top of page
Writer's pictureKaveri Nandi

জিরে - বাটায় - পার্শেমাছ


'' বাংলা আমার সর্ষে ইলিশ ,চিংড়ি কচি লাউ .....বাংলা পার্শে মাছকে ধুয়ে জিরের বাটায় দাও'' .... জিরের বাটায় পার্শে মাছ ....বাঙালির রান্নাঘরের এক অসাধারণ মেনু। বহু যুগের মেনু।সত্যি ভাবলেও অবাক লাগে এই বাংলার ঘরে ঘরে কতো শত রন্ধন পটিয়সী নারীরা ....কতো কতো রান্নার স্বাদে তাদের রান্নাঘরে আনন্দের ঢেউ বইয়ে দিতেন ....আর সেই ঢেউয়ের ধারা আজও কিন্তু সমানতালেই বয়েই চলেছে ....বয়েই চলেছে ....। সেই অনন্য স্বাদের আনন্দের ঢেউ কে ভোলা যাবেই না। আর তাইতো ......''বাংলা ভুলি কি করে ,বাংলা বুকের ভিতরে ''.....বাংলাকে ভুলতে পারবোই না ......ভুলতে তো কখনোই চাইনা.......তাই কখনো ভুলবোই না।



আজ সকালে মাছের থলি থেকে ছোট ছোট পার্শে মাছগুলো যখন বের করে রাখছি ,তখনই ঠিক করে ফেললাম .....আজ দুপুরে রাঁধবো জিরে বাটা দিয়ে পার্শে মাছ । পার্শে মাছ খুবই মিষ্টি মাছ। জিরে বাটা দিয়ে রান্না করলে ,গরম ভাতে এই ছোট ছোট মাছগুলো অসাধারণ লাগে। আগে আমাদের মা ,ঠাকুমা দিদিমারা শিল - নোড়ায় গোটা জিরে বেটে নিয়ে বিভিন্ন রান্নায় দিতেন। আর শিল - নোড়ায় বাটা গোটা জিরে দিয়ে পার্শে মাছ রান্না ...এক অপূর্ব সুন্দর স্বাদের মেনু।


এখনতো আমরা সবাই ,বলতে গেলে সর্বক্ষণই ঘরে বাইরে কর্মব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার মধ্যে ও সংসারকে তো রাখতেই হবে সুন্দর করে। আজ অনেক ঘরেই শিল - নোড়া নেই ,কিন্তু একেবারেই চিন্তা করার কিছু নেই। এখন আছে সুন্দর সুন্দর গুঁড়ো মশলা ,অনেকটাই তৈরি মশলা।যা আমাদের রান্নাকে করে দেয় অনেক সহজ আর একটু তাড়াতাড়ি।আর এই জিরে গুঁড়ো দিয়ে রান্না পার্শে মাছ ও কিন্তু পাতে কেউই ফেলে যাবেনা। দেখাযাবে চেটেপুটে মুহূর্তেই সব সাফ। বড়োই স্বাদের রান্না যে !


জিরে বাটা দিয়ে রান্না পার্শে , আমার বাড়ির সবারই খুব পছন্দের মেনু। আমি আজ জিরে বাটা সঙ্গে অল্প জিরে গুঁড়ো দিয়ে পার্শে মাছ রাঁধবো ।তাই কিছুটা গোটা জিরে জলে ভিজেয়ে দিলাম। দুপুরে পার্শে মাছ রান্নার আগে ভেজানো গোটা জিরে মিহি করে বেটে নিলাম। (আমি শিল- নোড়াতে বেটেছি,তবে মিক্সিতেও একইভাবে বাটা যায় )


উপকরণ :-


  • পার্শে মাছ - ৫০০ - ৬০০ গ্রাম ( খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে পরিষ্কার করা )

  • টমেটো - ১টি ছোট সাইজের ( ছোট ছোট করে কুচানো )

  • গোটা জিরে - ২-৩ চামচ (কিছুটা বাটা আর অল্প কয়েকটা ফোরণের জন্য )

  • গোটা শুকনোলঙ্কা - ২-৩টি ( একটু করে ফাটানো ,ফোরণের জন্য )

  • জিরে গুঁড়ো - ১-২ চামচ

  • হলুদ - ২-২.৫ চামচ

  • লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১-২ চামচ

  • কাঁচালঙ্কা - ৪-৫টি গোটা

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো ( এই রান্নাটা সর্ষের তেলেই কিন্তু বেশি ভালো লাগে )


পদ্ধতি :-


মাছ ভালো করে ধুয়ে নিয়ে নুন আর হলুদ গুঁড়ো মাখিয়ে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে মাছ ভাজার মতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই ,আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়া করে সব পার্শে মাছ ভেজে ফেললাম। কড়াই পরিষ্কার করে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হলে ফোরণে দিলাম ফাটানো ২-৩টে শুকনোলঙ্কা আর কয়েকটা গোটা জিরে। দিলাম কুচানো টমেটো। আঁচ বাড়িয়ে একটু নাড়াচাড়া করে

দিলাম ,একটু জল মেশানো বাটা জিরে। মিশ্রণ নাড়াচাড়া করতে করতে ,কড়াইতে দিলাম ,হলুদগুঁড়ো ,লাল লঙ্কাগুঁড়ো ,১ চামচ মতো জিরে গুঁড়ো ,নুন আর রং আর স্বাদের জন্য কয়েকদানা চিনি।


কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ নাড়তে নাড়তে জল টেনে গিয়ে ,তেল বেরোতে শুরু করলেই ,রসার পরিমান ভেবে কড়াইতে জল দিলাম । রসা ফুটে উঠলে ভাজা পার্শে মাছ গুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম।


অল্প কিছুক্ষন ফোটার পর ,রান্নার স্বাদ দেখে নিয়ে ,রসার পরিমান ঠিক করে নিলাম।কড়াইতে রান্নার উপর ছড়িয়ে দিলাম ১ চামচ মতো কাঁচা সর্ষের তেল আর কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা । ২-১ বার ফুটতেই গ্যাস বন্ধ করলাম। তৈরি..... জিরে বাটা দিয়ে পার্শে মাছ রান্না। পার্শে মাছের মিষ্টি স্বাদে,রান্নার স্বাদ ও হয়ে উঠেছে একেবারে অপূর্ব !


দুপুরে খাবার টেবিলে সবার নানা প্রসংশা নানা আনন্দ নানা উচ্ছাস প্রকাশ তো পাচ্ছিলোই ,কিন্তু নিজে মুখে দিতেই .....আমার মন ও ভরে গেলো অনেক অনেক আনন্দ আর অনেক তৃপ্তিতে । এই ছোট ছোট মাছ গুলো স্বাদে যেমন ভরা তেমনি খাদ্যগুণেও ভরা। আর তাইতো ভোজনরসিক বাঙালির ঘরে ছোট মাছের এতো কদর এতো চাহিদা।


মজা করে, আনন্দ করে, অনেক অনেক উপভোগ করে ভালো ভালো খান। সুস্থ থাকুন , থাকুন আনন্দে।


57 views0 comments

Comments


bottom of page