ল্যাটামাছ এক দারুন স্বাদের মাছ | ভীষণ ভীষণ উপকারী | ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি , মায়ের রান্নাঘরে নানা ধরণের মাছের আনাগোনা | তারমধ্যে কই ,মাগুর ,ল্যাটা ,শিঙি .......মাছগুলো যখন বাজারের থলি থেকে বেরিয়ে আসতো.....দেখতাম সব মাছই নড়াচড়া করছে | লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে ,আর মা নিপুণহাতে বার বার সেগুলো ধরে ধরে মাছের পাত্রে রাখছে | ভয়ে ভয়ে দু ......র থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম | মা বলতেন ,'' ভয় নেই ...এগুলো জিওল মাছ | খুব খুব উপকারী মাছ | খেলেই তোদের বুদ্ধি বাড়বে ,শরীরে রক্ত হবে | শরীরে শক্তি অনেক অনেক বেড়ে যাবে | তাড়াতাড়ি বড়োও হয়ে যাবি | তখন আর কোনো চিন্তাই থাকবে না | তাইনা ?''
তারপর যখন স্কুলে পড়াশোনা করছি , বইয়ের পাতায় অন্য সব মাছের সঙ্গে জিওল মাছ সম্বন্ধে ও নানা কথাই জানতে পারলাম | জিওল মাছ খুব সহজপাচ্য মাছ , আর ভীষণ ভীষণ উপকারী ও | ছোট ছোট শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় মাঝে মাঝে এই ধরণের মাছ ....খাওয়াতে পারলে তো খুবই ভালো | শরীরে রক্ত হবে , শক্তি বাড়বে | তাছাড়া সহজেই হজম হয়ে যায় বলেই, দুর্বল শরীরে শক্তি বাড়াতে এই ধরণের মাছ হালকা ভাবে রান্না করে খেলে বড়োই উপকার পাওয়া যায় |
আমি আজ রান্না করবো জিওল মাছ ....ল্যাটামাছ | সুন্দর স্বাদের এক দারুন মাছ | রান্নাঘরে মুখরোচক পদ রান্না তো হবেই , আর সেই রান্নার উপকরণ যদি উপকারী গুনে ভরা থাকে , তবে তো কোনো কথাই হবে না | আর আমরা ,গৃহিণীরা বাড়ির সবাইকে টেস্টি খাইয়ে মন ভালো করার যেমন চেষ্টা করি ...........সেই টেস্টি রান্না হেলদি করতেও আপ্রাণ চেষ্টা করি | সংসার যেমন আনন্দে ভরপুর
থাকবে তেমনি সুস্থ ও থাকবে , এই চেষ্টাই আমাদের মায়েদের ....বাড়ির গৃহিণীদের |
আজকের ল্যাটামাছগুলো আমি সর্ষে বাটা দিয়ে রাঁধবো | টেস্টি টেস্টি করে ল্যাটমাছের সর্ষে - ঝাল | গরম গরম ভাতের পাতে ল্যাটা- সর্ষে দারুন মুখরোচক এক মেনু ....... সুন্দর এক স্পেশাল চটপটা স্বাদের মেনু | মন ভরে যায় ....প্রাণ ভরে যায় | একবার খেলেই মনে হয় , বার বার খাই | ভাবতে ভাবতে ৩-৪ চামচ গোটা সাদা সর্ষে জলে ভিজিয়ে দিলাম | সর্ষে কিছুক্ষন ভিজে গেলে ফুলে গিয়ে নরম হয়ে যায় | তাই মিহি করে বেটে ফেলতে খুব সুবিধাও হয় | আর মিহি সর্ষে বাটায় রান্না হয়ে ওঠে দারুন সুস্বাদু |
উপকরণ :-
ল্যাটামাছ - ৭০০ গ্রাম ,কেটেকুটে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে ,নুন হলুদগুঁড়ো মাখিয়ে রাখা
গোটা সাদা সর্ষে - ৪ চামচ
পাঁচফোড়ন - ১চমচ
গোটা শুকনোলঙ্কা - ২-৩টে ,একটু করে ফাটানো
কাঁচালঙ্কা - ২টো সর্ষে বাটায় ,২টো লম্বালম্বি চেরা ফোড়নের জন্য ,২-৩ টি গোটা রান্নায় দেবার জন্য
