ইমিউনিটি বাড়াতে হবে ......ইমিউনিটি বাড়াতে হবে ....। এই একটি শব্দই কিন্তু এখন প্রতিশব্দ হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ইমিউনিটি বাড়াতে হবে ....মানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে হবে। সত্যি ! এই সময়ে আমরা এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে , যেখানে পলিউশন আমাদের পায়ে পায়ে। ব্যস্ত জীবনের প্রতি মুহূর্তেই ভয় নানা কঠিন রোগকে। আর এই ভয় কে কেবলমাত্র জয় করতে পারে, প্রতিটি শরীরের স্ট্রং ইমিউনিটি। আর তার জন্য শরীরের চাই ভালো ভালো খাবার , প্রোটিনে ভরপুর খাবার। আমাদের ছোট বড়ো প্রত্যেকের শরীরে প্রয়োজনমতো প্রোটিন চাই চাই। তবেই তো
ইমিউনিটি হবে স্ট্রং। ইমিউনিটি স্ট্রং হলে , যেকোনো রোগ কাছে আসতে ভয় পাবেই পাবে।
প্রতিটি সংসারে আমরা রান্নাঘরের গৃহিণীরা কিন্তু সবসময়েই চেষ্টা করি ,বাড়ির সবাইকে ভালো খাবার খাওয়াতে। শরীরে পুষ্টি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে। আর আমার ,মানে একজন গৃহিণীর কিন্তু মনে হয় ,প্রোটিনে ভরপুর,খুবই সহজলভ্য , এক ভালো মেনু চিকেন। চিকেনের তৈরি যে কোনো মেনু তো আমিষভোজীরা ভীষণ ভীষণ পছন্দ করে।আর চিকেনের তৈরি যে কোনো মেনুই সহজপাচ্য। তাই আমি ঠিক করেই ফেললাম ,আজ দুপুরের মেনুতে চিকেন রাখবোই।
চিকেন রাঁধবো। তাই বাজার থেকে আনিয়ে নিয়েছি চিকেন ,ছোট ছোট পেঁয়াজ, বড়ো পেঁয়াজ ,ক্যাপসিকাম,
টমেটো ,আদা ,রসুন ,কাঁচালঙ্কা ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব হালকা করেই রাঁধবো। কিন্তু খেতে হবে খুবই টেস্টি টেস্টি। আজকের আমার তৈরি চিকেনের মেনুখেতে কিন্তু ভীষণ ভালো লাগে। রুটি ,পরোটা ,ভাত ,ফ্রায়েড রাইস সব কিছুর সঙ্গেই দারুন জমে যায়। আবার কড়া করে পাউরুটি টোস্টের সঙ্গেও অসাধারণ লাগে। মুখ স্বাদে ভরে যায়। কখনো কখনো বিকেলে জলখাবারের টেবিল জমাতে টোস্ট পাউরুটি আর আমার টেস্টি টেস্টি চিকেনের মাখো মাখো দুটো পিসই যথেষ্ট।
যা হোক বাজার থেকে আসা চিকেন ম্যারিনেটে মন দিলাম। চিকেনের কাটা টুকরোগুলো পরিষ্কার করে একটা পাত্রে নিলাম। তার মধ্যে দিলাম ,ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ১০-১২টা ছোট পেঁয়াজ, অর্ধেক করে কাটা ১৩-১৪টি কাঁচালঙ্কা ,১টা মাঝারি সাইজের টমেটো ৮ টুকরো , একটু নুন ,১ চামচ মতো হলুদগুঁড়ো আর ৩-৪ চামচ ভিনিগার। ভিনিগার আমার রান্নাঘরে মজুতই ছিল। সমস্ত উপকরণ হাত দিয়ে ভালো করে মেখে নিয়ে ,একটা ঢাকা দিয়ে ফ্রিজে তুলে রাখলাম। রান্নার ঠিক আগে আগে বার করে নেবো। এখন ম্যারিনেট হোক.............................................................
