বাজারের থলিতে আজ বড়ো - ছোট মিলিয়ে খান আষ্টেক রুইয়ের পোনা | ভীষণই টাটকা | চকচক চকচক করছে | ঝোল রাঁধলে তো খুবই ভালো লাগবে | ঝোল আমি রাঁধবো , তবে ...একটু অন্যরকম ভাবে | গরমে হালকা - পাতলা মাছের ঝোলই খেতে ভালো লাগে | বেশি মশলাদার খাবার একদমই ...না পসন্দ | তবে বর্ষাকাল এসে গেছে ..... আবহাওয়া ও একটু নরম | গরমের দহন জ্বালাও কিছুটা কমে এসেছে | আর তাইতো কালিয়া স্বাদে রুই পটলের ঝোল রাঁধছি | পাতলা ঝোল .....অথচ খেতে কিন্তু ভীষণই মুখরোচক আর খুবই টেস্টি টেস্টি |
আজ রবিবার | আমরা সব্বাই আজ বাড়িতে | সবাই দুপুরে খাবার টেবিলে একসঙ্গে বসে গরম গরম ভাত আর আমার রান্না মুখরোচক গরম গরম রুই পটলের ঝোল দিয়ে জমিয়ে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করবো (Rui-Macher-Jhol) | দারুন হবে ! দারুন .....!! দারুন ......!!!
সকালের সমস্ত কাজকর্ম সেরে নিয়ে খুশি খুশি মনে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম , দুপুরের রান্না - বান্না শুরু করতে | প্রথমেই রাঁধবো কালিয়া স্বাদে টেস্টি টেস্টি রুই পটলের ঝোল | মাছ তো আগেই ভালো করে ধুয়ে ,নুন আর হলুদ মাখিয়ে রেখেছিলাম | এখন আলু আর পটল কেটে নিয়ে জলে ভিজিয়ে দিলাম | কচি কচি পটল | তাই গোটা গোটাই অল্প অল্প ছাড়িয়ে নিয়ে দু দিক একটু করে চিরে জলে ভিজিয়েছি | আর আলুগুলো ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে , আড়াআড়ি ভাবে দু - টুকরো করে কেটে জলে ভিজিয়েছি |
উপকরণ :-
পোনা রুই মাছ - বড়ো -ছোট মিলিয়ে ৮টা মতো | কেটেকুটে পরিষ্কার করে কেটে নুন হলুদ মাখানো
কচি পটল - খান ১২ , অল্প অল্প খোসা ছাড়িয়ে দু - দিক অল্প করে চিরে , গোটা গোটা জলে ভেজানো
আলু - ৭টা , ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে আড়াআড়ি ভাবে দু - টুকরো করে কেটে জলে ভেজানো
টমেটো - ১টি , টুকরো টুকরো করে কেটে জলে ভেজানো
আদা - ১/২ ইঞ্চি খানেক , খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে রাখা
রসুন - ৫টি কোয়া , খোসা ছাড়িয়ে রাখা
কাঁচালঙ্কা - ৮-১০টি , ঝাল নিজের নিজের পছন্দ মতো
হলুদ গুঁড়ো - ৩-৪ চামচ
জিরে গুঁড়ো - ৪-৫ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১-২ চামচ , ঝাল নিজের নিজের পছন্দ মতো
গোটা ছোট এলাচ - ৬-৭টি , একটি করে ফাটানো
লবঙ্গ - ৫-৬টি ,গোটা
দারচিনি - ছোট ছোট ৩-৪ টুকরো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - স্বাদ বাড়াতে কয়েকদানা
সর্ষের তেল - রান্নার প্রয়োজন মতো
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমেই গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালো মতো গরম হয়ে উঠলেই , নুন হলুদ মাখানো রুই মাছের ২-৩ টি পোনা মাছ তেলে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মাছগুলো কড়া করে ভেজে নিয়ে একটা পাত্রে তুলে নিলাম | এই ভাবে ২-৩ বারে সমস্ত মাছ ভেজে ফেললাম | এইবার কড়াইয়ের বাকি তেলের মধ্যে ,জল ঝরানো পটোলগুলো ছেড়ে দিয়ে হালকা কড়া করে ভেজে নিয়ে তুলে রাখলাম | গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | এরপর মিক্সিতে ধোওয়া আদার টুকরো ,রসুনের কোয়া আর গোটা কাঁচালংকাগুলো নিয়ে মিহি করে বেটে রাখলাম |
