আচ্ছা ! আজকাল একটা বিষয়ে সবাই খেয়াল করেছেন কি ?.......বিষয়টা হলো ....কাগজে কলমে ,খবরের পাতায় , ডাক্তারের কথায়...... সব সময়ে একটা কথাই শোনা যাচ্ছে যে ......ভালো খাও - ভালো থাকো | আর এই ভালো খাবারটা হলো ...সবুজ সবুজ শাক - সবজি | অর্গানিক হলে তো কোনো কথাই হবে না | ভীষণ ভালো ...ভীষণই ভালো |
সত্যি এখন যেন ভাবতেই ভয় করে , আমাদের চারিদিকে নানা কারণে পলিউশন বেড়েই চলেছে | তার জন্য রোগ - জ্বালা - যন্ত্রনাও অনেক বেড়ে গিয়েছে | আমরাও সবাই চিন্তা করে চলেছি , কি করলে আমরা একটুও ভালো থাকতে পারি | প্রকৃতির কোলে সবুজে ভরা শাক - সবজি নানা - নানা ধরণের ঔষধীগুনে ভরপুর | যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আমাদের সুস্থ রাখে | আর তাইতো এখন আমরা সবাই প্রতিদিনের খাবার পাতে রাখতে চাই সবুজে ভরা কিছু শাক - সবজির মেনু |
আর এই সব সবজির মধ্যে ...লাউ ভীষণ ভীষণই উপকারী এক সবুজ সবজি | ঔষধীগুনে ঠাসা এই ঠান্ডা ঠান্ডা সবজি স্বাদে ও অসাধারণ ,গুনে ও অসাধারণ | তাইতো বহু বহু বাড়ির রান্নাঘরে প্রায় ই নানাভাবে নানা স্বাদে লাউ রান্না হয় , আবার কোনো কোনো বাড়িতে ,বলতে গেলে রোজই লাউ খাওয়া হয় | সকালে ঘুম ভাঙার পর ,যদি একগ্লাস লাউয়ের জুস্ আমরা খেতে পারি তো আমাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ অনেক অনেক বেড়ে যাবে | শরীর থাকবে ঠান্ডা ,পেট থাকবে ঠান্ডা আর মন ও থাকবে একেবারে ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল |
রান্না পটু - খাদ্য রসিক বাঙালির রান্নাঘরে , ভাতের পাতে স্বাদ বাড়াতে ,এক একদিন চমকে চমকে ভরা, লাউয়ের এক একরকমের পদ | নিরামিষ রান্নায় লাউ - শুক্ত ,লাউ - ছেঁচকি ,লাউ - ঘন্ট ,লাউ - ডাল ,লাউ - ভর্তা ....আবার আমিষ রান্নায় লাউ - চিংড়ি ,ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে লাউ .........নানা নানা ধরণের পদ ......ভাবলেই যেন জিভে জল | একটা কথা কিন্তু সবাইকে মানতেই হবে , আমিষ বা নিরামিষ যে কোনো রান্না হালকা হলেও , স্বাদে একটু চমক রাখতেই হবে ..........দেখা যাবে ....খাবার পাত - চেটেপুটে সাফ |
আমার রান্নাঘরে ও লাউ | খুব ছোট আর খুব কচি একটা লাউ | ভেবেই নিলাম দুধ দিয়ে খুব হালকা করে এই কচি লাউ টা রাঁধবো | রাঁধবো স্বাদের - লাউ |গরম ভাতের প্রথম পাত টা অমৃত স্বাদে ভরে তো উঠবেই ,আর সঙ্গে সঙ্গে মনটাও এক দারুন স্বস্তিতে ভরে উঠবে | খাবার পাতের সমস্ত মেনুতেই আনন্দের ছোঁয়া পাওয়া যাবে | মানে খাবার টেবিলে বইবে আনন্দের হাওয়া | রান্নাটা খুবই হালকা অথচ খুবই মুখরোচক |
উপকরণ :-
কচি লাউ - ছোট সাইজের ১টা
কলাই ডালের বড়ি - ১৮ থেকে ২০ টার মতো
দুধ - ১ কাপ থেকে ১.৫ কাপের মতো ( প্রয়োজনমতো )
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২টো ,একটু করে ফাটানো
তেজপাতা - ২টো
পাঁচফোড়ন - ১/২ চামচের মতো
রাঁধুনি - ১/২ চামচ থেকে ১ চামচের মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সাদা তেল - প্রয়োজনমতো
ঘি - খুব অল্প ( না দিলেও রান্না ভালো লাগবে )
পদ্ধতি :-
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ছেড়ে দিলাম বড়িগুলো | হালকা হাতে বড়িগুলো নেড়েচেড়ে মুচমুচে আর রাঙা রাঙা করে ভেজে নিয়ে ,কড়াই থেকে তুলে নিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিলাম | এবার কড়াইয়ের এই তেলের মধ্যেই অল্প আর একটু তেল দিলাম | তেল গরম হয়ে উঠতেই ,ফোরণে দিলাম গোটা - আর একটু করে ফাটানো ২টো শুকনোলঙ্কা , পাঁচফোড়ন , রাঁধুনি | একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম লাউয়ের কাটা টুকরোগুলো আর ২টো তেজপাতা | দিলাম প্রয়োজনমতো নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি |
আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার নেড়ে নিলাম | এরপর আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম |লাউ থেকে জল বেরিয়েই লাউ মজতে লাগলো | সুন্দর এক মিষ্টি গন্ধে আমার রান্নাঘর ভরে উঠলো | যেনো পুজোয় রান্না ভোগের গন্ধ ! আহা.....আহা.......বড়োই সুন্দর | মন ভালো করা এরোমা | ঢাকা খুলে ভেজে রাখা বড়িগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে কম আঁচে আবার রান্না হতে দিলাম |
রান্নায় জল কমে আসতেই রান্না চেখে দেখে নিলাম | সব ঠিকঠাক আর তাকতাক হয়েছে মনে হতেই , রান্নায় দিলাম দেড়কাপ মতো দুধ | আঁচ বাড়িয়ে হালকা করে একটু নেড়ে দিলাম |
লাউ মাখো মাখো হয়ে আসতেই , রান্নায় অল্প ঘি ছড়িয়ে দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | তৈরি আমার স্বাদের - লাউ | রান্নায় দিলাম একটা ঢাকা | আজ আমি সব রান্নাবান্না সেরে নিয়ে শেষে রেঁধেছি লাউ | গরম ভাতের খাওয়ার শুরুটা গরম - গরম স্বাদের - লাউ দিয়ে করবো বলে |
যথা সময়ে শুরু হলো খাওয়া - দাওয়া | জিভের অমৃত স্বাদের অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গে মনের স্বাদেও ছড়িয়ে পড়লো আনন্দ আর তৃপ্তি | জমিয়ে চললো আমাদের মধ্যাহ্ন - ভোজ | খাবার টেবিলে বইতে লাগলো আনন্দের হাওয়া ..............
অনেক অনেক আনন্দে থাকুন | ভালো থাকুন | জমিয়ে ভালো ভালো খান | আর থাকুন সুস্থ |
Comments