আমাদের শীতের আমেজ ..............নানা আমেজে ভরা .......আর মূলতই খাওয়ার আমেজে | স্বাদে ভরা টাটকা টাটকা শীতকালীন শাকসবজি , নলেন গুড়ের রসে ভরা পায়েস -পিঠে ,চটপটা -মুখরোচক নানাধরণের চাটনির সঙ্গে ......নানা ধরণের চটপটা আর মুখরোচক খিচুড়ি | তবে একটা বিষয়ে অবাক হতেই হয় .... শীতকালের সবজি বলতেই .....নানা সবজির মধ্যে কিন্তু প্রথমেই মনে পরে ফুলকপি -- বাঁধাকপির কথা | আর বাঙালির ঘরে ঘরে বলতে গেলে প্রায় রোজই ফুলকপি - বাঁধাকপির কোনো না কোনো মেনু থাকেই ,আর খেতেও বেশ ভালোই লাগে |
তবে আজ একটু সকাল সকালই শীতের আমেজে ভরা লেপটা সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে এসেছি | আজ খুবই
আনন্দের দিন | ভাই বোনেরা বেড়াতে এসেছে | শীতের ঝলমল রোদের মতো আমার মনটাও আনন্দে ঝলমল ঝলমল করছে | আজ সকাল সকাল বাড়িতে বাজার ও ঢুকে গেছে | বাজারের থলি খুলে দেখি অন্যান্য তরিতরকারির সঙ্গে রয়েছে একটু বড়ো সাইজের আর খুবই টাটকা দু -টো ফুলকপি |
আজ তো আমরা সব্বাই পিকনিকের মেজাজেই আছি | সকালে করবো মজাদার জলখাবার | রাতে থাকবে বাসন্তী -পোলাও আর মাংস | তবে দুপুরে মেনুতে রাখবো হালকা ,অথচ মুখরোচক টেস্টি টেস্টি মেনুচাট | টাটকা টাটকা ফুলকপিগুলো দেখার পর থেকেই ভাবছি .....মুখরোচক করে ফুলকপির -ডালনা রাঁধলে কিন্তু গরম
ভাত আর গরম গরম ডালের সঙ্গে ভীষণই ভালো লাগবে |
তাহলে আজ আমাদের বাড়ির দুপুরের মেনু ....গরম গরম ভাত ,গরম গরম বেগুনভাজা,গরম গরম ডাল ,গন্ধরাজ লেবু ,রসালো চাটনি ....আর আমার পছন্দের - আমাদের বাড়ির সবার পছন্দের মুখরোচক ফুলকপির - ডানলা |........আরো কিছু মেনু তো থাকবেই | তবে খাওয়ার শুরুটা রুচিকর , স্বাদে ভরপুর করে তুলতে ,আজকে খুব টেস্টি টেস্টি করে রান্না করবো ....ফুলকপির -ডালনা |
খুশিতে ,আনন্দে ,নানা গল্প - মজায় শেষ হলো আমাদের সকালের জলখাবার | আরো একপাট চায়ে চুমুক সেরে .....লেগে গেলাম দুপুরের রান্নার প্রস্তুতিতে ...............ফুল কপিগুলো বেশ পরিষ্কার আর টাটকা | আর বেশি ভাবনা চিন্তা না করে কপি গুলো একটু বড়ো বড়ো টুকরো করে কেটে জলে ভিজিয়ে রাখলাম | আলু গুলো ও খোসা ছাড়িয়ে ৮ টুকরো করে কেটে নিয়ে জলে ভিজিয়ে দিলাম |
রান্না ঘরে ঢুকে প্রথমেই রাঁধবো ফুলকপির - ডালনা | তাই রান্নার বাকি উপকরণ গুলো ও যোগাড় করে ফেললাম |
উপকরণ:-
ফুলকপি -২ - টি বড়ো সাইজের ( বড়ো বড়ো টুকরো করে কাটা )
আলু - ৬ টি বড়ো সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে ৮ টুকরো করে কাটা )
টমেটো - ২ টি ছোট সাইজের ( কুচানো)
আদা বাটা - চা চামচের ২ চামচ
রসুন বাটা - চা চামচের ২ চামচ
কাঁচালঙ্কা বাটা - চা চামচের ৪ চামচ
গোটা জিরে - চা চামচের ১ চামচ
