বাজারের থলি থেকে তো বেরিয়ে এলো ,সুন্দর খুব কচি একটা লাউ ......দেখিতো মাছের থলিতে আজ কি আছে ?....ওমা ! ...কতগুলো মাঝারি সাইজের বেশ টাটকা টাটকা চিংড়িমাছ | ......তবে কি লাউ চিংড়ির চিন্তা ভাবনা ? ?.......না ..না ..না আজ অন্য কিছু ভাবছি ....| গরম ভাতের শুরুটা যদি হয়.. মুগ-লাউ ঘন্ট দিয়ে .....তবে মনে হয় তো দারুন দারুন হবে , কিন্তু !......চিংড়িগুলো দিয়ে শেষ পাত জমিয়ে দিতে কি রাঁধি ? ....কি রাঁধি ?........
ভাবতে ভাবতে ...হঠাৎ ..ই গলদা চিংড়ির মালাইকারি খাওয়ার খুব খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ..... কিন্তু গলদা চিঙড়ি কোথায় ? ......তবে উপায় তো একটা ভাবতেই হবে | ইচ্ছে যখন হয়েছে ....ইচ্ছেপূরণ ও হবেই হবে | নারকেলের দুধ দিয়ে ছোটছোট চিংড়ি গুলো যদি রেঁধে ফেলি ...তবে মনে হয় খুব খুবই ভালো হবে | কিন্তু !.....কিন্তু ?......এখন একটা কচি নারকেল কোথায় ...কোথায় পাবো ?.......আচ্ছা প্যাকেটের দুধ কিনে এনে রান্নাটা করলে কেমন হয় ?
ব্যাস ভাবনা শুরু তো কাজ ও শুরু | চটপট দোকান থেকে একটা নারকেলের দুধের প্যাকেট আনিয়ে নিলাম | আমিও খুব খুশি | ইচ্ছেটা হলো ..আর ইচ্ছেটা পূরণ হতেও চলেছে .....বাহঃ ...বাহঃ .....দারুন !এখন শুধু বাকি রইলো আমার রান্নাটা শুরু করার | সকালের সমস্ত কাজ সুন্দর করে শেষ করে ,মনের আনন্দে পায়ে পায়ে এগিয়ে চললাম .....আমার প্রিয় রান্নাঘরের দিকে .........
শুরু হলো রান্না | আজ রান্নাঘরের প্রথম রান্না দুপুরের শেষ পাতের মুখরোচক মেনু ...''নারকোলদুধে ছোটোচিংড়ি ''....................................
উপকরণ :-
চিংড়িমাছ - মাঝারি সাইজের ,৭৫০ গ্রামের মতো ( কেটেকুটে পরিষ্কার করে প্রয়োজনমতো নুন আর এ.....ক চিমটি হলুদ মাখানো )
নারকেল দুধ - ১৮০ মিলি লিটারের একটা প্যাকেট
পেঁয়াজ - ২টি ছোট সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে ৪ টুকরো করে কাটা )
রসুন - ছোট ছোট ১০ - ১২ কোয়া ( খোসা ছাড়িয়ে রাখা )
আদা - ১/২ ইঞ্চি মতো ( খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে রাখা )
কাঁচালঙ্কা - ১০-১২ টা ( ৩-৪টা বাটা আর বাকি গুলো রান্নায় পড়বে গোটা গোটা )
তেজপাতা - ৩-৪টি
ছোট এলাচ - ৪-৫টি
লবঙ্গ - ৪-৫টি
দারচিনি - ৩-৪ টুকরো
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - প্রয়োজনমতো
হলুদ - মাত্র এক চিমটে ,শুধুমাত্র চিংড়িগুলো ধোয়ার পর একটু মাখিয়ে রাখার জন্য
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো ,অবশ্যই লাগবে
তেল - সর্ষের তেল প্রয়োজনমতো ( কেউ কেউ ইচ্ছে করলে অন্য তেলেও রান্নাটা করতে পারেন )
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমে গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে ,নুন হলুদ মাখানো চিংড়ি মাছগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | কম আঁচে একটা ঢাকা দিয়ে দিলাম | কিছুক্ষন বাদে ঢাকা খুলে দেখলাম ,কড়াইতে চিংড়িমাছগুলো থেকে খানিকটা জল বেরিয়ে এসেছে ,আর চিংড়িমাছগুলো সাঁতলানো ও হয়ে গেছে | গ্যাস বন্ধ করে দিলাম |
এবার মিক্সিতে পেঁয়াজের টুকরো ,রসুনের কোয়াগুলো ,আদার টুকরো আর ৩-৪টি কাঁচালঙ্কা নিয়ে একেবারে মিহি করে বেটে রাখলাম | প্যাকেট থেকে নারকোলের দুধ একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে খানিকটা জল মিশিয়ে রাখলাম |
গ্যাসে একটা পরিষ্কার কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম একে একে তেজপাতা ,ছোটএলাচ ,লবঙ্গ আর দারচিনি | দিলাম মিক্সিতে বেটে রাখা মিশ্রণটা |আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে কষতে লাগলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো চিনি আর নুন | মশলা ভাজার সুন্দর গন্ধ বার হতে শুরু হলেই ,সাঁতলানো চিংড়গুলো রসা সমেত কড়াইতে দিয়ে দিলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো লাল লঙ্কাগুঁড়ো |বেশি আঁচে সমস্ত নাড়াচাড়া করতে করতে কড়াইয়ের জল কমে গিয়ে, রান্নার কষা মশলা থেকে তেল বার হতে শুরু করলেই , বাটিতে রাখা নারকোলের জল মিশ্রিত দুধ ..... কড়াইতে ঢেলে দিলাম | দিয়ে দিলাম ৮-১০টা গোটা কাঁচালঙ্কা |
চিংড়িমাছ সমেত নারকোলের দুধ ফুটতে শুরু করলে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না খানিক্ষন মজতে দিলাম | দারুন !...দারুন ! গন্ধ বেরিয়েছে | জিভে জল এসে যাচ্ছে | রান্নার সু - গন্ধ বাড়ির কোনায় কোনায় পৌঁছে গেছে | মাঝে মাঝে বাড়ির মানুষদের খুশির আওয়াজ ......| মন ভরে যাচ্ছে .... অনেক অনেক আনন্দে ভরে যাচ্ছে | যেনো এক উৎসবের আমেজেই ভরে যাচ্ছে | ঢাকা খুলে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | বড়োই সুন্দর ! সত্যি ....ই বড়োই সুন্দর ! আঁচ বাড়িয়ে রসার পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম | চুপি চুপি বলেই ফেলছি ,নিজের রান্নার গন্ধে ,নিজের জিভেই জল ......ভাবটা এমন .....কখন খাবো .........ক.....খন খাবো ..............
আজকের কিন্তু খাবার টেবিলের পরিবেশ টা বড়োই সুখকর আর বড়োই আনন্দময় ছিলো | গরম ভাতে খাওয়ার শুরুটা ছিল ভীষণ ভীষণ টেস্টি টেস্টি কিন্তু..............কিন্তু ? শেষ পাত টা ছিল বড়োই লোভনীয় এক অপূর্ব স্বাদে ভরপুর ....শেষ করতেই মন চাইছিলো না .............ইচ্ছেই করছিলো না .........কিন্তু ......আজ শেষ না করলে ....কাল ,আবার শুরু কি ভাবে হবে !!!......
সব্বাই খুব খুব ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন ,আনন্দে থাকুন |
Comments