মুখের স্বাদ বাড়াতে ,খাওয়া দাওয়াকে বেশি বেশি মুখরোচক করতে ,মাঝে মাঝে গরম ভাত ,গরম ডালের সঙ্গে আমরা নানা রকম ডালের গরম গরম বড়া ভাজা দিয়ে প্রথম পাত শুরু করেই থাকি। আর গরম গরম বড়া ভাজা খেতে ভালো বাসেনা এমন মানুষ আছে কি ? আমার ,আমার মনে হয়
গরম গরম বড়া ভাজা খেতে আমরা সব্বাই ভীষণ ভালোবাসি। আহাহা ! কি লোভনীয় ! আর কি ভীষণ টেস্টি টেস্টি।তাছাড়া প্রতিরকম ডাল -ই অফুরন্ত প্রোটিনের ভান্ডার। তাই খুব সহজেই প্রোটিনের শক্তি বাড়াতে ,আমরা কচি - বুড়ো সব্বাই ডাল খাবো বা ডাল দিয়ে তৈরি কোনো মুখরোচক মেনু .....। যেমন
বড়া ভাজা দিয়ে তৈরি মুখোরোচক --বড়ার ঝোল ,বড়ার ঝাল বা বড়া ভাজার রসা রসা তরকারিও কিন্তু দারুন লাগে।
আজ দু - এক দিন হলো মাঝে মাঝেই দু - এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি না থাকলে একটু গুমোট গুমোট মনে হলেও, তাপমাত্রার তীব্রতা এখন বেশ কম।কাল রাতেই ভেবে ছিলাম ,আজ মটর ডালের বড়ার রসা রসা তরকারি করবো। খেতে বড়োই মুখরোচক হয়। তাই ২৫০ গ্রাম মতো মটর ডাল রাতেই জলে ভিজিয়ে রেখেছিলাম।শুধু শরীরের কথা নয় ,জিভের কথা ভেবেও মেনু ঠিক করতে হবে। না হলেই গোলমাল ......
আজ দুপুরের একটা মেনু --''মটর - ডালের - বড়ার - রসা - রসা ''। যাবতীয় সকালের কাজ সেরে নিয়ে ,দুপুরের রান্নায় মন দিলাম। প্রথম মেনু বড়ার রসা ............
উপকরণ :-
মটর ডাল - ২৫০ গ্রাম
আলু - ৬টি ছোট সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে প্রত্যেটি ৪ টুকরো করে কেটে জলে ভেজানো )
পেঁয়াজ - ৪টি ৯ মিহি করে কুচানো )
টমেটো - ১টি মাঝারি সাইজের ( টুকরো টুকরো করে কাটা )
রসুন- ১টি মাঝারি সাইজের
আদা - ১/2 ইঞ্চি থেকে ১ ইঞ্চি মতো
কাঁচালঙ্কা - ৭-৮টি
গোটাজীরে - ফোরণের জন্য খুব অল্প ( না ও দিতে পারেন )
জিরেগুঁড়ো ২-৩ চামচ
ধনেগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১.৫-২ চামচ
হলুদগুঁড়ো - ১.৫ - ২ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
গরম মশলার গুঁড়ো - ১- ১.৫ চামচ
ঘি - ১- ২ চামচ
পদ্ধতি :-
ভেজানো মটরডাল জল ছেঁকে নিয়ে মিক্সিতে বেটে একটা পাত্রে রেখে দিলাম। মটর বাটার সঙ্গে বেটে নিলাম কয়েকটি রসুন। এবার বাকি রসুন ,আদা আর কয়েকটা কাঁচালঙ্কা মিক্সিতে নিয়ে মিহি করে বেটে রেখে দিলাম। মটর ডাল বাটার মধ্যে দিলাম এক চিমটে চিনি ,এক চিমটে নুন। মটর ডাল বাটা ভালো করে ফেটিয়ে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হলে আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে বড়ার আকারে সমস্ত ফেটানো ডাল বাটার থেকে কড়া করে বড়া ভেজে তুলে রাখলাম। বাকি তেল টুকুর মধ্যে জলে ধোয়া আলুগুলো দিয়ে দিলাম। দিলাম সামান্য হলুদ ,সামান্য নুন। একটু লালচে করে ভেজে তুলে নিলাম।
এবার কড়াইতে প্রয়োজনমতো তেল দিয়ে ,একটু গোটা জিরে ফোরণে দিলাম ( না দিলেও হবে )। তেল গরম হতেই দিলাম কুচানো পেঁয়াজগুলো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ নরম করে ভেজে দিলাম -আদা ,রসুন,কাঁচালঙ্কা বাটা। সমস্ত ভালো করে ভাজতে লাগলাম। একটু পরেই আঁচ কমিয়ে দিলাম ভাজা আলুগুলো ,নুন , চিনি , হলুদগুঁড়ো ,লাল লঙ্কাগুঁড়ো ,জিরেগুঁড়ো আর ধনেগুঁড়ো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ ভালো করে কষতে লাগলাম। মশলা কষার সুন্দর গন্ধ বেরোতেই কাটা টমেটোর টুকরো গুলো দিয়ে দিলাম। আবার কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে রসার পরিমাণমতো কড়াইতে জল দিলাম। ঝোল ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম।
ঝোলের গন্ধ বেরোচ্ছে। ঢাকা খুলে দেখলাম আলু অনেকটা সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার আঁচ বাড়িয়ে ঝোলের মধ্যে ভাজা বড়া গুলো দিয়ে দিলাম। ঝোল একটু ফুটিয়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে রান্না মজতে দিলাম ,যাতে বড়াগুলোতে ঝোল ঢুকে বড়াগুলো নরম হয়ে যায়। কিছুক্ষন পর রান্না প্রায় হয়ে এসেছে মনে হতেই ,রান্না চেখে দেখে নিলাম। দিলাম গরম মশলারগুঁড়ো আর ঘি। বেশি আঁচে একটু ফুটিয়ে ,রান্না রসা রসা রেখে গ্যাস বন্ধ করলাম। রান্না একটু বেশি রসা রসা রাখলাম কারণ ,ঝোলের বড়া অনেকটা রসা টেনে নেয়।
কিছুক্ষন বাদে রান্না দেখতে গিয়েই টের পেলাম ,রসা টেনে নিয়ে মটর ডালের বড়াগুলো রসে টুবুটুবু হয়ে গেছে। দারুন খেতে হয়েছে। মুখ স্বাদে ভরে যাচ্ছে। দুপুরে খাবার টেবিলে সবার যে কি আনন্দ ! কত আনন্দ ! না দেখলে বুঝতে পারা যাবে না। খেয়ে তো আমরা সবাই অভিভূত। অনেকদিন বাদে রান্না করলাম। খেতে যে এতো টেস্টি টেস্টি হবে নিজেই বুঝতে পারিনি। এমনিতে মটর ডালে একটা স্পেশাল স্বাদ আছে। তাই বড়ার তরকারিও স্পেশাল স্পেশালই হয়েছে। খুব ভালো খেলাম। বড়ো ভালো লাগলো।আনন্দ--- খেয়ে দেয়ে অনেক অনেক স্বস্তির আনন্দ।
আনন্দে থাকুন ,ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন।
Comments