কর্মসূত্রে কিছুদিন বাইরে কাজ করার পর বাড়ির কাছে পোস্টিং পেয়েছি | অফিসে বসে কাজ করছি , হঠাৎ দেখি আমার সামনে ২- ৩ জন সিনিয়র রিটায়ার্ড স্টাফ হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে | বললো, "কি রে কেমন আছিস ? দেখে খুব ভালো লাগলো | এখা
নে তো গল্প গুজব হবে না, এই রবিবার বিকালে তোর বাড়িতে চা খেতে যাবো, আর অনেক অনেক গল্প করবো |" আমি তো মহা খুশি........বললাম, "অবশ্যই আসবেন কিন্তু | আমি অপেক্ষা করবো |"
ভাবতে লাগলাম চা এর সঙ্গে কিছু 'টা' এর ব্যবস্থা তো করতেই হবে | 'টা' না থাকলে বিকালে চায়ের টেবিল কেমন যেন অসুম্পূর্ণ | ভাবতে ভাবতেই ঠিক করলাম রবিবার বিকালে নারকেল দিয়ে একটু ঘুগনি বানাবো , খুব মুখোরোচক আর টেস্টি টেস্টি হবে | সঙ্গে রসগোল্লার পায়েস........দারুন জমে যাবে | রবিবারের সকাল , আমরা বাড়ির সবাই খুশি | অনেকদিন পর আবার পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হবে | সকালে চা খেয়েই পরিমান মতো ঘুগনীর মটর জলে ভিজিয়ে দিলাম |
আর বাকি উপকরণ গুলি জোগাড়ের ব্যবস্থা করতে লাগলাম........
উপকরণ:-
মটর - ৭৫০ গ্রাম
নারকেল - ছোট আর কচি ১ টি
পিঁয়াজ - 5-৬ টি মাঝারি সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচানো )
টমেটো - ১ টি বড়ো সাইজের ( কুচানো)
আদা বাটা - ২ চামচ
রসুন বাটা - ২ চামচ
কাঁচা লঙ্কা বাটা -৩ -৪ চামচ
গোটা কাঁচা লঙ্কা -৩ ৪ টি ( কুচানো)
হলুদ - প্রয়োজন মতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজন মতো
নুন - প্রয়োজন মতো
চিনি - প্রয়োজন মতো ( অবশ্যই স্বাদের জন্য দিতেই হবে )
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমে কচি নারকেল টা ফাটিয়ে নারকেলের খোলা থেকে শাঁস বার করে নিয়ে একটু মিহি করে কুচিয়ে রাখলাম | ভেজানো মটর প্রেসার কুকারে নিয়ে গ্যাসে চাপলাম ,মাঝারি আঁচে ৫,৬টি সিটি দিয়ে গ্যাস থেকে প্রেসার কুকার নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিলাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজন মতো তেল দিলাম ,তেল গরম হলে নারকেল কুচি গুলো খুব হালকা করে ভেজে তুলে নিলাম |
এবার কড়াইতে আবার প্রয়োজন মতো তেল দিয়ে, দিলাম --- কুচানো পেঁয়াজ কুচি গুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ ভাজতে লাগলাম|
পেঁয়াজ ভাজা একটু নরম আর বাদামি মতো হলে , দিলাম আদা বাটা, রসুন বাটা, আর কাঁচা লঙ্কা বাটা | আবারো আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে কষে নিয়ে দিলাম টমেটো কুচি গুলো, একটু নাড়াচাড়া করে, দিলাম হলুদ, নুন, চিনি আর ভাজা নারকেল কুচি গুলো |
সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | উপকরণ থেকে সুন্দর ভাজা গন্ধ বার হলেই ,প্রেসার কুকার থেকে জল ঝরিয়ে সেদ্ধ মটর কড়াইতে দিলাম | বেশি আঁচে খুব ভালো ভাবে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে, দিলাম প্রেসার কুকারের মধ্যে থাকা মটর সেদ্ধর জল আর প্রয়োজন মতো একটু গরমজল |
ঘুগনি টগবগ করে ফুটতে থাকলে আঁচ কমিয়ে কিছুক্ষন হতে দিলাম , দেখে নিলাম ঘুগনীর স্বাদ, ঠিকঠাক মনে হতেই কুচানো কাঁচা লঙ্কা গুলো কড়াইতে ছাড়িয়ে দিলাম আর আঁচ বাড়িয়ে ঘুগনীর ঘনত্ব ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম |
আর, তৈরি নারকেলের ঘুগনি একটা ঢাকা দিয়ে রেখে অথিতি আগমনের প্রতীক্ষায় রইলাম | যথা সময়ে তারা এলেন | অনেক অনেক গল্প হলো ,অনেক অনেক আনন্দ হলো | এবার চায়ের টেবিলে সবার কাছে এগিয়ে দিলাম ঘুগনীর বাটি আর গরম গরম চা | শেষে অবশ্যই রসগোল্লার পায়েস তো ছিলই |
সবাই একেবারে অভিভূত ! বললো কি বানিয়েছিস রে......অপূর্ব অপূর্ব !!! অনেকেই বললো আর একটু দে , খুব ভালো লাগছে | অতিথিদের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সবার কাছেও পৌঁছে গেছে ঘুগনীর বাটি | সব্বাই ভীষণ ভীষণ খুশি |
আমার ইচ্ছায় আপনারাও সবাই থাকুন অনেক অনেক খুশি আর অনেক অনেক আনন্দ নিয়ে |
Comments