হলুদগুঁড়ো - ২-৩ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ২ চামচ ,তবে ঝাল নিজের নিজের পছন্দ মতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - সামান্য পরিমানে ,রান্নায় স্বাদ বাড়াতে
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
ল্যাটা - সর্ষের রান্না শুরুর প্রথমেই ভেজানো সর্ষে জল ঝরিয়ে মিক্সিতে নিলাম ,দিলাম ২টো গোটা কাঁচালঙ্কা | ভেজা সরর্ষে খুব মিহি করে বেটে ফেললাম | গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল খুব ভালো মতো গরম হলেই আঁচ কমিয়ে ,নুন হলুদ মাখানো কয়েকটা ল্যাটামাছ কড়াইতে ছেড়ে
দিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে মাছ কড়কড়ে করে ভেজে নিয়ে ,তেল থেকে তুলে রাখলাম | বাকি নুন হলুদ মাখানো মাছগুলোও এই ভাবেই ভেজে নিলাম | এবার এই ভাজা তেলের মধ্যেই প্রয়োজনমতো আর একটু তেল দিয়ে ,আঁচ কমিয়ে ফোড়ন দিলাম ২টো গোটা আর একটু করে ফাটানো শুকনোলঙ্কা , কয়েকটা চেরা কাঁচালঙ্কা আর পাঁচফোড়ন | কড়াইতে দিলাম মিহি করে বেটে রাখা সাদা সর্ষে | দিলাম অল্প হলুদগুঁড়ো ,নুন আর কয়েকদানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে ভালো করে নাড়তে লাগলাম |
দিলাম ২ চামচ মতো লাল লঙ্কাগুঁড়ো | আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত নাড়তে লাগলাম |কড়াইয়ের সর্ষের মিশ্রনে জল কমে এসে ,তেল পুঞ্চ পুঞ্চ করে বেরিয়ে আসতে শুরু করলেই ,আঁচ বাড়িয়ে ,রান্নায় রসার পরিমান ভেবে নিয়ে জল দিলাম | সর্ষে বাটার রসা টগবগ করে ফুটে উঠতেই ,কড়াইতে দিয়ে দিলাম ,ভেজে রাখা ল্যাটামাছগুলো | ভাজা মাছ সমেত ২-১ বার
রসা ফুটে গেলেই ,আঁচ কমিয়ে রান্না মজতে দিলাম | দিলাম কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা |
কিছুক্ষনের মধ্যেই সারা রান্নাঘর ভরে উঠলো ,রান্নার এক সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি গন্ধে | জিভে জল আনার মতো গন্ধ | রান্না হয়ে এসেছে মনে হতেই ,রান্নার স্বাদ চেখে নিলাম | বাহ্ ! বাহ্ ! দারুন ! দারুন ! মন
আনন্দে ভরে উঠলো | এবার আঁচ বাড়িয়ে রসার পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বব্ধ করে দিলাম | ল্যাটা - সর্ষের - ঝাল তৈরি | রান্না ঢেলে রাখলাম একটা পাত্রে | দিলাম হালকা ঢাকা | রইলাম মধ্যাহ্ন ভোজের অপেক্ষায় |
গরম ভাতে ল্যাটা -সর্ষের ঝাল অপূর্ব ...অপূর্ব !! ভীষণ টেস্টি টেস্টি আর ভীষণই মুখরোচক | সত্যি বলতে কি স্বাদ অনুভব করতে গেলে ........
...রান্না অবশ্যই চেখে দেখতেই হবে | জিওল মাছকে একবার রান্না ঘরে নিয়ে আসুন | রান্না করুন আর জমিয়ে জমিয়ে খান | দেখবেন খুব খুব ভালো লাগবে | মনে হবে বার বার খাই |
ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন |
Comments