার জায়গাটি -''ভূমি ''। ঢুকতেই কেমন মাটি মাটি গন্ধ। মাটির তৈরি দোতালা। চারিদিক সুন্দর। খাবার জায়গায় ঢুকেই মনে হলো ,আহা হা... মাটি দিয়ে নিকানো,নানা আলপনা আর আঁকিবুকি কাটা কোনো গ্রামের বাড়িতেই রয়েছি। সুন্দর আতিথেয়তা । শুক্তো থেকে পোলাও ,লুচি ডাব-চিঙড়ি ......সব কতো হালকা ভাবে রান্না ,কিন্তু স্বাদে অসাধারণ। যারা খেতেও ভালোবাসেন আবার ঘুরতেও ভালোবাসেন ,তাদের জন্যই আজকের এই ভূমিকা।


বাড়ি ফেরার সময় ভাবলাম দু - দিন বেশ ভালোমন্দ খাওয়া হয়েছে ,এখন চট করে বাড়ির সবাই আর এই রান্না করো ,সেই রান্না করো বলবে না। ওমা অবাক কান্ড !!! গাড়িতে উঠেই সবাই বলে উঠলো অনেক ফাঁকি দিয়েছো,এবার বাড়ি গিয়ে তুমি ও আমাদের কোনো স্পেশাল রান্না করে খাওয়াবে। কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকলাম।


পরের দিন যথারীতি ২-৩ রকমের মাছ ,অনেক রকমের সবজি বোঝাই থলি রান্নাঘরে ঢুকেই গেলো। সব দেখে নিয়ে ৫-৬ পিস রুই মাছের গাদী আর কিছু কচি কচি পটল ,৪-৫টা মাঝারি সাইজের আলু নিলাম। সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নিলাম ,রাঁধবো রুই -পটোলের কালিয়া। দুপুরের খাওয়ার টেবিলে মনে হয় সবারই ভালো লাগবে

উপকরণ:-

  • রুই মাছ - ৫০০ গ্রাম

  • পটল - ৫০০ গ্রাম (গোটা গোটা অল্প অল্প খোসা ছাড়িয়ে দু - দিক একটু করে চিরে দেওয়া )

  • আলু -৪-৫টি ( ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে আড়াআড়ি ২ টুকরো করে কাটা )

  • টমেটো - ১টি মাঝারি সাইজের ( টুকরো টুকরো করে কাটা )

  • আদা - ১/২ ইঞ্চি খানেক ( মিহি করে কুচানো )

  • গোটা কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টি ( শুধু বোঁটা ছাড়ানো )

  • ছোট এলাচ - ৭-৮টি

  • লবঙ্গ - ৭-৮টি

  • দারচিনি - ছোট ছোট দু টুকরো

  • হলুদ - ১.৫ থেকে ২ চামচ

  • জিরে - ৪-৫ চামচ

  • লাল লঙ্কা গুঁড়ো - ১.৫ থেকে ২ চামচ

  • তেজপাতা - ৩-৪টি

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - কয়েকদানা ( রান্নায় রং আর স্বাদের জন্য )

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো


পদ্বতি:-



মাছ ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে রেখেছিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে মাছ ভাজার মতো তেল দিলাম। তেল ভালোমতো গরম হলে মাছগুলো একটু কড়া করে ভেজে নিলাম। এবার আর একটু তেল দিয়ে জলে ধোয়া পটল গুলো ও ভালো করে ভেজে রাখলাম। এরপর ধোয়া আলুর টুকরো গুলো কড়াইতে দিলাম ,দিলাম এক চিমটে হলুদ আর এক চিমটে নুন। রাঙা করে আলুগুলো ও ভেজে নিলাম।


এখন কড়াই ভালোমতো পরিষ্কার করে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে দিলাম ছোট এলাচ ,লবঙ্গ,দারচিনি আর ভাজা আলুগুলো। দিলাম ৩-৪টি তেজপাতা। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে একটু নেড়ে নিয়ে দিলাম চিনি ,নুন আর হলুদ। আবার ও খানিকটা নাড়াচাড়া করে দিলাম ভাজা পটল ,জিরে গুঁড়ো আর লঙ্কা গুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ কষতে লাগলাম। মশলা ভাজার সুন্দর গন্ধ বের হতেই ঝোলের পরিমান ভেবে জল দিলাম।

ঝোল ফুটে উঠতেই দিলাম ভেজে রাখা মাছের পিস গুলো। বেশি আঁচে কয়েকবার ফুটে গেলে , আঁচ কমিয়ে রান্না হতে দিলাম। আলু ,পটল সেদ্ব হলে গোটা কাঁচালঙ্কা গুলো কড়াইতে ছেড়ে দিয়ে ,একটু আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে ,রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। ঠিক হয়েছে মনে হতেই গ্যাস বন্ধ করে রান্না ঢাকা দিয়ে রেখে দিলাম। রান্নাটা থেকে খুব সুন্দর একটা গন্ধ বের হচ্ছিলো।

দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসলাম। রুই -পটোলের কালিয়া খেয়েই হঠাৎ সবাই বলে উঠলো ,মনে হচ্ছে এখনো ভূমি -তে বসেই খাচ্ছি। দারুন রান্না ! দারুন !!!

ভূমি কথাটা কেন ? তাই বোঝাতেই আমার রান্নাটার লেখার শুরু বেড়ানো দিয়ে। বেড়াতে যেতে কার না ভালো লাগে ? কিন্তু সুন্দর দৃশ্য দেখার সঙ্গে খাওয়াটাও যদি খুব ভালো হয়,তবে সে বেড়ানো বড়োই উপভোগ্য হয়।একটা কথা ...আমার রান্না রুই - পটোলের কালিয়া আজ সত্যিই খেতে অসাধারণ হয়েছিলো । হালকা ,অথচ খুবই টেস্টি টেস্টি।

সবাই খুব ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন ,আনন্দে থাকুন।



1 view0 comments

Comments


bottom of page