এবার কড়াই ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে , আবার গ্যাসে চাপলাম | প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হয়ে গেলে , আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম গোটা এলাচ গুলো , গোটা লবঙ্গ গুলো আর ২ - ৩ টুকরো দারচিনি | দিলাম জল ঝরিয়ে নিয়ে কাটা আলুগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলুর টুকরো গুলো রাঙা করে ভেজে নিয়ে কড়াইতে দিলাম মিক্সিতে বেটে রাখা আদা রসুন আর কাঁচালংকার মিশ্রণ টি |
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ ভালো করে কষতে লাগলাম | কষা থেকে ভাজা ভাজা সুন্দর গন্ধ বেরিয়ে আসতেই আঁচ কমিয়ে দিলাম ২ চামচ হলুদগুঁড়ো , প্রয়োজনমতো নুন আর কয়েকদানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম জলে ধুয়ে রাখা টমেটোর কাটা টুকরোগুলো |
এখন আবার আঁচ বাড়িয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ গুলো ভালো করে কয়েকবার নেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে দিলাম ৫-৬ চামচ জিরেগুঁড়ো আর ১-২ চামচের মতো লাল লঙ্কাগুঁড়ো | দিলাম ভেজে রাখা পটোলগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সব
ভালো করে কোষে নিয়ে , ঝোলের পরিমান মতো জল দিলাম | ঝোল টগবগ টগবগ করে ফুটতে শুরু করলো | ঝোলের কি সুন্দর একটা গন্ধ রান্নাঘর ভরিয়ে তুললো | এবার কড়াইতে দিলাম ভেজে রাখা রুই পোনাগুলো | মাছ সমেত ঝোল দু - একবার ফুটে গেলেই আঁচ কমিয়ে রান্নায় হালকা ভাবে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম |
আহাহা .......রান্নার কি অপূর্ব গন্ধ বেরিয়েছে গো !!!একেবারে জিভে জল আনা গন্ধ !! তাড়াতাড়ি কড়াইয়ের ঢাকা খুলে দেখে নিলাম , রান্না মজেছে কিনা | রান্না চেখে ও নিলাম | সব ঠিকঠাক হয়েছে মনে হতেই , আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | রান্না একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলাম | একেবারে দুপুরের খাওয়ার টেবিলে ঢাকা খুলবো ....................
খাবার টেবিলে বসে রুই পটলের ঝোল মুখে দিতেই মনে হলো সত্যি সত্যিই ঝোল দারুন মুখরোচক আর টেস্টি টেস্টি হয়েছে | সবাই খুব খুব খুশি | হঠাৎ এক নতুন স্বাদের ছোঁয়ায় সবার খুব খুবই ভালো লেগেছে (Rui-Macher-Jhol) | মাঝে মধ্যে রান্নায় একটু নতুন চমক মনে হয় সবারই ভালো লাগে | আমাদের ও আজ খুব ভালো লাগলো | খাওয়া দাওয়া তেই তো থাকে মজার মজার আনন্দ আর মজার মজার খুশি | আজ আমরাও পেলাম সেই আনন্দ আর অনেক অনেকটাই সে...........ই খুশি |
আপনারাও মাঝে মধ্যে রান্নায় একটু চমক এনে খুশি খুশি থাকুন না ! থাকুন অনেক অনেক সুস্থ আর অনেক অনেক ভালো |
Comments