গরম তো ধীরে ধীরে এসেই গেলো .........ওরে বাঃবা ,ভাবলেই যেন একটু ভয় ভয় লাগে। অন্য কোনো কারণে নয় ,গরমে যে ভীষণ কষ্ট ,সেই কারণেই। মাঠে ঘাটে, পথে পথে ঘুরে ঘুরে যাদের কাজ ,তারাই বুঝতে পারেন কষ্টটা কতখানি ,তখন তারা খোঁজেন একটু স্বস্তি।আর খাওয়াতে যদি এই স্বস্তি একটু পাওয়া যায় ,তবে বোধহয় সবচাইতে আনন্দ হয়।
গরম কালের কিছু সবজি আছে ,যেগুলো এই সময়ে খেতে বেশ ভালোই লাগে।যেমন গরমের শুরুতে বাজারে আসা কচি কচি ঝিঙে। কুঁচো চিঙড়ি দিয়ে ঝিঙের তরকারী......সঙ্গে গরম ভাত ,গরম ডাল আর গন্ধরাজ লেবু। আহা -হা ভাবলেই জিভে জল এসেই যায়। আজকে আমার রান্নাঘরের মেনুতে এই পদ গুলোই রেখেছি। প্রথমেই রাঁধবো কুঁচো চিঙড়ি দিয়ে ঝিঙে। বাজার থেকে আনিয়েছি একেবারে কচি কচি ঝিঙে সঙ্গে কুঁচো কুঁচো চিংড়ি। চিংড়িগুলো তিড়িং -বিড়িং করে লাফাচ্ছে। দেখতে বড়োই ভালো লাগছিলো।
আমার বাড়িতে আমার ঠিক করা মেনুতে ,সবাই বেজায় খুশি। চা -জলখাবারের পাট শেষ করে খুব আগ্রহের সঙ্গে দুপুরের মেনু গুলো তৈরি করার জন্য আমি তৈরি। রান্নাঘরে ঢুকেই পড়লাম।
প্রথম পদ কুঁচো চিংড়ি দিয়ে ঝিঙের তরকারি...........
উপকরণ :-
কচি কচি ঝিঙে - ১ কিলো
কুঁচো চিংড়ি - ২৫০ গ্রাম
পেঁয়াজ -ছোট ছোট ৬টি (খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচানো )
কাঁচালঙ্কা - ৭-৮টি অর্ধেক করে চেরা ( ঝাল নিজের নিজের পছন্দমতো )
পাঁচফোড়ন - ১-১.৫ চামচ
হলুদ - ১-২ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্বতি :-
বাজার থেকে কিনে আনা ঝিঙে গুলো ভালো করে ধুয়ে নিলাম। প্রতিটি ঝিঙের বোটা কেটে ,চেখে দেখে নিলাম তেতো কিনা। মাঝে মাঝে ঝিঙের মধ্যে ২-১টি তেতো ঝিঙে থেকে যায় ,আর তাতে পুরো রান্নাই তেতো হয়ে যায়। কোনো ঝিঙে তেতো ছিল না। ঝিঙেগুলো ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে রাখলাম।
এবার কুঁচো চিংড়ি গুলো পরিস্কার করে ভালো করে জলে ধুয়ে নুন আর হলুদ মাখিয়ে রাখলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম। তেল গরম হলে আঁচ কমিয়ে দিলাম পাঁচফোড়ন ,কুচানো পেঁয়াজ আর
৩-৪টি চেরা কাঁচালঙ্কা। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে পেঁয়াজ ভাজতে লাগলাম। পেঁয়াজে হালকা বাদামি রং এলে ,আঁচ কমিয়ে দিলাম চিংড়ি মাছগুলো ,দিলাম হলুদ,নুন,চিনি। আঁচ বাড়িয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম ডুমো ডুমো করে কাটা ঝিঙের টুকরোগুলো। খুব ভালো করে সমস্ত উপকরণ নেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে ,একটা ঢাকা দিয়ে রান্না হতে দিলাম।
ঝিঙে থেকে জল বেরিয়ে রান্না হতে লাগলো। কিছুক্ষন বাদে ঢাকা খুলে নিয়ে আঁচ বাড়িয়ে রান্না একেবারে মাখো মাখো করে নিলাম। রান্না ঠিকমতো হয়ে এসেছে মনে হতেই ,রান্নার স্বাদ দেখে নিয়ে বাকি অর্ধেক করে কাটা কাঁচালঙ্কা গুলো কড়াইতে দিয়ে ,রান্না আরো কয়েকবার নেড়ে নিয়ে গ্যাস বন্ধ করলাম।
দুপুরের ঠিক করে রাখা সব পদ রান্না করে নিয়ে ,আমরা সবাই খাওয়ার টেবিলে পৌঁছে গেলাম।
ঝিঙে চিংড়ি খেতে যে কি অপূর্ব লাগছিলো ,তা কিন্তু বোঝানো বড়োই কঠিন। নিজের জিভে স্বাদ না পেলে কেউ বুঝতেই পারবে না। কতো সহজ রান্না....তেল ,মশলা কতো কম ,কতো হালকা ......কিন্তু খেতে কতো অসাধারণ।একবার রান্না করে খেয়ে দেখুন। সত্যিই মন ভরে যাবেই যাবে।
সবাই খুব ভালো থাকবেন ,আনন্দে থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন।
Commenti