কত দিন মাছের টক খাওয়া হয়নি ,তাই না ? .........হলে কিন্তু বেশ হয় !.........খেতে বড়োই টেস্টি টেস্টি !........আহা - হা - হা চটপটা মাছের টকের স্বাদে জিভ যেন ভরে যায় , ........ক-দিন ধরেই বাড়িতে এমন ধরণের কথা শুনতে পাচ্ছি , বুঝতে পারছি সবই আমাকে শুনিয়ে। অনেক দিন মাছের টক রান্না করাই হয় নি। সবার বোধহয় খেতে খুবই ইচ্ছা করছে ! তাই এই কথা বার্তা.....।
রাতে বিছানায় শুয়ে মনে মনে ভেবেই নিলাম - এবার মাছের টক রাঁধতেই হবে। কাল রাঁধলেই ভালো হতো ! কিন্তু বললেই তো সব চট করে জোগাড় হয়ে যায় না ....... ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমের কোলে ঢোলে পড়েছি ---বুঝতেই পারিনি। এক ঘুমে ভোর হয়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। রাতের ভাবনার কথা বে-মালুম ভুলেই গেলাম।
বাজার এসে গেছে। দেখি কি কি এলো ? হঠাৎ ...ভীষণ আনন্দে মন ভরে উঠলো। মাছের থলিতে কিছুটা মৌরালা মাছ। বাঃ ! বাঃ ! দারুন ! বাড়িতে তো তেঁতুল রয়েইছে। অন্য বিশেষ কিছু তো লাগেই না। তাহলে ? ......আজ মৌরালা মাছের টেস্টি টেস্টি মাছের টক বানাতে কোনো অসুবিধাই নেই। আর এ কথাও বুঝে ফেললাম, সবারই টক খাওয়ার ইচ্ছে তাই আজ সবার প্ল্যান অনুযায়ী আমার রান্নাঘরে উপস্থিত এই বিশেষ উপকরণ .... ছোট ছোট খানিকটা টাটকা মৌরালা মাছ ।
ফসফরাস সমৃদ্ধ এই ছোট মাছটি ...ছোট থেকে বড়ো আমাদের সবার জন্যই ভীষণ ভীষণ উপকারী। চোখ ভালো রাখতে ,হাড়ের গঠনের মজবুতিতে এর ভূমিকা অসীম। মিষ্টি স্বাদে ভরপুর এই মাছটি ,আমাদের বাঙালিদের বড়োই প্রিয় এক ছোট মাছ। তাছাড়া টক - ঝাল - মিষ্টি তে ভরা মৌরালা মাছের টক ,ভাতের পাতের শেষ পাতকে দারুন জমিয়ে দেয়। জিভ এক চটপটা স্বাদে ভরে......থাকে।
মন যেন এক বিশেষ আনন্দে আর অনেক অনেক তৃপ্তিতে ভরে আছে। আজ রান্না করছি ,সবার পছন্দের দুপুরের এক বিশেষ মেনু .....মাছের টক। সকালের সব কাজ ঠিক ঠাক শেষ হতেই ,শুরু করতে চললাম দুপুরের রান্নাবান্না। প্রথম রান্না .....মৌরালা মাছের টক।
উপকরণ :-
মৌরালামাছ - ৩৫০ গ্রাম ( কেটে কুটে পরিষ্কার করা )
তেঁতুল - ৭৫ গ্রামের মতো
গোটা কালো সর্ষে - ১/২ -১ চামচ মতো ( রান্নায় ফোরণের জন্য )
গোটা শুকনো লঙ্কা - ২টি ( রান্নায় ফোড়নের জন্য ,একটু করে ফাটানো )
কাঁচালঙ্কা - ২টি ( লম্বা লম্বি অর্ধেক করে চেরা )
হলুদ - ১-১.৫ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১/২ চামচ ( রান্নায় সুন্দর রঙের জন্য )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - অবশ্যই অনেকটা লাগবে ,পরিমান রান্নার স্বাদ অনুযায়ী
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
মাছ ধুয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়েই রেখেছিলাম। পাকা তেঁতুল ও খানিকটা জলে ভিজিয়ে রেখেছিলাম। রান্না শুরুর প্রথমেই জলে ভেজানো তেঁতুল থেকে তেঁতুলের কাঁথ তৈরি করে নিলাম। তেঁতুল থেকে তৈরি ঘন মিশ্রনের মধ্যে দিলাম - নুন ,১/২ চামচ হলুদগুঁড়ো ,১/২ চামচ লঙ্কাগুঁড়ো আর চিনি।
এবার গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে মাছ ভাজার মতো তেল দিলাম। তেল খুব ভালো মতো গরম হতেই ,খানিকটা নুন-হলুদ মাখানো মৌরালা মাছ কড়াইতে দিলাম। হালকা হাতে মাছ এপিঠ ওপিঠ করে নিয়ে ,কড়া আর মুচমুচে করে মৌরালা মাছ ভেজে নিলাম। এই ভাবেই সমস্ত মৌরালা মাছ ভেজে ফেললাম। এবার আঁচ কমিয়ে মাছ ভাজার তেলের মধ্যেই দিলাম ২টি ফাটানো গোটা শুকনোলঙ্কা আর চা এর চামচের ১ চামচ মতো গোটা কালো সর্ষে। কম আঁচে ২-১বার নেড়ে নিয়ে আঁচ বাড়িয়ে দিলাম ,তেঁতুলের গোলা মিশ্রণটি।
বেশি আঁচে তেতুলের মিশ্রণ ফুটতে শুরু করলো। তেঁতলের মিশ্রণ একদম ঘন ঘন হয়ে এলেই ,কড়াইতে দিলাম খানিকটা জল। আবার বেশি আঁচে কড়াইয়ের মিশ্রণ ফুটে ,কিছুটা ঘন হয়ে গেলে ,কড়াইতে দিলাম
ভাজা মৌরালা মাছ গুলো। এবার মাছ সমেত তেঁতুলের মিশ্রণ ফুটতে লাগলো। কড়াইয়ের উপকরণ রসা রসা মতো হয়ে আসতেই ,রান্নায় ছেড়ে দিলাম ,অর্ধেক করে চেরা কাঁচা লঙ্কা গুলো। রান্না ভরে উঠবে কাঁচালংকার সুন্দর হালকা গন্ধে।
আঁচ কমিয়ে মাছের টকের স্বাদ দেখে নিলাম। টক - ঝাল - মিষ্টিতে ভরপুর ,একদম চটপটা মনে হতেই গ্যাস বন্ধ করে দিলাম। খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত। সবার খাওয়া তো শুরু হলো , তবে শেষ হলো অনেক অনেক আনন্দে আর ফুর্তিতে শেষ পাতে টেস্টি টেস্টি মৌরালা মাছের টক দিয়ে। সবাই ভীষণ খুশি। আর আমিও খুশি সবাইকে আনন্দ দেওয়ার খুশিতে।
খুশিতে থাকুন। আনন্দে থাকুন। সুস্থ থাকুন।
Comments