তেজপাতা - ২ টি
হলুদ - ১ থেকে ১.৫ চামচ
জিরে গুঁড়ো - ৪,৫ চামচ
লাল লঙ্কা গুঁড়ো - ১ চামচ ( ঝাল নিজের নিজের পছন্দ মতো )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো ( অবশ্যই একটু লাগবে রান্নায় রং আর স্বাদের জন্য )
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
ঘি - ১.৫ থেকে ২ চামচ
গরম মশলা - ১ চামচ
পদ্ধতি:-
গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে তেল দিলাম | তেল গরম হলে জল ঝরিয়ে ফুলকপি গুলো কড়াইতে দিলাম, দিলাম ১ চিমটে নুন আর এক চিমটে হলুদ |রাঙা করে ভেজে ফুলকপি তুলে রাখলাম | এবার কড়াইতে প্রয়োজনমতো আর একটু তেল দিয়ে দিলাম গোটা জিরে, জলে ধোয়া আলুর টুকরো গুলো আর ২ টি তেজপাতা |
বেশি আঁচে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে আঁচ কমিয়ে দিলাম হলুদ, নুন, চিনি | কিছুক্ষন নেড়ে চেড়ে নিয়ে দিলাম আদা বাটা, রসুন বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা | এবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সুন্দর করে কষতে লাগলাম ,দিলাম টমেটোর টুকরো গুলো |
মসলার সুন্দর গন্ধ বের হলেই ,আঁচ কমিয়ে দিলাম ভাজা ফুলকপির টুকরো গুলো আর জিরে গুঁড়ো, অল্প লাল -লঙ্কাগুঁড়ো | আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কয়েকবার নেড়েচেড়ে নিয়ে রসা গা মাখা -গা মাখা হবে, সেই পরিমান ভেবে নিয়ে রান্নায় জল দিলাম |
ঝোল টগবগ করে ফুটে উঠতেই আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্না কিছুক্ষন হতে দিলাম | আলু কপি সুসিদ্ধ হয়ে গেলে রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম | আঁচ বাড়িয়ে রসার পরিমান ঠিক করে নিয়ে দিলাম ১ চামচ গরম মশলা আর ২ চামচ ঘি | একটু নাড়াচাড়া করে গ্যাস বন্ধ করে দিয়ে রান্না একটা ঢাকা দিয়ে রেখে দিলাম |
দুপুরে খাবার টেবিলে খাওয়া শুরু হলো গরম ভাত, গরম ডাল , ফুলকপির ডালনা .......সঙ্গে আরো অনেক কিছু দিয়ে | কিন্তু ফুলকপির ডানলা মুখে দিয়েই ......সব্বাই যেনো একসঙ্গেই বলে উঠলো......আহা - হা - হা ....দারুন খেতে লাগছে | বাঃ .. বাঃ ..ফুলকপির - ডালনা তো বড়োই ভালো রেঁধেছো !....স্বাদেগুনে একেবারে অসাধারণ ! রান্নাটা খুব খুব ভালো হয়েছে |......... সবার কথাতে মনের ভয় ভয় ভাবটা কেটে গিয়ে আনন্দে ভরে গেলো |মনে হলো আজ দুপুরের খাওয়ার শুরুটা তাহলে ঠিকঠাকই হয়েছে ,সব্বার মনের মতো করতে পেরেছি বলতে গেলে বেশ ভালোই...........
আপনারা সব্বাই শীতকালকে উপভোগ করুন ......জমিয়ে ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া করুন ,হাসি - খুশি থাকুন | তাহলেই থাকবেন অনেক অনেক আনন্দে , অবশ্যই থাকবেন সুস্থ আর ভালো |
Comments