করমচা খুব সুন্দর দেখতে এক ফল !! পাকাতে লাল লাল অপূর্ব !! ছোট ছোট একথোকা লাল টুকটুকে করমচা চোখের সামনে থাকলে , চোখ তো বার বার সেদিকে যাবেই যাবে | ভিটামিন এ , ভিটামিন সি তে ভরপুর , নানা ধরণের খনিজ পদার্থের খনি , পুষ্টিগুণে ঠাসা এই করমচা ফল | ঔষধীগুনে ভরা এই ফল মাঝে মাঝে ই আমাদের রান্নাঘরে আনা যেতেই পারে | তাতে আমাদের রুচি তো বাড়বেই , বাড়বে আমাদের ইমিউনিটি | বিশেষ বিশেষ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক অনেক বেড়ে যাবে
সকালে ঘুম ভেঙে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি | অসহ্য গরমে রাতে খুব ভালো ঘুম হয়নি | ভোর ভোর বিছানা ছেড়েছি | সকালের চা তৈরি করে , এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম | ভোরের হালকা হাওয়াটা বেশ ভালো লাগছে | এদিকে সময় বাড়ার সাথে সাথে , প্রতিমুহূর্তে রাস্তায় কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড় ও বেড়ে চলেছে | হাওয়ার তাপ ও যেনো বেড়ে যাচ্ছে |
যাই ঘরে ঢুকি , দিনের কাজ শুরু করি , ভেবে ফিরতেই চোখে পড়লো সবজি ভরা ঠেলাটার দিকে | নানা সবজিতে ভরা , কিন্তু আমার চোখ বার বার চলে যাচ্ছে , ঠেলায় রাখা একগুচ্ছ লাল টুকটুকে করমচার দিকে | সকালের আলোটা যেনো ওদের উপরেই পড়েছে | ঝলমল ঝলমল করছে | আর আমার মন বার বার মনে করে ফেলছে ...করমচার টকঝালমিষ্টি চাটনির কথা !!
এই গরমে আমাদের সকলেরই খাওয়ার পাতের সব চাইতে পছন্দের মেনু ...চাটনি | মুখরোচক আর চটপটা স্বাদের চাটনি |
ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলাম ঠেলা - ওয়ালার কাছে | কিনে ফেললাম ৫০০ গ্রাম করমচা | দারুন দেখতে আর খুবই টাটকা | খুশি খুশি মনে ভাবলাম , জমিয়ে রাঁধবো আর সবাই মিলে জমিয়ে খাবো | এদিকে সময় তো বসে থাকবে না | তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে ঢুকে করমচাগুলো রেখেই জলখাবার তৈরিতে মন দিলাম | আগে প্রাতঃরাশ ..তারপর সারাদিনের কাজ | .........আমাদের প্রাতঃরাশ শেষ | শুরু করছি লাঞ্চের মেনু | আজ প্রথম মেনু ...টকঝালমিষ্টি - স্বাদের - করমচার চাটনি (Karamcha - Chatni) |
উপকরণ :-
করমচা - ৫০০ গ্রাম , অর্ধেক করে কেটে , ভেতরের বীজটা বাদ দিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখা
পাঁচফোড়ন - ১ চামচ
গোটা কালো সর্ষে - ১ চামচ
গোটা শুকনোলঙ্কা - ৬-৭টা , কয়েকটা ফোরণে দেওয়ার জন্য , কয়েকটা ভাজা মশলা তৈরির জন্য
গোটা জিরে - ২ চামচ মতো , ভাজা মশলা তৈরির জন্য
হলুদগুঁড়ো - চা চামচের ১/৪ ভাগ , সামান্য
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো ( সাদা তেলেও রান্না করা যেতে পারে )
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমেই , গ্যাস জ্বালিয়ে কড়াই চাপলাম | কড়াইতে দিয়ে দিলাম ২ চামচ গোটা জিরে আর ৪টা গোটা শুকনোলঙ্কা | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে , জিরে আর লঙ্কা নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | লঙ্কা আর জিরের খুব সুন্দর ভাজা ভাজা গন্ধ বার হতে শুরু করলেই , গ্যাস বন্ধ করলাম | ভাজা জিরে আর লঙ্কা মিক্সিতে নিয়ে নিলাম | মিহি করে বেটে নিয়ে , চাটনির জন্য ভাজা মশলা তৈরি করে রাখলাম |
আবার গ্যাস জ্বালালাম | কড়াই চাপিয়ে দিলাম প্রয়োজনমতো সর্ষের তেল | তেল ভালোমতো গরম হয়ে উঠলেই আঁচ কমিয়ে ফোড়ন দিলাম , গোটা কালো সর্ষে , পাঁচফোড়ন আর ৩টে গোটা ফাটানো শুকনোলঙ্কা | ফোরণের গন্ধ বার হতে শুরু করলেই , কড়াইতে ছেড়ে দিলাম জল ঝরানো কেটে রাখা করমচাগুলো | আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে দিলাম | কড়াইতে দিলাম খুব অল্প হলুদগুঁড়ো , প্রয়োজনমতো নুন | আঁচ বাড়িয়ে করমচার টুকরোগুলো ভাজতে লাগলাম | কি সুন্দর অপূর্ব একটা লোভনীয় গন্ধ !!!
করমচা সুন্দর ভাবে ভাজা হয়ে গেছে মনে হতেই দিলাম ১৫০ থেকে ২০০ গ্রামের মতো চিনি | চিনি কমবেশি হবে , করমচার টক ভাবের উপর | যারা একটু টক টক চাটনি পছন্দ করেন , চিনির পরিমান কম হবে | যাদের পছন্দ মিষ্টি মিষ্টি , তাদের জন্য রান্নায় একটু বেশি চিনি | যাহোক রান্নায় চিনি দেওয়ার পর , সমস্ত ভালো করে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম | চিনি গলে রান্নাতে মিশে গেলে অল্প একটু জল দিলাম | আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে চাটনি মজতে দিলাম |
রান্না থেকে ছড়ানো গন্ধ থেকেই মনে হচ্ছে , রান্না মজে গেছে | ঢাকা খুলে রান্নার স্বাদ দেখে নিয়ে ১ চামচ থেকে ১.৫ চামচ মতো, প্রথমেই তৈরি করে রাখা ভাজা মশলার গুঁড়ো রান্নায় দিয়ে দিলাম | বেশি আঁচে রান্না সুন্দর করে আরো খানিকটা মজিয়ে নিলাম | তৈরি হয়ে গেলো টকঝালমিষ্টি - স্বাদের - করমচার ....চাটনি !!!
লাঞ্চে টকঝালমিষ্টি করমচার চাটনি (Karamcha - Chatni) সব্বাইয়ের খাওয়ার মুডটাই আনন্দে ভরিয়ে তুললো | সুন্দর লোভনীয় স্বাদের চাটনি জিভের স্বাদ যেনো অনেকটাই বাড়িয়ে দিলো | রুচি !! রুচি !!! অনেকদিন বাদে খাওয়ায় রুচিটাও অনেক বেড়ে গেলো | খুব ভালো লাগছিলো | সবাই এনজয় করছিলাম | নতুন স্বাদে , যেনো নতুন চমক এসে গেলো | আমরা সবাই খুশি | খুব খুব খুশি .......
খুশিতে থাকুন | আনন্দে থাকুন | ভালো থাকুন | আর ?? আর অবশ্য অবশ্যই অনেক অনেক সুস্থ থাকুন |
Comments