top of page

মুচমুচে - মুখরোচক - চিড়েভাজা | Chire - Bhaja (Fry)


নাঃ! ......সত্যিই আর পারা যাচ্ছে না ...... অসহ্য গরম ! সকাল থেকেই এক দমবন্ধ করা অবস্থা | গুমোট গুমোট আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি বাড়ির সবার মুখগুলো ও কেমন যেন গুমোট গুমোট | মনে হচ্ছে কেউই একটুও স্বস্তি পাচ্ছে না আর শান্তিও পাচ্ছে না | সবাইকে দেখে খুব মায়া ও হচ্ছে | মনে মনে ভাবছি , কি হলে সবাই একটু মানসিক আর শারীরিক শান্তি পাবে | এই কঠিন গরমে একটু আরাম ও পাবে |


যাই হোক সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো | মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন ও খুবই হালকা পুলকা | খাবার টেবিলে সবাই একেবারে চুপচাপ | গরমের দাপটে খাওয়ার ইচ্ছেটাই যেন চলে গেছে | কিন্তু খেতে তো হবেই ...........আর তাইতো

আমরা সব্বাই খাবার টেবিলে | সবেমাত্র খাওয়া শুরু হয়েছে .......হঠাৎ দরজা জানলায় বিশাল আওয়াজ ........কোনো কিছু বোঝার আগেই ...বাইরে শুরু হয়ে গেছে কাল - বোশেখের তুমুল ঝড় | ছুট্টে গিয়ে কোনোমতে দরজা - জানলা গুলো বন্ধ করতে করতেই ,শুরু হয়ে গেলো মুষলধারে বৃষ্টি ....খাবার টেবিলে ফিরে দেখি ......সব্বার অবাক চোখের তারায় কেমন যেন খুশির ঝলকানি | হঠাৎ করে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন সবাইকে এতো অবাক করে দিয়েছে যে ......কারোর মুখেই কোনো কথা নেই .....শুধু চোখে বিস্ময়কর আনন্দ |


হঠাৎ করে মধ্যাহ্ন ভোজটা এতো আনন্দ করে ,আরাম করে আর উপভোগ করে আমরা সারবো , তা কিন্তু দিনের শুরুতে কেউ চিন্তাই করতে পারিনি | কিন্তু ...নাঃ , ওয়েদার টা এখন এতই সুন্দর আর আরামদায়ক হয়ে গেলো যে ........আমরা

সবাই ভীষণ ভীষণ খুশি | খাওয়াদাওয়ার শেষে , আজ সবাই খুশি খুশি মনে ভাত ঘুমের আমেজ নিতে এগিয়ে গেলো | আমি কিন্তু গ্রিলের বারান্দাটায় এসে দাঁড়ালাম | তখন ও ঝির ঝির করে বৃষ্টি পরেই চলেছে ,সঙ্গে হালকা ঝোড়ো হাওয়া | আর সেই হওয়ার দাপটে ...ঝরে পড়া বৃষ্টির জল ,বার বার আমার গায়ে এসে লাগছে ..... উফঃ! কি ভালো যে লাগছে .....তা বোধহয় বলে বোঝানো যায় না |


বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই ভেবে ফেললাম , ওয়েদার যখন বেশ স্বস্তির , তখন আজ বিকালে সবাইকে আনন্দ দিতে ,চায়ের সঙ্গে মুখরোচক করে কি করি !......কি করি !....আচ্ছা ..মুচমুচে করে যদি একটু চিঁড়ে ভেজে ফেলি ,তবে কেমন হয় ? সব উপকরণ তো হাতের কাছেই রয়েছে | সবাই বিশ্রাম সেরে চায়ের টেবিলে এলে অবাক তো হবেই , টেস্টি টেস্টি চিঁড়েভাজা খেয়ে খুশি ও হবে | .......তাহলে আর দেরি করবো না ........চুপচাপ করে ভেজে ফেলি ......মুখরোচক - মুচমুচে চিঁড়েভাজা |


উপকরণ :-


  • চিঁড়ে - ৫০০ গ্রাম

  • বাদাম - ১০০ গ্রাম

  • কিসমিস - ৫০ গ্রাম

  • পাঁপড় - ৭-৮ পিস্

  • বেসন - ১০০-১৫০ গ্রামের মতো

  • আদা - বাটা ( চায়ের চামচের ১/২ চামচ ) , মিহি কুচানো ( ১ - ১.৫ চামচ )

  • রসুন - বাটা ( চায়ের চামচের ১/২ চামচ ) , মিহি কুচানো ( ১ -

১.৫ চামচ )

  • কাঁচালঙ্কা - বাটা ( চায়ের চামচের ১ চামচ ) , মিহি করে কুচানো ( ২ চামচ )

