top of page

কাঁচা - কুমড়োর - ডালনা


কুমড়ো !!! বাঙালির রান্নাঘরের এক বিশেষ রান্নার সবজি উপকরণ | বলতে গেলে সবারই পরিচিত এক দারুন স্বাদে ভরা সবজি | কুমড়োর ছক্কা সঙ্গে গরম গরম ফুলকো লুচি ...... সব বাঙালিরই ভীষণ ভীষণ পছন্দের এক ডিশ |

আর কুমড়ো তো খুবই উপকারী প্রাকৃতিক রঙে রাঙা এক সবজি | এন্টি - অক্সিডেন্টের এক দারুন আধার |ঔষধীগুনে ভরপুর | চোখ ভালো রাখতে ,হাড় মজবুত করতে , হার্ট সবল রাখতে ,ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে , শরীরে ডায়াবিটিসের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে ,হজম শক্তিকে সবল করতে ,বার্ধ্যকের মলিনতা দূরে সরিয়ে শরীরকে সতেজ রাখার চেষ্টাতে ,আরো নানা নানা ধরণের রোগের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে এর বোধহয় কোনো তুলনাই হয়না |

এবার বলি , পাকা কুমড়োর নানা পদ তো বেশ মুখরোচকই লাগে , তবে কাঁচা কুমড়োর রান্নাও কিন্তু খেতে বেশ টেস্টি টেস্টি | আজ আমি খুব মুখরোচক করে কাঁচা কুমড়োই রান্না করছি | আমার রান্নাঘরে রয়েছে খুব কচি আর ছোট মতো একটা কাঁচা কুমড়ো | খানিকটা ছোলাও কাল ভিজিয়েই রেখেছিলাম | মনে হলো যদি আলু ,ছোলা দিয়ে কাঁচা কুমড়োর ডালনা রাঁধি , তবে বেশ ভালোই হবে | গ্রাম বাংলার মানুষজনের এক বিশেষ বিশেষ পছন্দের পদ | তবে .কিন্তু ...আমাদের ও খুব পছন্দের ....


দুপুরের প্রথম পাতে গরম গরম ভাতের সঙ্গে গরম গরম ডাল , কাঁচা কুমড়োর ডালনা আর এক টুকরো লেবু ......কত সুন্দর স্বাদে যে ভরিয়ে দেয় আমাদের খাবার টেবিল ......সেটা আমরা যারা এনজয় করি ,তারাই অবশ্য অবশ্যই জানি |

তবে একটা বিশেষ কথা ,কাঁচা কুমড়ো কিন্তু খোসা শুদ্ধ রান্না করলেই ভালো আর খোসা সমেত কচি কাঁচা কুমড়োর রান্না করা পদ খেতে ও দারুন লাগে | তাহলে ঠিক হয়ে গেলো আজ দুপুরের খাওয়ার পাটের প্রথম পদ রাঁধতে চলেছি , ছোলা - আলু - দিয়ে কাঁচা কুমড়োর ডালনা | রান্নার সব উপকরণ রান্না ঘরে গুছিয়ে রাখলাম | সকালের জলখাবারের পাটাপাটি শেষ করেই , প্রথমেই রাঁধবো কাঁচা কুমড়োর তরকারি |


উপকরণ :-

  • কাঁচা কুমড়ো - গোটা একটা ,খুব কচি ,খোসা সমেত ডুমো ডুমো করে কেটে ,ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা |

  • আলু - ৩-৪টি ,মাঝারি সাইজের , খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে ,জলে ধুয়ে জল ঝরানো

  • ভেজা ছোলা - ১ কাপ মতো

  • তেজপাতা - ৩-৪ টি

  • গোটা শুকনোলঙ্কা - ৪-৫টি ,একটু করে ফাটানো

  • পাঁচফোড়ন - ১ চামচ

  • হিং - ১ চামচ মতো , রান্নায় একটু অন্য চমক আনতে

  • আদা - ১/২ ইঞ্চি মতো মিহি করে কুচানো

  • কাঁচালঙ্কা - গোটা ৩-৪টি ,একটু করে ফাটানো , ঝাল নিজের নিজের পছন্দমতো

  • হলুদগুঁড়ো - ১ চামচ

  • জিরেগুঁড়ো - ১ - ১.৫ চামচ

  • ধনেগুঁড়ো - ১ চামচ

  • লঙ্কাগুঁড়ো - ১ - ১.৫ চামচ

  • গরম মশলা গুঁড়ো - ১/২ চামচ

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো

  • ঘি - ১ - ২ চামচ


পদ্ধতি :-


প্রথমে গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল বেশ ভালো মতো গরম হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিলাম পাঁচফোড়ন আর ফাটানো শুকনোলঙ্কাগুলো | দিলাম ধুয়ে রাখা কাটা আলুর টুকরোগুলো ,ভেজানো ছোলাগুলো আর কুচানো আদা | বেশি আঁচে আলুর টুকরোগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে আঁচ কমিয়ে দিলাম অল্প হিং ,হলুদগুঁড়ো , অল্প নুন আর প্রয়োজনমতো চিনি | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে ভাজতে লাগলাম |

আলুর টুকরোতে হালকা লালচে রং ধরে এলে ,কড়াইতে দিলাম কাঁচা কুমড়োর কাটা টুকরোগুলো ,একটু ধনেগুঁড়ো ,একটু জিরেগুঁড়ো , একটু লাল লঙ্কাগুঁড়ো | আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ কষতে লাগলাম | খুব সুন্দর গন্ধে রান্নাঘর ভরপুর |

আঁচ বাড়িয়ে রান্নায় অল্প একটু জল দিয়ে নেড়ে নিয়ে ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম | কিছুক্ষন বাদে অপূর্ব এক সুগন্ধ রান্নাঘরে লুটোপুটি খেয়ে চলেছে মনে হতেই ,ঢাকা খুলে , প্রথমেই রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | নাঃ! মনে হচ্ছে সব ঠিকঠাকই হয়েছে ,খেতে তো দারুন লাগছে !! ভীষণ ভীষণ টেস্টি টেস্টি !!!

রান্নায় দিলাম খুব অল্প গরম মশলার গুঁড়ো , অল্প ঘি , ২-১ টা ফাটানো গোটা কাঁচালঙ্কা | আঁচ বাড়িয়ে রসার পরিমান ঠিক করে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিলাম | রান্না কুমড়োর ...অপূর্ব গন্ধে আমার রান্নাঘর মো... মো .... করছে | জিভে যেনো জলে ভরে আসছে |কড়াই থেকে রান্না করা কুমড়োর তরকারি একটা পাত্রে ঢেলে নিয়ে খাবার টেবিলে রেখে দিলাম .....দুপুরের অপেক্ষায় |


দুপুরের খাওয়ার পাতে গরম ভাত ,গরম ডাল ,একটুকরো লেবুর সঙ্গে চটপটা স্বাদের কাঁচা কুমড়োর তরকারি যে কি অসাধারণ লাগছিলো , সেটা বোধহয় ভাষায় বোঝানো একটু কঠিনই | বুঝতে গেলে ...খেতে হবে | তবে আমাদের খাওয়ার শুরুটা এতো স্বাদের আর এতো তৃপ্তির হলো যে , খাওয়ার শেষেও সেই আনন্দের রেশ বয়েই চললো .......বয়েই চললো ........


সব্বাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন , থাকুন অনেক অনেক আনন্দে |


15 views0 comments

Comments


bottom of page