top of page

আচারের - তেলে - মুখরোচক - উচ্ছে - কাঁঠালবীজ


গ্রীষ্ম - বর্ষা ঋতুতে একটা ফল তো মোটামুটি অল্প সময়ের জন্যই বাজারে দেখতে পাওয়া যায় | আর ফলটি হলো ....কাঁচা এঁচোড়ের পক্ক রূপ ...কাঁঠাল | গাছ - পাঁঠা বা এঁচোড় আমরা অনেকেই খুবই পচ্ছন্দ করি | কিন্তু এমন কিছু মানুষ আছেন যারা বলতে গেলে একেবারে কাঁঠাল - পাগল | তারা সারাবছর অপেক্ষা করে এই সময়টাকে পাওয়ার জন্য .......জমিয়ে পাকা কাঁঠাল খাওয়ার জন্য |



গ্রামে গ্রামে যদি ঘোরা যায় ,দেখা যাবে ...একটু বাগান সমেত ঘরগুলোতে একটা না একটা কাঁঠাল গাছ আছেই আছে | আর এই পাকা কাঁঠালের মরশুমে তারা জমিয়ে খায় .....কাঁঠালের রস দিয়ে কড়কড়ে মুড়ি | দারুন... খেতে লাগে !!! আমাদের এই ফলে - ফুলে ভরা বাংলার ১২ মাস ই কোনো না কোনো ফলের মরশুম | আর শরীর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ,আমাদের মাঝে মধ্যেই , মৌসুমী ফল অবশ্যই খাওয়া উচিত |


আমারই এক প্রতিবেশীর বাড়িতে ২টো কাঁঠাল গাছ আছে | খুবই ভালো জাতের | এঁচোড় যেমন সবাইকে খাইয়েছে ,তেমনি পাকা কাঁঠালের বেশ কয়েকটা করে কোয়া ,আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি দিয়েও গেছে | ছোট ছোট খাজা কাঁঠালের কোয়া | খেতে দারুন !! আমরা সব্বাই মজা করেই খেলাম | কিন্তু আমার দৃষ্টির বেশির ভাগটাই ছিল ,রসালো কোয়ার মধ্যে থাকা কাঁঠালের বীজগুলোর দিকে | খেতে যে আমার খুবই ভালো লাগে | কাঁঠালবিচি দিয়ে ডাল , কাঁঠালবিচি ভাতে ,কড়কড়ে করে ভাজা ,মুখরোচক চচ্চড়ি মাঝে মধ্যে অসাধারণ লাগে | দারুন এক নতুন স্বাদে মুখ যেনো ভরে যায় |

কাঁঠালের বীজ নানা গুনের আধার | আইরণে ঠাসা , কাঁঠালের বীজ শরীরে রকল্পতা দূর করে | তাছাড়া ভিটামিন সমৃদ্ধ কাঁঠালের বীজ চোখের দৃষ্টিশক্তিকে করে তোলে সবল করে ,ত্বক কে ময়শ্চার করে ত্বক কে করে সুস্থ,চুলকে রাখে ভালো | পেট ভালো রেখে হজম শক্তি বাড়ায় | ফাইবারে ভরা কাঁঠালের বীজ, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো ভয়ঙ্কর রোগকেও দূরে ঠেলে শরীরকে আরাম দিতে পারে | আরো ও নানা নানা গুনে সমৃদ্ধ |


সবার পাতে পরে থাকা কাঁঠালের বীজগুলো আমি তুলে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ,একটা ছোট্ট ঝুড়িতে শুকোতে দিলাম | জল টা কাঁঠালের বীজের গা থেকে টেনে গেলেই ,বীজগুলো দিয়ে মজাদার কিছু রেঁধেই ফেলবো .............


আজকে বাজারে থলিতে ...অন্য সবজির সঙ্গে খুব কচি কচি কয়েকটা উচ্ছে রয়েছে না ?.....!উচ্ছে তো আবার টাটকা টাটকা রাঁধলেই ভালো .....| উচ্ছের মতো ঔষুধীগুনের ভরা সবজি বোধহয় খুব কমই আছে | একটা কথা যে বড়োই ঠিক ........উচ্ছে এলে রোজকার পাতে - রোগ জ্বালা নেই সাথে | কচি কচি উচ্ছে সব রোগেরই ....এক মহৌষধ | হঠাৎই মনে হলো ...উচ্ছের ..সঙ্গে কাঁঠালের বীজগুলো একটু ভাজা ভাজা করে নিলে ,গরম ভাতে দারুন দারুন হবে ! সঙ্গে ভাজার সময় একটুখানি আমের আচারের তেল দিয়ে দেব | উফঃ ! .....আর ভাবা যাচ্ছে না | দারুন চিন্তা !....দারুন চিন্তা !যবে থেকেই কাঁঠালেরবিচিগুলো দেখেছি ,.....তবে থেকেই মনে হচ্ছে কবে খাবো ?....কবে খাবো ?.....আর কিভাবে খাবো | যাক বাঃবা ....আজকে সুরাহা হয়েই গেলো .......মোটকথা মুখের স্বাদ ও বাড়বে আর রোগভোয় ও একটু তো কম হবেই ......


