শীতকালে খেয়ে আনন্দ .....খাইয়ে আনন্দ | জমিয়ে ভালো ভালো রান্না করুন ....নিজে খান ...অন্যকে খাওয়ান | ভালো থাকুন ...সুস্থ থাকুন | মোটকথা শীতকাল আনন্দের কাল | বাজারে পা ফেললেই চারিদিকে সবুজে ভরা কচি কচি শাক - সবজি | দেখতে দেখতে ,দেখার আনন্দেই অনেক কিছু বাজারের থলিতে | তারপরে রান্নাঘরে | আর তারপর নানাপদে সেজে আমাদের খাওয়ার পাতে | প্রতিটি পদই যেনো স্বাদগুণে একে অপরকে দেখে নেয় |
খাওয়ার সুখে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো এই কাল | আর তাইতো নবান্নের আঘ্রানে শীতের শুরু | কনকনে শীতের ভোরে কাঁপতে কাঁপতে অমৃত স্বাদের খেজুরের রস পান | ঘরে ঘরে পুলি - পিঠের সুগন্ধে মাখামাখি | পিকনিকের আমেজে গরম গরম খিচুড়ি ,বেগুনভাজা ,চাটনি ,পাঁপরভাজা | আহা আহা ....বড়োই সুখ , বড়োই সুখ | আর তাইতো সুখের অনুভূতিকে আরো বাড়িয়ে নিতে , ভ্রমণ পাগল মানুষজন , ভ্রমণে পারি দিতে ,এই কাল টাকেই বেছে নেয় |
আহা হা হা ........দেখো কান্ড !! সবুজে ভরা বাজারের থলিটার দিকে তাকিয়েই ...কতকিছু ভেবে ফেললাম !!! নাঃ ,নাঃ আর দেরি নয় , দেখিতো বাজার থেকে কি কি এলো ! খুব কচি তিন আঁটি পালং শাক | বেশ বেশ খুব ভালো ....পালং শাকের সবুজ রং টাতে যেনো আলো ঝলমল করছে |
ও হো হো হো ....২ প্যাকেট পনীরও তো রয়েছে ! তাহলে কি পালং - পনীর রাঁধবো ? ....বাঃ ...ধনেপাতাগুলো দেখছি খুব কচি কচি ...... আর দারুন সুন্দর গন্ধে ভরা | তাহলে ....তাহলে একটু অন্য স্বাদেই পালং শাক , আর পনীর রেঁধে ফেলি ,সঙ্গে দেবো খানিকটা কচি কচি ধনেপাতা | রান্নাটা একটু চটপটা স্বাদেরই রাঁধবো | কনকনে ঠান্ডায় দারুন জমে যাবে |
ভেবেই ফেললাম আজ রাতে ডিনার টেবিলে গরম গরম রুটি আর সঙ্গে আমার চটপটা স্বাদের পালং - পনীর - ধনেপাতার তরকারি | গরম গরম ভাতের পাতেও কিন্তু এই পদটা দারুন জমে যায় | বাড়ির ২ - ১ জন তো ভাতের সঙ্গেই খাবে | বিকালে চা এর পাট শেষ হলেই , রাতের রান্নাটা সেরে ফেলবো , চটপটা স্বাদে পালং - পনীর |
উপকরণ :-
কচি পালং শাক - ৩ আঁটি ,৭০০ থেকে ৭৫০ গ্রামের মতো , ভালো করে বেছে নিয়ে জলে ভেজানো
পনীর - ৪০০ গ্রামের মতো ,ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে রাখা
কচি কচি ধনেপাতা - ৫০ গ্রামের মতো , ভালো করে বেছে নিয়ে জলে ভেজানো
টকদই - ২ চামচের মতো , ফেটিয়ে রাখা
পেঁয়াজ - ছোট সাইজের ২টো , মিহি করে কুচানো
আদা - ইঞ্চি খানেক
রসুন - ৬-৭ কোয়া ,ছাড়িয়ে রাখা
কাঁচালঙ্কা - ৬-৭ টি ,ঝাল কিন্তু নিজের নিজের পছন্দমতো
গোটা শুকনো লঙ্কা - ৩-৪টা ,একটু করে ফাটানো
হলুদ গুঁড়ো - ১/২ থেকে ১ চামচের মতো
জিরে গুঁড়ো - ১-২ চামচের মতো
ধোনে গুঁড়ো - ১-২ চামচের মতো
লাল লঙ্কা গুঁড়ো - ১/২ চামচের মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদা তেল - প্রয়োজনমতো
মাখন - ২৫ থেকে ৫০ গ্রামের মতো , এটাও নিজের নিজের পছন্দ মতো
পদ্ধতি :-
বিকালে চা - টা খেয়ে নিয়ে রাতের রান্নায় মন দিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো জল দিলাম | বেশি আঁচে জল টগবগ করে ফুটে উঠতেই , জলে ভিজিয়ে রাখা পালং শাক গুলো জল থেকে তুলে নিয়ে কড়াইয়ের ফুটন্ত জলে ছেড়ে দিলাম | পালং শাক গুলোর রঙে একটু পরিবর্তন আসতেই ,গরম জল থেকে তুলে ,ফ্রিজের ঠান্ডা জল রাখা একটা পাত্রে পালং শাক গুলো ভিজিয়ে দিলাম | খুব সুন্দর ভাবে পালং শাকের সবুজ সতেজ রং ফিরে এলো |
