পৃথিবী সৃষ্টির আদি অন্ত কাল থেকে ,এই যে অনেক অনেক জীবের সৃষ্টি হয়েছে ,তার মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ ,এই কথাটা আমরা সব্বাই জানি। ক্ষিধে -তেষ্টা সব জীবেরই ছিল ,মানুষেরও ছিল। তারা বুঝেও গিয়েছিলো যে ,খিদে মেটাতে কিছু খেতেই হবে। শুরু হলো খাবার খোঁজার। খুঁজে তো পাওয়া গেলো আর খাওয়া শুরুও হয়ে গেলো। এইভাবে চলতে চলতে কিন্তু এবার ধীরে ধীরে চিন্তা শুরু হলো ,এই খাবার কি করে আরো ভালো খাবারে পরিবর্তন করা যায়। মানুষ যে বুদ্ধিমান । তাদের জিভের স্বাদে মনে হয়েছিল ,আরো টেস্টি খাবার চাই ,আরো টেস্টি।
শুরু হলো নানা চেষ্টা -প্রচেষ্টা। এই চেষ্টা ,এই প্রচেষ্টাই একদিন তাদের খোঁজ দিলো ,তাদের হেঁসেলের মানে রান্নাঘরের ।
হেঁসেল- - - সংসারে এক বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছিল। আর এই হেঁসেলের কর্মকর্তা ছিল বাড়ির গৃহিনীরা অর্থাৎ আমরা মেয়েরা। বহু যুগ আগে একান্নবর্তী পরিবারে হেঁসেল ছিল বোধহয় মেয়েদের সবচাইতে বড়ো কর্মক্ষেত্র। অনেক সময় হেঁশেলেই তাদের সারাটাদিন কেটে যেত। খুব ছোট বেলায় সংসারে ঢোকা .....আর ঢুকেই হেঁসেল সামলানো। অনেকে খুব আনন্দের সঙ্গে এই কাজের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতো। সুন্দর সুন্দর রান্নায় সংসারে আনন্দের বন্যা বইয়ে দিতো। আবার রান্নায় অনেক পরবর্তন ঘটিয়ে নতুন নতুন পদের আবিষ্কারও করে ফেলতো।
রান্নায় সেই চেষ্টা ,সেই আবিষ্কারই আজ আমাদের কত শত নতুন নতুন স্বাদের পরিচয় দিচ্ছে।আজকের মেয়েরা ঘরে বাইরে নানা জায়গায় সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত। কিন্তু তবু তাদের নিজের সংসারে রয়েছে একটা সুন্দর রান্নাঘর। সেখানে নানা কাজের মাঝখানে আজও চলছে রান্নায় একটু বৈচিত্র আনার চেষ্টা । চেষ্টা চলছে এই ব্যস্ত জীবনে কি ভাবে খুব সহজে আর খুব তাড়াতাড়ি একটা টেস্টি টেস্টি পদ রান্না করা যায়। আমিও ......কিন্তু সেই চেষ্টা তেই ব্যস্ত !!!
আজ নিরামিষে অনেক রকম রান্না করেই ফেলেছি। কিন্তু একটু আমিষের ছোঁয়া না থাকলে ,অনেকের হয়তো ভালো না লাগতেও পারে। তাই রান্নাঘরের শেষ রান্নার পদটি খুবই হালকা করে চিংড়ি মাছের একটা মেনু রাঁধলাম। খুবই সহজ রান্না। কিন্তু গরম ভাতে খেতে যে কি অসাধারণ ,সেটা খেলেই সব্বাই বুঝতে পারবেই পারবে। থাক অনেক কথা হলো ,এখন আজকের শেষ রান্নাটা করেই ফেলি। আজকের আমিষ মেনু '' চিংড়ি - আলু - মাখা ''।
উপকরণ :-
চিংড়ি - একটু বড়ো সাইজের ,১৫০- ২০০ গ্রাম
আলু - ৪-৫টি মাঝারি সাইজের ( খোসা ছাড়িয়ে সরু সরু লম্বা লম্বা করে আলু বাজার মতো কাটা )
টমেটো - ১টি মাঝারি সাইজের ( কুচানো )
পেঁয়াজ - ৪-৫ টি ( খোসা ছাড়িয়ে কুচানো )
কাঁচালঙ্কা - ৬-৭টি ( কয়েকটি অর্ধেক করে চেরা ,কয়েকটি গোটা )
হলুদ - ১ - ১.৫ চামচ
নুন - প্রয়োজন মতো
চিনি - প্রয়োজনমতো
সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
চিংড়ি মাছগুলো ছাড়িয়ে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নুন আর সামান্য হলুদ মাখালাম। এবার একটা মাঝারি সাইজের কড়াই নিয়ে ,তার মধ্যে নিলাম জলে ধোয়া আলুর টুকরো গুলো,কুচানো পেঁয়াজের টুকরো গুলো ,অর্ধেক করে কাটা কাঁচালঙ্কা ,টমেটোর টুকরোগুলো আর প্রয়োজন মতো নুন ,চিনি ,হলুদ ,সর্ষের তেল। সবশেষে নিলাম নুন হলুদ মাখানো চিংড়ি মাছ গুলো।
সমস্ত উপকরণে সামান্য জল ছিটিয়ে নিয়ে ভালো করে হাত দিয়ে মেখে নিলাম। গ্যাসে বেশি আঁচে উপকরণ সমেত কড়াই চাপলাম। কড়াইয়ের মাখা ভালো মতো গরম হতেই ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে রান্নাটা হতে দিলাম। এই ধরণের রান্নাগুলো ,পদ্ধতির দিক দিয়ে খুবই সোজা। হালকা রান্না। কিন্তু খেতে বড্ডো ভালো। গরম ভাতে যেন মাছের আচার।
কিছুক্ষনের মধ্যেই রান্না থেকে সুন্দর গন্ধ বেরিয়ে রান্নাঘর ভরে তুললো। আরো কিছুক্ষন বাদে ঢাকা খুলে দেখে নিলাম সব ঠিকঠাক সেদ্ধ হয়েছে কিনা ,দিলাম কয়েকটা গোটা কাঁচালঙ্কা । সঙ্গে সঙ্গে চেখেনিলাম রান্নার স্বাদও।
বাঃ! বেশ ভালো। ঢাকা খুলে আঁচ বাড়িয়ে রান্না গায়ে মাখা মাখা করে নিয়েই গ্যাস বন্ধ করে দিলাম। রান্না তৈরি। ঢাকা দিয়ে রেখে দিলাম।
খাবার টেবিলে সবাই বললো ...চিংড়ি মাছ মাখা করেছো ? আজ তো ভাবলাম শুধুই নিরামিষ রান্না। কিন্তু সবাই রান্নাঘর থেকে মাছ মাখার গন্ধ পেয়ে বুঝেই গেলাম ,না না শুধুই নিরামিষ না। আমিষও আছে। সবাই খুব আনন্দ করতে করতে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো। শেষে যাবার সময় বলে গেলো যতো তাড়াতাড়িই রাঁধো না কেনো , আজ তোমার চিংড়ি - আলু মাখাটা অসাধারণ হয়েছে। দারুন টেস্টে ভরা ,ভীষণ ভীষণ ভালো। মনে মনে বললাম , ভালো লাগার জন্যই তো নানাভাবে রান্নাবান্না
করার চেষ্টা ।
যাই হোক ....সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন , আনন্দে থাকুন।
Commentaires