ভর্তা !!! ঘরে ঘরে এই মেনুটির খুব কদর | অরুচি ভরা মুখের স্বাদে রুচি ফেরাতে , মেনুটির তুলনা মেলা ভার | যেকোনো ধরণের ভর্তাই পাতের শুরুতে থাকলে , খাওয়ার মজাটাই যেন অনেক অনেক বেড়ে যায় , কখনো কখনো তো শুধু ভর্তাতেই পুরো খাওয়াটাই জমে যায় , অন্য কিচ্ছু লাগে না | আমিষ , নিরামিষ কত কত রকমের ভর্তা ........সবই কিন্তু স্বাদগুণে অনন্য | আমি আজ তৈরি করছি লইট্যে ভর্তা | সত্যি বলতে কি ...এটা এক স্পেশাল স্বাদের ভর্তা | খেয়ে মন প্রাণ আনন্দে একেবারে মাখামাখি হয়ে যায় | খুব খুব ভালো লাগে |
বাজারে কত শত রকমের মাছ | মাছপ্রিয় বাঙালির ঘরে ঘরে রোজ রোজ সেগুলো পৌঁছেও যায় | যত্ন সহকারে জমিয়ে হয় রান্না ..আর তারপর জমিয়ে জমিয়ে খাওয়া | প্রতি প্রকারের মাছই প্রোটিনের আধার | প্রতিদিনের পাতে একটুকরো মাছ , আমাদের ইমিউনিটি অনেক
অনেক বাড়িয়ে দেয় | তাইতো ডাক্তারি ভাষায় ...মাছ খাও ...ইমিউনিটি বাড়াও ......রোগ মুক্ত হও | লইট্যে মাছটি..... কিন্তু প্রোটিনের এক অসাধারণ আর অবশ্যই এক অফুরন্ত ভান্ডার |
অন্য অনেক অনেক মাছের বাজার দরের কাছে এই মাছের মূল্য অনেক অনেক কম , আর সেটাই যেনো মনে হয় ঈশ্বরের পরম আশীর্বাদ | এই উপকারী মাছটি সবার বাড়িতেই অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারে , আর পাতে পাতে পৌঁছে গিয়ে খুব সহজেই সব্বাইকে ইম্যুনিটিতে ভরিয়ে তুলতে পারে | নানাদিক থেকে শরীরকে সুস্থ সবল রাখতেও ভীষণ ভীষণ সাহায্য করতে পারে | তাইতো বলি লইট্যে খাও !! লইট্যে খাও (Lotte - Macher - Bhorta) !!! নিজে খাও , অন্যকেও খাওয়াও |
উপকরণ :-
লইট্যে মাছ - ৫০০ গ্রাম , কেটেকুটে ধুয়ে অল্প নুন আর অল্প হলুদগুঁড়ো মাখিয়ে রাখা
পেঁয়াজ - খুব ছোট ছোট ৩টি , মিহি করে কুচিয়ে রাখা
কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টি , কুচিয়ে রাখা
ধনেপাতা - ১/২ কাপ মতো , কুচিয়ে রাখা
হলুদগুঁড়ো - খুব অল্প , চা চামচের ১/২ চামচ বা তার থেকেও অল্প কম
নুন - খুব অল্প
চিনি - ২-১ দানা রান্নার চটপটা স্বাদে চমক আনতে
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
দুপুরের রান্না সারতে , রান্নাঘরে ঢুকে প্রথমেই গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে ১ - ১.৫ চা চামচ মতো সর্ষের তেল দিলাম | তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে , নুন হলুদ মাখানো লইট্যে মাছগুলো কড়াইতে দিয়ে , দিলাম ২-১ দানা চিনি | একটা ঢাকা চাপা দিয়ে মাছগুলো সুসিদ্ধ হতে দিলাম | রান্নাঘরে বাকি কিছু কাজ এগিয়ে রাখতে লাগলাম | অল্প বাদে কড়াইয়ের ঢাকা খুলে দেখলাম , মাছ থেকে বেশ খানিকটা জল বেরিয়েছে | একটু নেড়ে নিয়ে আবার ঢাকা দিয়ে মাছ হতে দিলাম | আবার ও অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম |
এবার যখন ঢাকা খুললাম , দেখলাম মাছ থেকে বেরোনো জল অনেকটা টেনে গেছে | মাছ ভালো সেদ্ধ ও হয়ে গেছে | কম আঁচেই লইট্যে মাছ হতে থাকলো , আর আমি মাঝে মাঝে নেড়েচেড়ে দিতে লাগলাম | নুন , হলুদ কিছুই আর দিইনি | মাছ ধুয়ে যে পরিমান নুন , হলুদ দিয়ে মেখে রেখেছিলাম , সেইটুকুই | আর নয় | চট করে একটু চেখে দেখে নিলাম | নাঃ , একদম ঠিকঠাক !!