কড়াই পরিষ্কার করে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে পনিরের কাটা টুকরোগুলো কড়াইতে ছেড়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে হালকা লালচে করে পনীরগুলো ভেজে নিয়ে ,একটা পাত্রে রাখা খানিকটা জলের মধ্যে ভিজিয়ে দিলাম | এতে হালকা করে ভাজা পনীর ভীষণ ভীষণ নরম হয়ে উঠবে |
আবার কড়াই পরিষ্কার করে নিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে গোটা শুকনোলঙ্কাগুলো কড়াইতে ছেড়ে দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে , গরম তেল থেকে তুলে রাখলাম | এতে তেলের মধ্যে শুকনোলঙ্কা ভাজার এক সুন্দর গন্ধ আর সুন্দর স্বাদ তৈরি হয় | আবার রান্না শেষে ভাজা শুকনোলঙ্কাগুলো রান্নায় দিয়ে দেবো | কম আঁচেই কুচানো পেঁয়াজগুলো কড়াইতে ছেড়ে দিলাম | কম আঁচে পেঁয়াজ মজতে লাগলো |
এইবার মিক্সিতে আদা ,রসুন কোয়া ,কাঁচালঙ্কা নিয়ে মিহি করে বেটে একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম |এরপর মিক্সিতে নিলাম জল ঝরিয়ে ভেজানো ধনেপাতাগুলো | মিহি করে বেটে আর একটা পাত্রে ঢেলে রাখলাম |
এবার ঠান্ডা জলে ভেজানো পালং শাক জল ঝরিয়ে মিক্সিতে নিয়ে , মিহি করে বেটে ,বাটা ধনেপাতা রাখা পাত্রের মধ্যে ঢেলে দিলাম |
পেঁয়াজ মজে এসেছে মনে হতেই ,আঁচ বাড়িয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে ,কড়াইতে দিলাম আদা- রসুন - কাঁচালঙ্কা বাটা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে কষতে লাগলাম | দিলাম একটু হলুদগুঁড়ো ,লঙ্কাগুঁড়ো ,জিরেগুঁড়ো আর ধনেগুঁড়ো | আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে লাগলাম | কড়াইয়ের মধ্যে পনীর ভেজানো অল্প জল দিয়ে , কড়াইয়ের মশলা নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | আঁচ কমিয়ে দিলাম |
এখন একটা পাত্রে ২ চামচ ফেটানো দই নিয়ে ,অল্প পনীর ভেজানো জল দিয়ে নেড়ে নিয়ে কড়াইয়ের কষা মশলার মধ্যে দিয়ে দিলাম | রান্নায় পনীর ভেজানো জল ব্যবহারে ,রান্না আরো স্বাদিষ্ট হয়ে ওঠে | এবার দিলাম প্রয়োজনমতো নুন আর চিনি | আঁচ বাড়িয়ে সমস্ত উপকরণ ভালো করে কষতে লাগলাম | মশলা থেকে সুন্দর গন্ধ বার হতে শুরু হলেই ,কড়াইতে দিয়ে দিলাম ,পালং আর ধনেপাতার বাটা মিশ্রণটি |
আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ,প্রয়োজনমতো পনীর ভেজানো জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে রান্না মজিয়ে নিতে লাগলাম | রান্নার রং পাল্টাচ্ছে মনে হতেই ,কড়াইতে দিলাম ভাজা পনিরের টুকরোগুলো | একটু নেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে আবার খানিকক্ষণ রান্না মজতে দিলাম | রান্নার স্বাদ চেখে নিলাম | বাঃ ! বাঃ ! দারুন দারুন লাগছে তো | কড়াইতে দিলাম খানকিটা মাখন আর ভেজে রাখা গোটা শুকনোলঙ্কাগুলো | আঁচ বাড়িয়ে একবার নেড়ে নিয়েই গ্যাস বন্ধ করলাম | রান্নায় দিলাম ঢাকা |
ডিনার টেবিলে এই চটপটা স্বাদের পালং - পনীর দিয়ে গরম গরম রুটি ,আর গরম গরম সরু চালের ভাত ....যে , কি অসাধারণ লাগছিলো , তা বোধহয় একবার খেয়ে দেখলেই ভালো বোঝা যাবে | আজ তো বেশ কনকনে ঠান্ডা | সবাই অনুভব করছি | তবে ডিনার টেবিলের এই চটপটা মেনুতে কনকনে শীত যেনো আরো খানিকটা উপভোগ্য হয়ে উঠলো | সব্বাই বেজায় খুশি | তৃপ্তিতে ভরপুর | আনন্দে আহ্লাদিত ..................................................
আপনারাও আনন্দে থাকুন ,ভালো খান ,ভালো থাকুন | সুস্থ থাকুন |
Comments