চোতবোশেখের সময়টা ঋতু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এক বড়োই গুরুত্বপূর্ণ সময় | কারণ শীত চলে গিয়ে গরমের আগমন | ঠান্ডা ঠান্ডা মজাদার আবহাওয়া থেকে একেবারে একলাফে গরমে ঢুকে পরা | এই বিশাল তাপমাত্রার পরিবর্তনে পরিবেশে নানা রোগ জ্বালা যন্ত্রনাও দেখা দেয় | কিন্তু প্রকৃতি আমাদের সুস্থ রাখতে ,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ,প্রকৃতিতেই নানা ব্যবস্থা করেই রেখেছেন | নিমপাতা ....এই সময়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ,এক সুন্দর প্রাকৃতিক উপাদান |
নিমপাতা ....ভীষণ ভীষণ উপকারী | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ,আমাদের শরীর - মনকে ভালো রাখতে ....এর কোনোই তুলনা নেই | শীত - গ্রীষ্মের পরিবর্তনের এই সময়ে ,সংসার সুস্থ রাখতে ,অবশ্যই আমাদের রান্নাঘরে মাঝে মাঝেই আনতে হবে .....কচি কচি আর সবুজ সবুজ নিমপাতাকে | নিমপাতা স্বাদে তেতো ........কিন্তু অরুচি মুখে রুচি আনতে , জিভের পানসে স্বাদে মিষ্টি স্বাদ আনতে ......নিমপাতা অতুলনীয় |
আমার রান্নাঘরে তো প্রায়ই নিমপাতার কোনো না কোনো মেনু থাকেই......নিম - বেগুন ,নিম -আলু , নিম - সিম , নিম - শুক্তো ..........আরো নানা ধরণের মেনু | খেতে ও খুব ভালো লাগে | আজ ও দুপুরের প্রথম পাত জমিয়ে দিতে রয়েছে ,কচি কচি খানিকটা নিমপাতা | .
.....কি তৈরি করি !........কি তৈরি করি !.......ভাবতে ভাবতে ,হঠাৎ মনে হলো ,আজ যদি খুব মুচমুচে আর টেস্টি টেস্টি করে ,নিমপাতার বড়া ভাজি .......তাহলে সবাই খুব অবাক ও হয়ে যাবে আবার আহ্লাদে আটখানাও হয়ে যাবে | জমে উঠবে মধ্যাহ্ন ভোজে ...গরম ভাতে প্রথম পাত |
নিজের ভাবনাতে নিজেই খুশি | বাজারের থলি থেকে ২ আঁটি নিমপাতা বার করে ,ভালো করে বেছে নিয়ে জলে ভিজিয়ে দিলাম | বড়া ভাজার বাকি উপকরণ গুলো ও যোগাড় করে ফেললাম | একদম রান্নার শেষে ভাজবো গরম গরম নিমপাতার বড়া ...........................................
উপকরণ :-
নিমপাতা - কচি কচি ২ আঁটি
বেসন - ১/২ কাপ
চালের গুঁড়ো - ২ চামচ
কাঁচালঙ্কা - ২টি
রসুনের কোয়া - ১০-১২টি
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদা তেল বা সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্নাঘরে ঢুকে , রান্না শুরুর প্রথমেই ,একটা পাত্রে বেসন নিয়ে ,প্রয়োজনমতো জল দিয়ে ভিজিয়ে দিলাম | বেসন মাখো মাখো করে ,তার মধ্যে দিলাম ,অল্প নুন আর অল্প চিনি | সব ভালো করে মিশিয়ে ,একটু ফেটিয়ে নিয়ে রেখে দিলাম | দুপুরের খাবার পাতের সমস্ত মেনু রান্না করে নিয়ে ,শেষে মন দিলাম ,গরম গরম নিমপাতার বড়া ভাজাতে |
পাত্রে ভেজানো বেসন আবার ভালো করে ফেটাতে লাগলাম | ফেটানো হয়ে গেছে মনে হতে ,মিক্সিতে লঙ্কা আর রসুন নিয়ে ,মিহি করে বেটে নিয়ে ,ফেটানো বেসনের পাত্রে দিয়ে দিলাম | পাত্রের মধ্যে দিলাম ২ চামচ চালের গুঁড়ো | ভালো করে নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে লাগলাম | এবার বেসনের পাত্রের মধ্যে দিলাম ,জল থেকে তুলে জল ঝরানো ,কচি কচি নিমপাতাগুলো | হাত দিয়ে সমস্ত ভালো করে মিশিয়ে নিলাম | মাখার স্বাদ ও দেখে নিলাম |
মিশ্রনের স্বাদ একদম ঠিক ঠাক ,মনে হতেই গ্যাসে কড়াই চাপলাম | দিলাম বড়া ভাজার মতো প্রয়োজনীয় তেল | তেল গরম হতেই ,আঁচ কমিয়ে ,নিমপাতার মাখা মিশ্রণ থেকে বড়ার আকারে কয়েকটা গড়ে নিয়ে ,কড়াইতে দিয়ে দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ,একেবারে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিলাম | এইভাবে সমস্ত মিশ্রণ বড়ার আকারে ভেজে ফেললাম |
দুপুরের খাওয়ার প্রথম পাতে এলো গরম গরম ভাত আর মুচমুচে ....টেস্টি টেস্টি নিমপাতার বড়া | শুরু হলো আমাদের খাওয়া -দাওয়া | আহা - হা - হা .....কি দারুন স্বাদ ! বড়া তেতো ......কিন্তু স্বাদে যেনো মিষ্টি .....অপূর্ব স্বাদে জিভ ভরিয়ে দিলো | মনে হচ্ছে .....আর একটা খাই ....আর একটা .....| খাওয়ার শুরুটা এতই ভালো হলো যে ....শেষটাও হলো ভালো ......| তবে রইলো সবার এক অনুরোধ ......খুব তাড়াতাড়ি পাতে যেনো নিমপাতার টেস্টি টেস্টি বড়ার দেখা পাওয়া যায় .....
সব্বাই খুব খুব ভালো থাকুন ,জমিয়ে ভালো ভালো খান ,সুস্থ থাকুন আর থাকুন অনেক অনেক আনন্দে |
Комментарии