কম আঁচে গ্যাসে বসানো লইট্যে মাছ যেই না বেশ ঝুরঝুরে হয়ে এসেছে মনে হলো .....গ্যাস বন্ধ করলাম , আর সাঁতলানো মাছ একটা পাত্রে ঢেলে নিলাম | ঢাকা দিয়ে রাখলাম | টেবিলে সবাই বসে পড়লেই টেস্টি টেস্টি করে ভর্তা তৈরি করবো | রান্নাবান্না শেষ হলো |
খেয়াল করলাম বাড়ির সব্বাই খাবার টেবিলে পৌঁছেই গেছে | শুরু করলাম ভর্তা তৈরির কাজ | কিছুই না !! শুধু জুৎ করে একটু মাখা |
যে পাত্রটিতে সাঁতলানো লইট্যে মাছগুলো রেখেছিলাম , সেই পাত্রের মধ্যে দিলাম প্রয়োজনমতো কুচানো পেঁয়াজ , কুচানো ধনেপাতা , কুচানো কাঁচালঙ্কা আর অল্প , মানে প্রযোজন মতো সর্ষের তেল | হাত দিয়ে ভালো করে সব মিশিয়ে দিতে লাগলাম | সুন্দর করে লইট্যে ভর্তা তৈরি করে ফেললাম আর পৌঁছে গেলাম খাবার টেবিলে | সবাই তো মনে হচ্ছে , অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে .....!!!
খাওয়া শুরুর প্রথমেই প্রত্যেককে দিলাম গরম গরম ভাত , আর ২-৩ চামচ করে লইট্যে ভর্তা | আমার পাতেও তাই | গরম ভাতে লইট্যা ভর্তা মেখে - মেখে খেতে - খেতে সত্যিই দারুন দারুন স্বাদের অনুভূতিতে মন ভরে যায় !! আমরা বাড়ির সবাই খাওয়া শুরু করলাম | আহা আহা লইট্যে ভর্তা কি অপূর্বই না লাগছে !!! তবে , তবে এই অপূর্ব স্বাদ পেতে গেলে আপনাদের সবাইকে একবার তো মুখরোচক লইট্যে -ভর্তা খেতেই হবে (Lotte - Macher - Bhorta) | স্বাদের অনুভূতি শুধু মুখে বলে বোঝাতে পারবোই না | তবে বার বার , আবার , একটা কথাই বলবো , লইট্যে মাছ খুব খুব উপকারী মাছ , আর স্বাদে বড়োই স্পেশাল | তাই যারা লইট্যে ভালোবাসো ........তারা লইট্যে খাও আর জিভের রুচি বাড়াও !! তার উপর সবার জানা .........লইট্যে খেলে ইমিউনিটি তো বেড়েই যাবে , তাই না ??
তাইতো , সব সময়ে বলছি আর বলবো ও ,ভালো ভালো খাও | অনেক অনেক সুস্থ থাকো | আর অ.................নেক আনন্দে থাকো |
Comments