  • নুন - প্রয়োজনমতো

  • চিনি - প্রয়োজনমতো

  • সাদা তেল - প্রয়োজনমতো

  • লাল লঙ্কাগুঁড়ো - ১/২ চামচ


পদ্ধতি :-


প্রতি বাড়িতেই তো মাঝে মাঝে শুকনো খোলায় চিঁড়ে ভাজা ,বাদাম ভাজা তো হয়েই থাকে | মাঝে মধ্যে সঙ্গে থাকে খোসা সমেত শুকনো খোলায় রসুন ভাজা | খেতে দারুন লাগে ,আর শরীরের জন্য তো ভীষণই উপকারী | কিন্তু আজকে আমি চিঁড়ে একটু মুখরোচক করেই ভাজছি | সবার ভালো লাগবেই লাগবে | সবাইকে দিয়ে বেশি থাকলে .....আর একদিন খেতেও পারবো |



রান্নাঘরে ঢুকে প্রথমেই একটা পাত্রে বেসন নিলাম | পাত্রে দিলাম প্রয়োজনমতো নুন ,চিনি আর অল্প লাল লঙ্কাগুঁড়ো | একটু জল দিয়ে ভিজিয়ে দিলাম | এইবার মিক্সিতে প্রয়োজনমতো অল্প আদা , অল্প রসুন আর ২-৩ টি কাঁচালঙ্কা নিয়ে ,মিহি করে বেটে নিলাম | মিক্সির বাটাটা বেসনের পাত্রের মধ্যে দিয়ে দিলাম | পাত্রের সমস্ত উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ফেটাতে শুরু করলাম | মিশ্রণটা কিন্তু বেশ ঘন ঘন হবে | মিশ্রনের স্বাদ চেখে দেখে নিলাম | বাহ্ .......একেবারে তাক তাক |


গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম | তেল ভালোমতো গরম হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে দিলাম | কড়াইয়ের উপর একটা ঝাঁঝরি হাত ধরে ,তার উপর বেসনের মিশ্রণটা অল্প দিয়ে দিলাম | হাত দিয়ে বেসনের মিশ্রণ নাড়তে লাগলাম ,আর কড়াইয়ের মধ্যে বেসনের মিশ্রণ ছোট ছোট আকারে পড়তে লাগলাম | আর দেওয়া যাবে না মনে হতেই ,ঝাঁঝরি কড়াইয়ের উপর থেকে সরিয়ে নিলাম | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে বেসনের ছোট ছোট টুকরোগুলো মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিলাম | আর এইভাবেই সমস্ত বেসনের মিশ্রণ ভেজে ফেললাম |


এবার কড়াইয়ের বাকি তেলের মধ্যে একে একে বাদাম ,কিসমিস ,আর পাঁপড় ভেজে নিলাম | গ্যাস বন্ধ করলাম | কড়াই ভালোকরে পরিষ্কার করে আবার গ্যাসে চাপলাম | দিলাম প্রয়োজনমতো সাদা তেল |তেল গরম হতেই আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত চিঁড়ে মুচমুচে করে ভেজে নিয়ে একটা বড়ো পাত্রের মধ্যে রাখলাম | সমস্ত চিঁড়ে ভাজা হয়ে

যেতেই ,আঁচ কমিয়ে কড়াইতে লেগে থাকা অল্প তেলের মধ্যে দিয়ে দিলাম কুচানো আদা ,কুচানো রসুন ,মিহি করে কুচানো কাঁচালঙ্কা আর প্রয়োজনমতো নুন | আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের সমস্ত মিশ্রণ মুচমুচে করে ভেজে নিয়ে ,ভাজা চিঁড়ের পাত্রের মধ্যে দিয়ে দিলাম |


এবার পাত্রের মধ্যে দিলাম ভেঙে নেওয়া ভাজা পাঁপড় ,ভাজা বাদাম ,ভাজা কিসমিস আর ভেজে রাখা বেসনের মুখরোচক মুড়কিগুলো | পাত্রের সমস্ত উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে নিতে লাগলাম | সব ভালো মতো মিশিয়ে নিয়ে , মিশ্রনের স্বাদ দেখে নিলাম | সত্যি দারুন.... দারুন লাগছে | চটপটা স্বাদে মুখ যেনো ভরে গেলো | মনটাও ভরে গেলো এক অনাবিল আনন্দে ....আর আনন্দে ......


সবাই পৌঁছে গেলো বিকালের চায়ের টেবিলে | সবাইকে দিলাম গরম গরম চা আর সঙ্গে বাটিতে বাটিতে .....মুখরোচক আর মুচমুচে চিঁড়েভাজা | আমার নিঃশব্দ কাজকর্মে সবাই তো ভীষণই অবাক.......আর খুশি খুশি মুখে..... ভাজা চিঁড়ে মুখে দিয়েই জুড়ে দিলো আনন্দের চিৎকার | সবার মুখে একটাই কথা .....দারুন ! .....দারুন লাগছে ! ........ আবার পাবো তো ?.............


ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন আর অনেক অনেক আনন্দে থাকুন |


14 views0 comments

Kommentare


bottom of page