গরম !!! সেই গরম !------'এসো হে বৈশাখ ,এসো হে '---। বৈশাখ মাস এখনো আসেনি, কিন্তু সুন্দর বসন্তের রেশ ফুরিয়ে গিয়ে চারিদিক গরমেই ছেয়ে গেছে।বৈশাখ জৈষ্ঠ্য গ্রীষ্মকাল। গ্রীস্মকালকে আর কি বা বলি ---আসার সময়ের আগেই চলে আসে !আবার যাওয়ার সময় হলেও যেতে চায় না !অবাক কান্ড !ছয় ঋতু নিয়ে আমাদের ভারতবর্ষ। গ্রীষ্ম ,বর্ষা ,শরৎ, হেমন্ত ,শীত আর বসন্ত। আর আমাদের এই পশ্চিমবাংলায় ছয় ঋতুরই আভাস কিন্তু আমরা পাই।
যাই - হোক গ্রীষ্ম চলে এসেছে। একটু একটু গরমের দাবদাহও শুরু হয়েই গেছে ,আরো বাড়বে ----। এই সময়ে মাঠে ঘাটে,পথে প্রান্তে কাজ করা পরিশ্রান্ত মানুষজন যেমন একটু ঠান্ডা জল,ঠান্ডা শরবত ,ডাবের জল প্রভৃতি খেতে ভালোবাসে ,তেমনি পেট ঠান্ডা রাখতে ,শরীর মন ভালো রাখতে দুপুরের মেনু হালকাই বেশি পছন্দ করে।
আর সবচাইতে ভালো সেই হালকা মেনু ,যেটা আমার মনে হয় চিরদিনের ,চিরকালের সবার প্রিয় -- সেটা নানা ধরণের শুক্তোর মেনু। আদিকাল থেকে এই বাংলার ঘরে ঘরে শুক্তো এক স্পেশাল মেনু। স্বাদে গুনে অসাধারণ। ভীষণ ভীষণ উপকারী। হালকা তেল ,হালকা মশলা আর নানা রকম সবজি দিয়ে রান্না এক অপূর্ব মেনু। শুক্তো রান্নার অপূর্ব গন্ধে মন প্রাণ যেন ভরে যায়।সেই কথায় বলে না ; ঘ্রানেন অর্ধনম ভোজনম ! ঠিক তাই।
বাজারের থলি খুলে দেখি অনেক রকম সবজি। ভেবেই ফেললাম ,এই গরমে আজ আমার দুপুরের মেনু তে রাঁধবো ''দুধ- শুক্তো ''। গরম ভাতে প্রথম পাতে দুপুরের মেনু হিসাবে বড়োই ভালো ,বড়োই স্বাদিষ্ট।আর সবারই তো খুব প্রিয়। তাই নো চিন্তা ,নো ভাবনা ,শুধু -- মন দিয়ে শুক্তো রান্না।
উপকরণ :-
আলু - ৩-৪টি মাঝারি সাইজের ( খোসা সমেত আড়াআড়ি ৬ টুকরো করে কাটা )
বেগুন- ৩-৪টি ছোট সাইজের ( লম্বালম্বি ৪ টুকরো করে কাটা )
কাঁচাকলা - ২টি মাঝারি সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে মাঝামাঝি ২ টুকরো করে ,প্রত্যেক টুকরো লম্বালম্বি ৪ টুকরো করে কাটা )
মুলো- ২-৩ টি মাঝারি সাইজের ( প্রত্যেকটি মাঝামাঝি ২ টুকরো করে,প্রত্যেক টুকরো লম্বা লম্বি ৪ টুকরো করে কাটা )
বরবটি - ১০০ গ্রাম ( লম্বা লম্বা টুকরো করে কাটা )
সজনের ডাটা - ১০০ গ্রাম ( খোসা ছাড়িয়ে লম্বা লম্বা টুকরো করে কাটা )
সিম - ১০০ গ্রাম ( ২ দিক বাদ দিয়ে গোটা গোটা করে রাখা )
বড়ি -১৩-১৪ টি
আদা - ইঞ্চি খানেক ( থেঁতো করে রাখা )
রাঁধুনি - ১ চামচ
পাঁচফোড়ন - ১ চামচ
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো ( অবশ্যই লাগবে )
সাদা তেল - প্রয়োজনমতো
দুধ - ১ কাপ মতো
ঘি - ১-২ চামচ ( ইচ্ছে না হলে না ও দিতে পারেন ,আবশ্যক নয় )
পদ্বতি :-
প্রথমেই সমস্ত কাটা সবজি গুলো জলে ভালো করে ধুয়ে ,জল ঝরিয়ে রাখলাম। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হলে বড়িগুলো রাঙা করে ভেজে রাখলাম। এবার কড়াইতে প্রয়োজনমতো আর একটু তেল দিয়ে ,দিলাম রাঁধুনি আর পাঁচফোড়ন আর কাটা আলুর টুকরো গুলো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়তে লাগলাম। দিলাম থেঁতো করা আদা। আবার একটু নাড়াচাড়া করে দিলাম কাটা মুলোর টুকরোগুলো আর কাঁচকলার টুকরোগুলো। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে নাড়াচাড়া করে দিলাম বরবটি ,সজনেডাঁটার কাটা টুকরোগুলো আর প্রয়োজনমতো নুন ,চিনি। সমস্ত উপকরণ আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে ভালো করে নেড়ে নিয়ে দিলাম ,বেগুনের টুকরোগুলো। আঁচ বাড়িয়ে খানিকক্ষণ নেড়েনিয়ে আঁচ কমিয়ে ১ কাপ মতো জল দিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্নাটা কিছুক্ষন হতে দিলাম।
কিছু সময় পর ঢাকা খুলে দেখি ,সবজি থেকে ও জল বেরিয়ে শুক্তো বেশ ঝোল ঝোল হয়ে গেছে। এবার কড়াইতে দিলাম ভাজা বড়িগুলো। আঁচ বাড়িয়ে শুক্তো হতে দিলাম। শুক্তো মাখা মাখা হয়ে গেলে ,রান্নার স্বাদ দেখে নিয়ে ,শুক্তোতে ১ কাপ মতো দুধ দিয়ে ,বেশি আঁচে একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে ,১চামচ ঘি দিয়ে আবার একটু নেড়ে গ্যাস বন্ধ করলাম। ওঃ!!! কি অপূর্ব গন্ধ। মন ভরে যাচ্ছে।
দুপুরের টেবিলে মেনু দেখে সবাই খুশি। সবাই বলে উঠলো ,গন্ধ তো পেয়েই গেছি, শুধু ভাবছি কখন খাবো ? কখন খাবো ? দুপুরে খাওয়ার শুরুটা বড়োই ভালো হলো। প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। বড়ো শান্তি আর স্বস্তি।(একটা কথা ,আমি যা সবজি পেয়েছি ,তাই দিয়ে দুধ -শুক্তো রেঁধেছি ,আপনারা আপনাদের পছন্দ মতো অন্য সবজিও দিতে পারেন )।
আপনারা সব্বাই শান্তিতে থাকুন ,সুস্থ থাকুন ,ভালো থাকুন আর অনেক অনেক আনন্দে থাকুন।
Comments