আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণত ,চার -বেলা আহারের একটা ব্যবস্থা বহু বহু কাল থেকেই চলে আসছে। সকাল -বিকাল -দুপুর - রাত্রি। এর মধ্যে সকালের খাবারের গুরুত্ব কিন্তু সবচাইতে বেশি। দুপুরের খাওয়া -মানে দুপুরের খাওয়া। আমাদের কাছে এর গুরুত্ব একেবারে অন্যরকম।সারাদিনের মধ্যে স্পেশাল স্পেশাল ব্যবস্থা ,স্পেশাল আনন্দ আর স্পেশাল গুরুত্ব নিই আমরা এই খাওয়া দাওয়ার সময়ে। বিকালে একটু হালকা মুখরোচক খাওয়া দাওয়া আর রাতের খাওয়া দাওয়া তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হালকা বা খুবই হালকা।
ক-দিন ধরেই খালি বৃষ্টি আর বৃষ্টি।সকালেই মনে মনে ভাবলাম বিকালে সবার জন্য একটু টেস্টি টেস্টি ঘুগনি করে দেবো। হঠাৎ মনেহলো সয়াবিনের ঘুগনি করলে কেমন হয় ? প্রোটিনে ভরপুর সয়াবিন খাওয়া তো ভীষণই ভালো। এই পদ্বতিতে রাঁধলে সবাই মনে হয় দারুণই খাবে। বাড়ির কাউকে কিছুই না বলে , সকালেই মটর জলে ভিজিয়ে রাখলাম।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়েই বিছানা ছাড়লাম। সবাই জমিয়ে দুপুরের ভাত ঘুম দিচ্ছে। আজ ছুটির দিন। সবাই বাড়িতেই। আমি ভেবে নিলাম দুপুরে চা খাওয়ার আগেই ঘুগনি তৈরি করে ফেলবো। ঘুগনি পেঁয়াজ লেবু লঙ্কা কুচি দিয়ে বা মুড়ির সঙ্গে বা টোস্ট পাউরুটির সঙ্গে দারুন লাগবে। যার যেমন ইচ্ছে তেমনিই খাবে। মোটকথা ঘুগনি রান্না -জমাতেই হবে। তবেই আনন্দ।
উপকরণ :-
মটর - ২৫০ গ্রাম ( জলে ভেজানো )
সোয়াবড়ি - ৮০ গ্রাম মতো
কাঁচালঙ্কা -২-৩টি গোটা ,বাকি কুচানো
পেঁয়াজ - ৭-৮টি ( মিহি করে কুচানো )
রসুন - ১০-১২ কোয়া (খোসা ছাড়ানো )
আদা - ১ ইঞ্চি মতো ( খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে রাখা )
হলুদ ২-৩ চামচ
লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ২-৩ চামচ বা প্রয়োজনমতো
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর প্রথমে ,মিক্সিতে আদা কুচি ,ছাড়ানো রসুন কোয়া আর ২-৩টি গোটা কাঁচালঙ্কা দিয়ে বেটে নিলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো জল দিলাম। জল ফুটে উঠলে সোয়াবড়িগুলো কড়াইতে দিয়ে দিলাম। দিলাম এক চিমটে নুন। গরম জলে ফুটে সোয়াবড়িগুলো বড়ো বড়ো হয়ে যেতেই জল
থেকে তুলে জল ঝরিয়ে নিলাম। এদিকে জলে ভেজানো মটরগুলো প্রেসারকুকারে নিয়ে প্রয়োজনমতো জল দিয়ে ,প্রেসারকুকারের মুখ বন্ধ করে মাঝারি আঁচে গ্যাসে বসিয়ে দিলাম। কয়েকটি সিটি পড়ার পর প্রেসারকুকার বন্ধ করে দিলাম।গ্যাসও বন্ধ করলাম।
জল ঝরানো সোয়াবড়িগুলো ছোট ছোট টুকরো করে রাখলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই কুচানো সোয়াবড়িগুলো কড়াইতে দিয়ে ,আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে একটু ভাজা ভাজা করে কড়াই থেকে তুলে রাখলাম।
এবার আবার কড়াইতে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হলে দিলাম কুচানো পেঁয়াজগুলো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নরম নরম রাঙা করে পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে দিলাম ,কাঁচালঙ্কা-আদা -রসুনবাটা। ভালো করে কিছুক্ষন নেড়েচেড়ে নিয়ে দিলাম ,ভাজা সয়াবিনের টুকরোগুলো ,হলুদ ,লালঙ্কাগুঁড়ো ,নুন ,আর প্রয়োজনমতো চিনি। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে কষতে লাগলাম।
মশলার সুন্দর গন্ধ বেরোতেই জলে সেদ্ধ প্রেসারকুকারে রাখা মটরের দানা গুলো জল ছেঁকে কড়াইতে দিয়ে ,বেশি আঁচে সমস্ত উপকরণ কিছুক্ষন কষে নিয়ে দিলাম প্রেসারে রাখা মটর সেদ্ধর জল আর প্রয়োজনমতো আরো একটু জল।
ঘুগনীর ঝোল ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে ,হালকা একটা ঢাকা দিয়ে রান্না কিছুক্ষন হতে দিলাম। ঘুগনি মজে যেতেই কাঁচালঙ্কাকুচি গুলো কড়াইতে দিয়ে খুব ভালো করে বেশি আঁচে নেড়েচেড়ে নিয়ে ,ঘুগনীর স্বাদ দেখে নিলাম। ওহহো !!! কি দারুন হয়েছে। দারুন ! দারুন।
চায়ের সময় হয়ে গেছে। সবাই টেবিলে এসে গেছে। কই চা কই ? কিন্তু ........কেমন কেমন যেন একটা সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে ! কি রেঁধেছো? ঘুমিয়ে কিছুই বুঝতে পারিনি। আমি চুপিচুপি সবার কাছে গরম গরম চা আর সয়াবিনের ঘুগনীর বাটি চামচ দিয়ে এগিয়ে দিলাম। আনন্দে একেবারে টেবিলে হুল্লোড় পরে গেলো। খুব আনন্দ ! খুব আনন্দ !! খেয়ে সবাই আনন্দে আহ্লাদিত।
আনন্দে থাকুন । ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। আর ? খাওয়া দাওয়া আনন্দে করুন ,আনন্দে করুন আর অবশ্যই আনন্দে করুন।
Commentaires