উপকরণ :-


  • ছোট ছোট উচ্ছে - কচি কচি ১৫০-২০০ গ্রামের মতো ( প্রতিটি লম্বালম্বি ৪ টুকরো করে কাটা )

  • কাঁঠালেরবিচি - ১০০-১৫০ গ্রামের মতো ( খোসা ছাড়িয়ে লম্বালম্বি ২টুকরো করে কেটে রাখা )

  • আলু - ২টো একটু ছোট সাইজের ( খোসা সুদ্ধো একটু সরু সরু লম্বালম্বি করে কাটা , তবে খোসা ছড়িয়ে কাটা আলু দিয়েও রান্নাটা করা যাবে )

  • কাঁচালঙ্কা - ১টা ফাটিয়ে নিয়ে ফোরণে আর ২টো টুকরো টুকরো করে ,নামানোর আগে রান্নায়

  • শুকনোলঙ্কা - ২ টো , একটু করে ফাটিয়ে নিয়ে ফোরণে দেওয়ার জন্য

  • পাঁচফোড়ণ - ১/২ চামচের মতো

  • হলুদগুঁড়ো - ১/২ থেকে ১ চামচের মতো

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো

আর.? ? ?.................................................

আর ........আচারের তেল - ১/২ চামচ থেকে বড়ো জোর ১ চামচ,অল্প দিলেই রান্না .....দারুন ! দারুন ....!


পদ্ধতি :-


রান্নাঘরে ঢুকেই ভাবলাম ,প্রথমে তেতো ভাজার রান্নাটা করবো না ....করবো সব রান্নার শেষে | গরম ভাতে গরম ভাজা দিয়ে খাওয়ার শুরুটাই তো এক্কেবারে ঠিক ঠাক ....তাইনা ? ধীরে ধীরে সব রান্না সেরে নিলাম | এবার রাঁধবো আচারের তেলে মুখরোচক উচ্ছে - কাঁঠালবিচি ভাজা |



রান্না শুরুর প্রথমেই একে একে কাটা উচ্ছে ,কাটা কাঁঠালবিচি জলে ধুয়ে , জল ঝরিয়ে নিলাম | জলে ভেজানো খোসাসুদ্ধ কাটা আলুর টুকরো গুলো ও জলঝরিয়ে জল থেকে তুলে রাখলাম | গ্যাসে কড়াই চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | তেল গরম হলে কেটে রাখা উচ্ছে গুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম | দিলাম এক চিমটে হলুদ , এক চিমটে নুন , কয়েকদানা চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কাটা উচ্ছের টুকরোগুলো মুচমুচে করে ভেজে তুলে রাখলাম |



এখন কড়াইতে থাকা অল্প তেলের মধ্যেই আর একটু তেল দিলাম | তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে দিলাম ,২টো ফাটানো শুকনোলঙ্কা ,১টা ফাটানো কাঁচালঙ্কা আর পাঁচফোড়ন | দিলাম কাটা আলুর টুকরোগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে আলুগুলো ভালো করে ভাজতে লাগলাম | দিলাম কাঁঠালেরবিচির টুকরোগুলো | আবার সব আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নেড়েনেড়ে ভাজটা ভাজতে ,আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম ,হলুদ ,নুন আর চিনি |


সমস্ত নাড়তে নাড়তে ভাজা ভাজা গন্ধ বার হতেই ...কড়াইতে একটু জল ছিটিয়ে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম | মাঝে মাঝেই ঢাকা খুলে রান্নায় অল্প জল ছিটিয়ে দিয়ে আবার ঢাকা দিয়ে রান্না মজতে দিলাম | এইভাবে কয়েকবার হওয়ার পর ,আলু আর কাঁঠালবিচি নরম নরম হয়ে আসতেই ,রান্নায় দিলাম ভাজা উচ্ছের টুকরোগুলো |


আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ নাড়তে নাড়তে , বেশ মজে এসেছে মনে হতেই ,রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | নাঃ......হয়েই গেছে ...আর খেতে ও দারুন হয়েছে | এইবার আঁচ কমিয়ে ,কড়াইয়ের মিশ্রনের মধ্যে দিলাম অল্প একটু আমের আচারের তেল | আঁচ বাড়িয়ে এলবার ভালো করে নেড়ে নিয়েই গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | রান্না কড়াইতে ঢাকা দিয়ে রাখলাম |


খাওয়ার শুরুটা যে এতো সুন্দর স্বাদে ভরে যাবে ,তা আমরা বুঝতেই পারিনি| অপূর্ব ! অপূর্ব ! কি ভালো

যে লাগছে ......মনে হচ্ছে আজ পুরো ভাতটাই আচারের তেলে উচ্ছে - কাঁঠালবিচির মুখরোচক ভাজা দিয়েই শুধু খাবো.........আজ শুধু ভাজাটা দিয়েই .........


কত হালকা রান্না | রান্নায় নেই কোনো মশলার বাহুল্য | শুধু একটু হলুদ ,একটু পাঁচফোড়ন ,একটু নুন ,একটু চিনি .....| কিন্তু রান্না হলো অসা.......ধারণ স্বাদে ভরা | যেটা মুখে দিতেই সবার এতো এতো আনন্দ ......!!!

আর এটা তো একশো ভাগই ঠিক যে .......সবার আনন্দই মানে ..... আমারই আনন্দ .................


খুব খুব ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন |




10 views0 comments

Comments


bottom of page