পেঁপে এক দারুন উপকারী সবজি। কথাটা মনে হয় কারুরই অজানা হয়। ছোট থেকে বড়ো ....আমরা সবাই যদি মাঝে মাঝে পেঁপেকে খাদ্য তালিকায় নিয়ে আসি ,তবে মনে হয় শরীরের কিছু কিছু সমস্যা ,খুব সহজেই একটু কমিয়ে ফেলতোও পারি। পেটের সমস্যা দূরে রাখতে ,লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ,হজম ক্ষমতা সহজ করতে এই সবজির ভূমিকা একটু বেশিই কিন্তু। ঔষধীগুনে ভরপুর অথচ খুব সহজেই কাছে পাওয়া এই সবুজ সবজি কিন্তু আমাদের জন্য প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি আর অনেক অনেক আশীর্বাদ।
আমার তো সমস্ত সবজিই বড়ো প্রিয়। পেঁপে তো খুবই ভালো লাগে। তাই পেঁপের নানা মেনু রান্নাঘরে মাঝে মাঝে রেঁধেই ফেলি। পেঁপে ভাতে ,পেঁপের ডালনা ,পেঁপে শুক্তো,পেঁপে ছেঁচকি ,পেঁপে ঘন্ট ...........আরো অনেক অনেক রকম রান্না। আজ আমার তরকারির ঝুড়িতে ছোট আর খুব কচি একটা পেঁপে রয়েছে।
দেখে শুনে ঠিক করে ফেললাম ,আজ একটু মুখরোচক করে পেঁপে - আলুর ঘন্ট রাঁধবো। রান্নাঘরে দেখলাম কিছুটা ছোলা ভেজানো রয়েছে। ভালোই হলো। ঘন্ট রান্নায় একটু ছোলা ভিজে .... দারুন জমে যাবে।
পেঁপে আলুর ঘন্ট তে বড়ি ভেজে একটু ভেঙে ভেঙে দিলে বা মটর ডালের মুচমুচে ছোট ছোট বড়া ভেজে দিলেও দারুন লাগে। তবে কোনো কিছু না দিয়ে ,শুধু পেঁপে আলুর ঘন্ট খেতেও কিন্তু দারুন। তবে আজ আমি রাঁধছি '' পেঁপে আলুর ঘন্ট '' একটু ভেজা ছোলা দিয়ে। গরম গরম ভাতের প্রথম পাত মনে হয় দারুন জমিয়ে তুলবে ।
তাই সকালের সমস্ত কাজ শেষ করে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লাম দুপুরের মেনুগুলোর প্রথম পাতের টেস্টি টেস্টি মেনু ''আলু -ছোলা - পেঁপের - ঘন্ট'' রান্না করতে। আমার তো সবসময়েই মনে হয় ,আনন্দ সঙ্গে নিয়ে শুরু যে কোনো ভালো কাজ ভালো হবেই। আর রান্না বান্না কাজটি তো ........ সংসার ভালো রাখতে - সুস্থ রাখতে ,বিশাল দায়িত্বে ভরা এক বিশেষ কাজ।
উপকরণ :-
পেঁপে - ১টি ছোট সাইজের,খুব কচি ( কুড়িয়ে নেওয়া )
আলু - ৩টি ,একটু বড়ো সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে জলে ভেজানো )
ভেজানো ছোলা - ১ কাপ মতো
আদা - ১/২- ১ ইঞ্চি মতো ( মিহি করে কুচানো )
কাঁচালঙ্কা - ৩-৪টি ( কুচানো )
গোটা জিরে - ১ চামচ
গোটা শুকনো লঙ্কা - ২-৩টি ( একটু ফাটানো )
তেজপাতা - ২-৩টি
হলুদগুঁড়ো - ১ চামচের মতো
জিরেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লালঙ্কাগুঁড়ো - ১/২ থেকে ১ চামচ
গরম মশলা গুঁড়ো - ১/২ চামচ
ঘি - ১-১.৫ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো ( অবশ্যই লাগবে ,না হলে রান্না মজবে না )
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হতেই জলে ধোয়া ছোট ছোট আলুর টুকরোগুলো কড়াইতে দিলাম। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলু রাঙা করে ভেজে নিয়ে তুলে রাখলাম। এখন কড়াইতে প্রয়োজনমতো আরো একটু তেল দিয়ে দিলাম ,গোটা জিরে ,ফাটানো শুকনোলঙ্কা ,তেজপাতা আর ভেজা ছোলাগুলো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভাজতে ভাজতে একে একে কড়াইতে দিলাম ,কুচানো আদা
,কুচানো কাঁচালঙ্কা ,নুন আর চিনি।
সমস্ত উপকরণ একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম ,হলুদগুঁড়ো ,জিরেগুঁড়ো অল্প লাল লঙ্কাগুঁড়ো আর ভেজে রাখা আলুর টুকরোগুলো। ( একটা বিশেষ কথা ,যে কোনো রান্নাতে নুন,ঝাল ,মিষ্টির ব্যবহারে রাঁধুনির কিছুটা স্বাধীনতা কিন্তু থাকা উচিত , আর তাহলেই রান্না করা , যে কোনো মেনুই হয়ে উঠবে অসাধারণ। )
এবার কড়াইয়ের সব কিছু আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে কষতে লাগলাম। মশলা কষার সুন্দর গন্ধ
বেরোতেই ,কড়াইতে দিলাম কুড়িয়ে রাখা পেঁপে। আঁচ বাড়িয়ে ২-১ বার নেড়ে নিয়ে ,-আঁচ কমিয়ে,হাতে করে রান্নায় অল্প জল ছিটিয়ে দিয়ে, একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই ----আ-হা হা ! পেঁপে ঘন্টর কি সুন্দর গন্ধ বেরিয়েছে। ঢাকা খুলে দেখে নিলাম সব কিছু সু-সেদ্ধ হয়েছে কিনা ! রান্নার স্বাদ ও দেখেনিলাম । বাঃ - সবকিছু একদম ঠিক ঠাক।
রান্নায় দিলাম অল্প গরম মশলার গুঁড়ো আর দেড় চামচ মতো ঘি। আঁচ বাড়িয়ে রান্না কয়েকবার নেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম। আর রান্নায় দিলাম একটা ঢাকা। অপেক্ষা দুপুরের খাবার টেবিলের ।আর খাবার টেবিলে আমরা সবাই কতো কতো আনন্দ ,আর রান্না কতো উপভোগ করে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম , তা বোধহয় আমাদের সঙ্গে আপনারাও বুঝেই ফেলেছেন।
সব সময়েই ভালো খাবার খুব খুব আনন্দ করে ,মজা করে ,আর অবশ্যই উপভোগ করে খান। আর থাকুন অনেক অনেক সুস্থ ,অনেক অনেক ভালো।
Comments