উপকরণ :-
চিকেন - ১ কিলো ২০০ গ্রামের মতো ( কেটে কুটে পরিষ্কার করা )
ক্যাপসিকাম - ২টি ,মাঝারি সাইজের ( টুকরো টুকরো করে কাটা )
পেঁয়াজ - ৪টি ,মাঝারি সাইজের ( খোসা ছড়িয়ে ৮ টুকরো করা )
খুব ছোট ছোট পেঁয়াজ - ১০-১২ টা ( খোসা ছাড়িয়ে গোটা গোটা ,ম্যারিনেটের মধ্যে দেওয়া )
টমেটো - ১টি মাঝারি সাইজের ( ৮ টুকরো করে নিয়ে ম্যারিনেট দেওয়া )
রসুন - ১টা মাঝারি সাইজের ( কোয়া ছাড়িয়ে ,খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচানো )
আদা - ১-১.৫ ইঞ্চি মতো ( খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচানো )
কাঁচালঙ্কা - ২২-২৩টি ( ১৩-১৪ টি , দুটো টুকরো করে নিয়ে ম্যারিনেট দেওয়া ,বাকি কাঁচালঙ্কা লম্বা লম্বি অর্ধেক করে চিরে রাখা )
ভিনিগার - বড় চামচের ৩-৪ চামচ
হলুদ - ২-৩ চামচ ( এই রান্নায় খুব বেশি না দিলেও হবে )
নুন - প্রয়োজনমতো
চিনি - প্রয়োজনমতো ( মূলত রান্নার রং আর সুন্দর টেস্টি টেস্টি স্বাদের জন্য ,খুব অল্প )
সাদা তেল বা সর্ষের তেল - প্রয়োজনমতো
পদ্ধতি :-
রান্না শুরুর কিছুক্ষন আগে চিকেনের ম্যারিনেট করা পাত্রটা ফ্রিজ থেকে বার করে রেখেছিলাম নরম্যাল তাপমাত্রায় আনার জন্য। সেই সময়ের মধ্যে চিকেন রান্নার বাকি উপকরণ গুলো ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিলাম।
যাক ম্যারিনেট - চিকেন নরম্যাল তাপমাত্রায় চলে এসেছে। তা - হলে রান্না শুরু করছি। গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে প্রয়োজনমতো তেল দিলাম। তেল গরম হতেই আঁচ কমিয়ে কড়াইতে দিলাম ,কাটা পেঁয়াজের টুকরো ,কুচানো রসুন আর কুচানো আদা। আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে কড়াইয়ের উপকরণ গুলো ভাজতে লাগলাম। পেঁয়াজে হালকা বাদামি রং ধরলে দিলাম ,ক্যাপসিকামের টুকরোগুলো। আবার আঁচ বাড়িয়ে কমিয়ে সমস্ত উপকরণ ভাজতে লাগলাম।
কড়াইয়ের সমস্ত উপকরণ সুন্দর ভাজা ভাজা হয়ে এলেই , কড়াইতে দিলাম ম্যারিনেট করা পাত্র থেকে চিকেন ,টমেটো আর কাঁচালংকার টুকরোগুলো। দিলাম নুন ,কয়েকদানা চিনি আর ১-১.৫ চামচ মতো হলুদ। সমস্ত বেশি আঁচে ভালো করে নাড়তে লাগলাম। চিকেন ,পেঁয়াজ ,ক্যাপসিকাম ভাজার গন্ধ বার হতেই ,আঁচ কমিয়ে একটা ঢাকা দিয়ে চিকেন হতে দিলাম।
ঢাকা খুলে চিকেন নরম নরম হয়ে এলেই ,কড়াইতে দিয়েদিলাম ১০-১২টা ম্যারিনেট পাত্রে রাখা ছোট পেঁয়াজগুলো ,ম্যারিনেট করা ভিনিগারের রসা আর কয়েকটা অর্ধেক করে চেরা কাঁচালঙ্কা।
আবার ঢাকা দিয়ে চিকেন আরো কিছুক্ষন হতে দিলাম।
কিছুক্ষনের মধ্যেই কড়াই থেকে বেরোতে লাগলো ,জিভে জল আনা গন্ধ। ২-১ জনের গলা তো পেলামই .........আহা..হা .হা ..কি দারুন গন্ধ ! হুঁ...মনে হচ্ছে খিদেটা যেন একটু তাড়াতাড়িই চলে আসছে। এই সব কথার মাঝখানেই কড়াইয়ের ঢাকা খুলে দেখলাম , চিকেন হয়েই এসেছে। রান্নার স্বাদ দেখে নিলাম। আঁচ বাড়িয়ে আরো কয়েকটা চেরা কাঁচালঙ্কা কড়াইতে দিয়ে , টেস্টি টেস্টি চিকেন মাখো মাখো করে নিলাম। গ্যাস বন্ধ করে কড়াই ঢাকা দিয়ে রাখলাম। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই খাওয়ার সময়ে আমার টেস্টি টেস্টি চিকেনে সুন্দর কাঁচালংকার গন্ধ পাওয়া যাবে। ভিনিগারে কাঁচালংকার এই গন্ধটা সত্যি সত্যিই জিভে জল আনা গন্ধ।
দুপুরে খাবার টেবিলের আনন্দটা কি ভাবে বোঝাবো ? ওদের আনন্দ দেখে যে আমার কত কত আনন্দ হচ্ছে সেটাই বা সবাইকে কি ভাবে বোঝাবো ? আমাদের সবার জীবনেই সংসারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ পাওয়ার মতো সুখ বোধহয় আর কিছুতেই নেই।
তাই সব্বাই খুব খুব আনন্দে থাকুন ,ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন।
Comments